|
|
|
|
|
চিপকে ‘সুলতান’ যখন বিসলা |
আইপিএল করার উদ্দেশ্যটাই
সফল হল এই ইনিংসে
দীপ দাশগুপ্ত |
|
মনবিন্দর বিসলা-র কথা প্রথম শুনেছিলাম বছর ছয় আগে। যদ্দূর মনে পড়ছে বেঙ্গালুরুতে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে সেই সময়কার অনূর্ধ্ব উনিশ ভারতীয় দলের কোচ বলবিন্দর সিংহ সাধুর কাছে। ওর টিমেই তখন খেলছিল বিসলা। সাধু প্রথমেই বলেছিল, ছেলেটার ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট ফ্রি স্ট্রোক মেকিং। আর কোনও চাপ-টাপের ব্যাপার নেই ওর খেলায়। যে কোনও পরিস্থিতিতে নিজের স্বাভাবিক ব্যাটিংটাই করে।
চিপকে রবিবার রাতে ঠিক সেটাই দেখলাম বিসলার ব্যাটিংয়ে। ম্যাকালাম নেই। ১৯১ তুলতে নেমে গম্ভীর প্রথম ওভারেই বোল্ড। ও রকম ভয়ঙ্কর চাপের মুখেও অনায়াসে বড় শট খেলে গেল! হরিয়ানায় জন্ম আর হিমাচল প্রদেশের হয়ে রঞ্জি খেললেও বিসলার ক্রিকেটার হিসেবে বেড়ে ওঠা মূলত দিল্লিতে। গত বছর ও যখন কিংস ইলেভেন পঞ্জাব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমাদের পুণে ওয়ারিয়র্স টিম ম্যানেজমেন্ট ওর সঙ্গে কথা বলেছিল। আমি নিজে ওর সঙ্গে কথা বলেছিলাম যে, আমাদের ফ্র্যাঞ্চাইজিতে যোগ দাও। তখন ও বলেছিল, “দেখো ভাইয়া, আমি কেকেআরে খেলব। কারণ ওখানে গৌতম (গম্ভীর), রজত (ভাটিয়া), সাপোর্ট স্টাফে বিজয়ভাই (দাহিয়া)অনেক দিল্লির ছেলে আছে। ওখানে খেললে আমি অনেক স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করতে পারব।” সেটাও এ দিন ওর ধুন্ধুমার ব্যাটিং দেখতে দেখতে আমার মনে হচ্ছিল। মানসিক ভাবে কেউ স্বচ্ছন্দ না থাকলে এরকম বিশাল মঞ্চে, অনন্ত চাপের ম্যাচে এত দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করতে পারে না।
|
|
করল লড়ল জিতল রে। ছবি: উৎপল সরকার। |
বালাজির চোটের জন্য ব্রেট লি-কে খেলাতে গিয়ে কেকেআর-কে ফাইনালে ম্যাকালামকে বসাতে হওয়ায় অনেক অশনি সংকেতের সৃষ্টি হয়েছিল। হয়তো সেটা অস্বাভাবিকও নয়। কিন্তু আইপিএলের সঙ্গে জড়িয়ে থাকার সুবাদে আমার কাছে খবর ছিল, কেকেআর শিবিরে এই নিয়ে ঠকঠকানি ছিল না। এমনকী এ-ও শুনেছিলাম, শেষ দু’-তিনটে ম্যাচেই বিসলাকে খেলানোর কথা ভাবছিল ওরা। ম্যাকালাম-বিসলা, দু’জনকেই খেলিয়ে, যে কোনও এক জনকে দিয়ে কিপিং করানোর পরিকল্পনা ছিল। ফলে সাধারণের চোখে বাইরে থেকে খুব চাপের পরিস্থিতি, কঠিন সিদ্ধান্ত মনে হলেও আমার কিন্তু মনে হয়েছে, বিসলাকে ভেবেচিন্তেই ফাইনালে খেলিয়েছে কেকেআর।
বিসলা মারমার ব্যাটিং করলেও ওর খেলার ধরনটা কিন্তু ক্রিকেটের দীর্ঘ ফর্ম্যাটের পক্ষেও যথেষ্ট ভাল। সোজা কথায় ও বেশ ভাল ব্যাটসম্যান। তবে তুলনামূলক ভাবে সীমিত ওভারের ফর্ম্যাটেই বেশি কার্যকর। ফাইনালে ওর অনেক শটই দুর্ধর্ষ লেগেছে আমার। তবে সেরা, অশ্বিনের যে ওভার থেকে ১৫ রান নিল। ওখানেই কেকেআর ইনিংসের ওপর থেকে অনেকটা চাপ সরে গিয়েছিল। উলটো দিকে ফাইনালে নিজের টিমের এক নম্বর বোলারকে প্রথম ওভারেই ঠ্যাঙানি খেতে দেখে ধোনির আত্মবিশ্বাসে নির্ঘাত খানিকটা ধাক্কা লেগেছিল। তা ছাড়া গম্ভীর-কালিস-মনোজ-ইউসুফকে থামানোর ব্যাপারে চেন্নাই যতটা প্ল্যানিং করেছিল, বিসলাকে নিয়ে নিশ্চয়ই করেনি। ও খানিকটা অজাতা শক্তি হিসেবেই উদয় হয়েছিল ধোনির সামনে। আর বিপক্ষ প্ল্যান করা আগেই তাদেরকে শুইয়ে দিয়ে গেছে।
|
কে এই বিসলা |
পুরো নাম: মনবিন্দর সুলতান সিংহ বিসলা
জন্ম: হিসার, হরিয়ানা
বয়স: ২৭ বছর ১৫২ দিন
টিম: ডেকান চার্জার্স, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, ভারত অনূর্ধ্ব ১৯, কিংস ইলেভেন পঞ্জাব, কলকাতা নাইট রাইডার্স
প্রথম শ্রেণি
ম্যাচ ৪১ সর্বোচ্চ ১৬৮, গড় ২৯
আইপিএল ২০১২
ম্যাচ ৭ রান ২১৩ সর্বোচ্চ ৮৯ গড় ৩০.৪২ স্ট্রাইক রেট ১৩৩.১২ |
|
বিসলা এমন পালটা মার দিয়ে কেকেআরকে ট্রফি এনে দেবে কি কেউ ভেবেছিল? সত্যি বলতে কী, বোধহয় কেউই ভাবেনি। টিভিতে ফাইনালের পিচটাকে সহজ দেখে মনে হয়েছিল, চেন্নাইয়ের ১৯০ ভাল স্কোর হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে নয়। তবে আমিও ভেবেছিলাম পালটা মারটা গম্ভীর বা কালিস এমনকী লক্ষ্মী-মনোজদের কেউ দেবে।
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সেটা ওরা কেউ না হয়ে বিসলা হওয়ায় দারুণ হয়েছে। আইপিএল করার উদ্দেশ্যটাই সফল করে দিয়ে গেল বিসলা। এই টুর্নামেন্টকে প্রতিভাবান ঘরোয়া ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক স্তরে উত্থানের মঞ্চ করে তোলাই লক্ষ্য ভারতীয় বোর্ডের। গম্ভীর-কালিস, এমনকী মনোজও ফাইনালের মহানায়ক হলে আইপিএল করার উদ্দেশ্য কিন্তু এতটা সফল হত না। বিসলা হিরো হয়ে উঠে যেটা করল।
|
|
যুবরাজ সিংহ: কী দুর্দান্ত খেলা! কেকেআর দারুণ খেলেছ। কিন্তু আমি মনে করি, চেন্নাইও কম ছিল না! গত পাঁচ মরসুমে ওরাই হচ্ছে সবচেয়ে ধারাবাহিক দল।
ক্রিস গেইল: কেকেআরকে অভিনন্দন। আইপিএল ইউ বিউটি! ম্যাচটা দেখিনি। জামাইকায় ফিরে পুল ডেকে ব্যস্ত ছিলাম। নারিন, এই জয়টা উপভোগ কর।
বিপাশা বসু: অভিনন্দন শাহরুখ! দারুণ জয় কেকেআরের। সিএসকে আইপিএলের অন্যতম সেরা দল আছে, থাকবেও। মাহি এবং তাঁর দলের জন্য ভালবাসা।
শাবানা আজমি: আমি ক্রিকেট সম্পর্কে কিছুই জানি না। কিন্তু খেলাটা দেখেছি। আর কেকেআরের জয়ের জন্য প্রার্থনা করেছি। শাহরুখ আর জুহিকে অভিনন্দন। মজা আ গয়া!
কোয়েল মল্লিক: ইয়া হু.....
ললিত মোদী: শেষ পর্যন্ত শাহরুখের দল শ্রীনিকে ধ্বংস করল। আমার পুরো পরিবার লাফাচ্ছে।
কর্ণ জোহর: নতুন জয়ী দল কেকেআর। প্রচুর ভালবাসা।
শশী থারুর: চেন্নাইয়ের কোনও লজ্জা নেই। তারা চ্যাম্পিয়নের মতোই খেলেছে। কিন্তু কেকেআর এসে গিয়েছে! সব কৃতিত্ব গম্ভীর, তাঁর দল, শাহরুখ আর ফ্যানেদের।
ডেরেক ও’ব্রায়ান: হাওড়ায় জন্মানো একটা ছেলে কেকেআরের জয়ের রান নিল। আর বাংলাদেশে জন্মানো একটা ছেলে ছিল নন স্ট্রাইকার। জাগো, বাংলা জাগো।
বিজয় মাল্য: তা হলে এ বার আই পি এল ফাইনাল ইডেনে হবে! |
|
|
|
|
|
|