|
|
|
|
আমরা নতুন বাজিগর |
স্থিতধী কবীর থেকে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে শাহরুখ |
সব্যসাচী সরকার • চেন্নাই |
তখন কে জানত মনবিন্দর বিসলাই আজ হয়ে উঠবেন তাঁর ‘বাজিগর’?
১৯০। তার পরেই প্রথম ওভারে গম্ভীর বোল্ড। টিভি ক্যামেরা যখন ধরল তাঁকে, চোখেমুখে শ্রাদ্ধবাসরের স্তব্ধতা। পাশে বসা স্ত্রী গৌরীকে কিছু একটা বললেন।
উত্তাল হলুদ গ্যালারি! বিয়োগান্ত আবহ ছাড়া কী করে ঠিকঠাক ধরা যাবে ২৭ মে-র শাহরুখ খানকে? আসলে ঠিকঠাক ধরা যাবে না, কারণ এর পরেই দ্রুত বদলে যাবে খেলার স্ক্রিপ্ট! হলুদ গ্যালারির ফাঁকে ধীরে ধীরে গর্জে উঠবে সোনালি-বেগুনি। দূরে কোথাও একটু একটু করে বাজবে...‘করব, লড়ব, জিতব রে!’ আর ম্যাচ শেষে শাহরুখ বলবেন, “বিসলা ইজ মাই ম্যান। গত রাতে স্বপ্ন দেখেছিলাম, ও সেঞ্চুরি করছে। ম্যাচের পরে ওকে বললাম, আরে তুই সেঞ্চুরি পেলি না যে! ঠিক আছে, পরের বার করবি!”
ম্যাচের আগে প্রেস মিটে এক ঝলক দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ইনি আজ ‘বাজিগর’ হতে চান না। ‘হার কর জিতনেওয়ালে’ নয়, ইনি জিতেই ‘জিতনেওয়ালে’ হতে চাইছেন আজ। একটা-দুটো কথাতেই ধরা পড়ছিল, ইনি ‘পিকচার অব ভি বাকি হ্যায় মেরে দোস্ত’-এর থেকেও হাজার মাইল দূরে থাকতে চাইছেন আজ। কোনও হিসেব বাকি না রেখে আজই আইপিএল শৃঙ্গজয়ের ‘পিকচার’-এ শেষ টান দিতে চান। মুখ থেকে ছিটকে বেরনো প্রতিটা শব্দে পরিষ্কার, ডন, বাদশা বা বাজিগর নয়, ‘জি ওয়ান’ বা ‘মাই নেম ইজ খান’ও নন। ইনি আজ ‘চক দে ইন্ডিয়া’-র কবীর খান হতে চাইছেন।
|
সব ভাল যার... |
|
|
|
|
|
|
|
যে দলটার নামে কলকাতার নাম জড়িয়ে আছে, যার মালিক আমাদের রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর, সেই দলটার জয় একই সঙ্গে রাজ্যের উন্নয়ন আর প্রগতির চিহ্ন হয়ে উঠবে। এই দলের সঙ্গে আমাদের মাটি জড়িয়ে আছে, এ আমাদের মানুষের টিম। আমাদের মায়েদের আশীর্বাদ রয়েছে এই টিমের জন্য। — মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় |
|
ইনি রক্তমাংসের শাহরুখ খান, যাঁর সঙ্গে পাঁচ বছর আগে আষ্টেপৃষ্ঠে গাঁটছড়া বেঁধেছিল জোব চার্নকের শহরের ক্রিকেটীয় ভাগ্য। ২৭ মে-র শাহরুখ খান পোড়-খাওয়া স্থিতধী টিমমালিক, যিনি টিমের জার্সি পরে ডাগআউটে বসে মালিকানা জাহির করবেন না। চার বছরে টিমের নানা টানাপোড়েনের থেকে পাঁচ নম্বর বছরে গিয়ে ট্রফি নিয়ে যাবেন। যাঁকে ম্যাচ শুরুর আড়াই ঘণ্টা আগে নার্ভাস লাগবে আর তাঁর ছবির চিত্রনাট্যের মতোই শেষে খাদের কিনারা থেকে ফিরে আসবে নায়ক। জিতবেন এক স্নেহশীল পিতাও। যিনি ঐতিহাসিক জয়ের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত আঁকড়ে ধরে থাকবেন মেয়েকে। আর ম্যাচ শেষে ক্ষমা চেয়ে নেবেন ওয়াংখেড়ের দুর্ব্যবহারের জন্য। ইনি আজ তৃপ্ত সর্বাধিনায়ক। যাঁর আবেগের স্টপকক খুলল ম্যাচের শেষে। “পাঁচ বছর আগে স্বপ্নটা দেখেছিলাম, সেটা আজ বাস্তব। ইনসাল্লাহ, পেরেছি। এ বার পরের প্রজন্মকে শেখাতে পারব, কী ভাবে জিততে হয়।”
কালো টি-শার্ট, ফেডেড জিন্স। ম্যাচের আগে বলেছিলেন, “নার্ভাস লাগছে। টেনশনও হচ্ছে।” আর ম্যাচের পরে? আত্মহারা তিনি প্রায় লাফই দিয়ে দিচ্ছিলেন ব্যালকনি থেকে। উচ্ছ্বাস এতটাই বাঁধনছাড়া যে বাচ্চাদের নিয়ে মাঠেই প্রায় ‘ছম্মক ছল্লো’ নেচে নিচ্ছিলেন। কখনও চোখ মুছছেন, কখনও হাসছেন। ‘চক দে’-র মতো পেপ টক ম্যাচের আগে ছিল কি না জানা নেই, কিন্তু হোটেল ছাড়ার আগে বলেছিলেন, “কী আবার বলব? আমাদের অ্যানথেম থেকে করব আর লড়ব, দুটোই তুলে দিয়েছি আমি। বাকি আছে শুধু জিতব রে!”
নাইটদের শুভেচ্ছা জানিয়ে দশ লক্ষের বেশি এসএমএস এসেছিল ম্যাচের আগে। শুভেচ্ছা ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। যিনি এসএমএস করেছিলেন শাহরুখকে। বারবার শাহরুখের কথায় উঠে এল এই অভিযানে গম্ভীরের অবদানের কথা। “আমার দেখা সেরা ক্যাপ্টেন ও। তার চেয়েও বড় কথা, সেরা মানুষ। যে ভাবে ও এ বার টিমকে সামলেছে, তার তুলনা হয় না।” তার পরেই যোগ করেন, “প্লিজ ভাববেন না, এই আইপিএলে অন্য কোনও অধিনায়কের সঙ্গে তুলনা করলাম।”
|
অগর কিসি চিজকো দিলসে চাহো তো সারি কায়ানাত উসে তুমসে মিলানে কি কোশিসমে লগ জাতা হ্যায়! |
|
এ যদি হয় টিম হোটেল থেকে বেরোনোর আগের ছবি, চিপকের ছবিটা ছিল অন্য রকম। এ তো আর ইডেন নয়। এখানে তাঁর বিখ্যাত হসপিটালিটি বক্স নেই, নেই বি ব্লকের বারান্দার বাঁ দিকের কোণের রেলিং। নেই প্রিয় ইডেনের আকাশভেদী গর্জন, নেই ‘কে-কে-আর, কে-কে-আর’ আওয়াজ। যে দিকে তাকানো যায়, শুধু হলুদ রঙ। ধোনির নামে জয়ধ্বনি।
তাতে কী? শাহরুখ বলে কথা, তাঁকে দেখলে চেন্নাই হোক বা মুম্বই, গ্যালারি তো উত্তাল হবেই। হাত নাড়া, টেনশনে মুখ ঢাকা, দু’হাত তুলে হাততালি, সবই ছিল। হাসি আর বিজয়ের তাণ্ডব যখন চলছে, গ্যালারিতে হলুদ ঝড়, চোখে-মুখে বিষণ্ণতা। বিসলার ব্যাটিংয়ে যা রাতারাতি উচ্ছ্বাসে রূপান্তরিত। তখন আবার স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী চলছে কেকেআর-এর চিত্রনাট্য। আবার টালমাটাল। ইউসুফ পাঠান বল তুলে দিলেন আকাশে। দু’হাতে মুখ ঢেকে শাহরুখ। মেয়ে সুহানার কাঁধে হাত রেখে চোখ মুছিয়ে দিচ্ছেন।
আর মনোজের মারা শটটা বাউন্ডারি পেরোতে দু’হাত আকাশে তুলে দেওয়া। ম্যাচ শেষে টিভির সামনে বল্গাহীন উচ্ছ্বাসে ডুবে যাওয়া। মধ্য রাতে তখন বার্তা ভেসে যাচ্ছে দিগ্বিদিক, ‘মাই নেম ইজ খান অ্যান্ড আই অ্যাম আ চ্যাম্পিয়ন!’
|
ছবি: উৎপল সরকার ও এপি। |
|
|
|
|
|