নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
আইপিএল-এর ‘ভিকট্রি ল্যাপ’-এ শিলিগুড়ি প্রতিনিধিত্ব করল বটে। কিন্তু, তুমুল উচ্ছ্বাসের মধ্যেও রইল হতাশা। ফাইনালের দুই দলে শহরের দুই তরুণ প্রতিনিধিত্ব করলেও প্রথম একাদশে তাঁদের কেউ সুযোগ পেলেন না। এক জন জিতলেন ঠিকই। আবার অন্য জনের হারের দুঃখও ভাগাভাগি করে নিল শিলিগুড়ি।
আইপিএলের ফাইনালে ধনি বাহিনীর সঙ্গে গম্ভীরের ‘নাইট’দের লড়াই নিয়ে দিনভর তেতে ছিল শহর। শিলিগুড়ির বাসিন্দাদের বাড়তি উৎসাহ জোগাচ্ছিল শহরের দুই ক্রিকেটারের ফাইনালের দুই প্রতিযোগী দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা। চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে ঋদ্ধিমান সাহা এবং কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে দেবব্রত দাস। তবে দু’ জনেরই প্রথম এগারোয় না থাকাটা হতাশ করেছে শহরকে। শহরের দুই ছেলের দুই দলে থাকায় সমর্থনটা খানিকটা হলেও দু’দলের মধ্যে ভাগাভাগি হয়েছে। কেকেআরের সমর্থন নিঃসন্দেহে বেশি থাকলেও সিএসকে-র ঋদ্ধি তাতে কিছুটা ভাগ বসিয়েছেন। সিএসকে পাহাড়প্রমাণ রানের টার্গেট সামনে রাখায় এবং প্রথম ওভারেই গৌতম গম্ভীরের আউট শহরের নাইট সমর্থকদের হতাশা আরও বাড়িয়ে দেয়।
শিলিগুড়ির ভারতনগরে দেবব্রতর পাড়ার ক্লাব তরুণ তীর্থের কর্মকর্তা ও সদস্যরা রাতে একযোগে ক্লাবে বসেই ম্যাচ দেখবেন, হুল্লোড় করবেন বলে ঠিক ছিল। ক্লাবের অন্যতম কর্তা মৈনাক তালুকদার জানান, বিকেল থেকেই একে একে সদস্যরা ক্লাবে জমা হচ্ছিলেন। দেবব্রত প্রথম এগারোয় থাকছেন না জেনে তাঁরা বাড়ি চলে যান। শিলিগুড়ির অগ্রগামী ক্লাবের ক্রিকেটার দেবব্রত, ঋদ্ধিমান দু’ জনেই। ওই ক্লাবে তাঁদের কোচ জয়ন্ত ভৌমিক সিএবি-র অনুশীলন শিবিরে এ দিন দার্জিলিং ছিলেন। হতাশ তিনিও। শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদেও কর্তারাও দেবব্রত, ঋদ্ধিমানদের খেলা দেখবেন বলে অফিসে চলে এসেছিলেন। কিছু ক্ষণ পরে বাড়িতে চলে যান।
আইপিএল-এর আগের ম্যাচগুলিতে ঋদ্ধিমান অনিয়মিত হয়ে পড়েছিলেন। প্রথম একাদশে তাঁর সুযোগ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিলই। তা জানা ঋদ্ধির পরিবারের সদস্য থেকে পাড়ার ক্লাবের সমর্থকদেরও। তবে প্রথম এগারোয় দেবব্রতর (গম্ভীরের প্রিয় দাসি) থাকা এক প্রকার নিশ্চিত ধরে নিয়েই তাঁরা উৎসাহে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু ম্যাচ শুরু আগে টিম লিস্ট দেখে তাঁদের মন ভেঙে যায়। শহরের দুই ছেলে ফাইনালে দু’টি দলের প্রতিনিধিত্ব করছেন, এর মধ্যেই এ দিন সান্ত্বনা খুঁজেছে শিলিগুড়ি।
ভারতনগরের বাড়িতে এখন একা থাকেন দেবব্রতর বাবা বৈদ্য দাস। মা কলকাতায় দেবব্রতর সঙ্গে থাকেন। জামাইষষ্ঠীর দিন দেশবন্ধুপাড়ায় দাদাদের বাড়িতে ছিলেন বৈদ্যবাবু। রাতে সেখানেই টিভিতে খেলা দেখেছেন। দেবব্রত খেলা নিয়ে উৎসাহী খুড়তুতো ভাইবোনরা। ঠাকুমা বীণারানি দাসও কম উৎসাহী নন। কিন্তু, খেলা দেখতে বসে তাঁদের প্রিয় রাজা খেলছেন না জেনে টিভির সামনে থেকে উঠে যান ঠাকুমা। অন্যেরাও বেশি ক্ষণ টিভি দেখেননি। বৈদ্যবাবু বলেন, “ছেলে খেলবে, এই আশা নিয়ে পরিবারের সকলেই উৎসাহী ছিলেন। এ দিন ফাইনালে ও কিছু করে দেখাবে তা নিয়ে সকাল থেকেই প্রতীক্ষা করছিলাম সকলে। কিন্তু টিম লিস্টে ও নেই দেখেই মনটা ভেঙে যায়।”
শিলিগুড়ির শক্তিগড়ের বাসিন্দা ঋদ্ধিমানেরা। বাবা প্রশান্তবাবু, মা মৈত্রেয়ী দেবী কলকাতায় রয়েছেন। শক্তিগড়ে ঋদ্ধিমানের জ্যাঠারা রয়েছেন। জ্যাঠতুতো দাদা কৌশম্বী বলেন, “ওর সুযোগ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিলই। তবে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে ও প্রতিনিধিত্ব করেছে। তাই ফাইনাল নিয়ে বাড়তি উৎসাহ ছিলই। ও বা দেবব্রত সুযোগ পেলে ভাল লাগত।”
|