‘দুর্নীতি’, পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে তদন্তে প্রশাসন |
১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের দু’জন প্রধান-সহ কর্মচারীদের নিজের দফতরে ডেকে শুনানির আয়োজন করেছেন বিডিও। হাওড়ার শ্যামপুর ২ ব্লক কার্যালয়ে শুনানি হবে কাল, মঙ্গলবার।
শুনানিতে ডাকা হয়েছে আমরদহ এবং বাছরি এই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের দু’জন প্রধানকে। এ ছাড়াও আসতে বলা হয়েছে এই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিব, নির্মাণ সহায়ক, সহায়ককে। তাঁদের ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের সব প্রয়োজনীয় নথিপত্র আনতে বলা হয়েছে। হাজির থাকতে বলা হয়েছে যে চার জন গ্রামবাসী অভিযোগ করেছেন তাঁদেরও। বিডিও গোবিন্দ হালদার বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পরে আমরা আধিকারিক পাঠিয়ে তদন্ত করি। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ে দেখা গিয়েছে, আধিকারিক সব পক্ষকে একই সঙ্গে পান না। তাই আমি অভিযুক্ত এবং অভিযোগকারী উভয় পক্ষকে একই সঙ্গে আমার কার্যালয়ে শুনানিতে ডেকেছি। দুর্নীতির অভিযোগগুলি এবং তার জবাব কী হবে সব কিছু খোলাখুলি আলোচনা করা হবে। এর পরে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
বাছরি এবং আমরদহ এই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতই তৃণমূল পরিচালিত। এই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে জবকার্ডধারীরা কাজ করেননি অথচ তাঁদের নামে মজুরি তুলে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগকারীদের মধ্যে রয়েছেন বাছরি গ্রাম পঞ্চায়েতের চাঁপাবাড় গ্রামের বাসিন্দা শেখ কুতুবুদ্দিন এবং আব্দুল লতিফ খান। অন্য দিকে, আমরদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের পিপুল্যান গ্রামের বাসিন্দা দীপক পাঁজা এবং স্মৃতিকণ্ঠ কোলে।
কুতুবুদ্দিন বলেন, “আমার জবকার্ড রয়েছে। তবুও আমি কোনওদিনই কাজ পাইনি। কিন্তু জানতে পেরেছি গত বছর আমি নাকি ১০ দিন কাজ করেছি। সেই মতো আমার নামে টাকা উঠে গিয়েছে।” অন্য দিকে, দীপক পাঁজা বলেন, “আমার জব কার্ড রয়েছে। গত বছর আমি মাত্র ১০ দিন কাজ করেছিলাম। সেই টাকা আমি পেয়েও গিয়েছি। তার পরে আর কাজই পাইনি। অথচ জানতে পারলাম এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে দু’টি পর্যায়ে আমার নামে ৭৮০ টাকা করে তুলে নেওয়া হয়েছে।” কাজ করেননি অথচ টাকা উঠে গিয়েছে এই রকম অভিযোগ করলেন আব্দুল লতিফ এবং স্মৃতিকণ্ঠ কোলেও। স্থানীয় কংগ্রেস নেতা আতিয়ার খান বলেন, “গত দু’বছরে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে কী কী কাজ হয়েছে সে বিষয়ে ওয়েবসাইটে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি অনেকের নামেই টাকা উঠে গিয়েছে। অথচ তাঁদের আমরা জিজ্ঞাসা করলে ওই সব গ্রামবাসীরা জানান, তাঁদের নামে টাকা উঠে গেলেও তাঁরা প্রকল্পটিতে কাজই করেননি।” কুতুবুদ্দিন বলেন, “কাজ না-করা সত্ত্বেও আমার নামে টাকা উঠে গিয়েছে এ কথা জানতে পারার পরেই আমি প্রধানের সঙ্গে কথা বলে যাই। তিনি বলেন ‘এ সব মিথ্যা কথা। এরপরেই আমি বিডিও-র কাছে অভিযোগ জানাই।” একই কথা বলেন বাকি তিন জন গ্রামবাসী।
অভিযোগ অস্বীকার করে বাছরি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শ্যাম মেটিয়া বলেন, “কোনও জবকার্ডধারীর টাকা ব্যাঙ্ক থেকে অন্যেরা তুলতে পারেন না। কারও উস্কানিতে দু’জন এমন অভিযোগ করেছেন। ব্যাঙ্কে খোঁজ নিলেই সব প্রমাণ হয়ে যাবে। শুনানিতে গিয়ে অভিযোগটি যে মিথ্যা তা প্রমাণ করে দেব।” একই বক্তব্য আমরদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দীপা জানারও। বিডিও বলেন, “শুনানিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদেরও ডাকা হয়েছে।” |