স্কুল-পরিচালন সমিতির ভোটে উত্তেজনা পাঁচলায় |
স্কুল পরিচালন সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রবিবার দুপুরে হাওড়ার পাঁচলা আজিম মোয়াজ্জেম হাইস্কুলে উত্তেজনা ছড়ায়। দফায় দফায় বোমাবাজি হয়। পুলিশ লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। নামানো হয় র্যাফ। গ্রেফতার করা হয়েছে কয়েক জনকে। সন্ধ্যায় ভোটের ফল প্রকাশের পরে দেখা যায়, ৬টি আসনের সব ক’টিতেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল।
এই স্কুলের ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে তৃণমূল এবং ‘মাঠ ও শিক্ষা বাঁচাও কমিটি’-র মধ্যে। কমিটির সদস্যদের বেশির ভাগই আবার কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থক।
বর্তমানে স্কুল পরিচালন সমিতি রয়েছে তৃণমূলের হাতে। বছর দুই আগে পরিচালন সমিতি সিদ্ধান্ত নেয়, স্কুলের নামে যে ৯ বিঘা জমি রয়েছে তা একটি কলেজ গড়তে দান করে দেওয়া হবে।
কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ তা মানতে নারাজ। তাঁদের পাল্টা বক্তব্য, জমিটি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের খেলার মাঠ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এখানে কলেজ গড়তে দেওয়া যাবে না। তাঁদের আরও বক্তব্য, একান্তই যদি কলেজ গড়তে হয় তা-হলে ওই জমির কিছুটা অংশ ব্যবহার করতে দেওয়া যেতে পারে। বেশিরভাগ জমি খেলার মাঠ হিসাবে রেখে দিতে হবে। এই দাবিতেই ওই গ্রামবাসীরা তৈরি করেন ‘মাঠ ও শিক্ষা বাঁচাও কমিটি’। অন্য দিকে, কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূল পরিচালিত পাঁচলা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুশীল অধিকারী বলেন, “সরকারি নিয়মানুযায়ী এখানে ৯ বিঘা জমিই উচ্চ শিক্ষা দফতরকে দানপত্র করে দিতে হয়। তবেই কলেজ গড়ার অনুমতি পাওয়া যায়। সেই কারণে ৯ বিঘা জমিই দানপত্র করে দেওয়া হয়েছে। তবে এর মধ্যে মাত্র ২ বিঘা জমিতে কলেজের ভবন তৈরি হবে। বাকি জমিতে পাঁচলা আজিম মোয়াজ্জেম স্কুলের ছেলেরা খেলাধূলা করতে পারে। দানপত্র রেজিস্ট্রি করার সময়ে সেই শর্ত রাখা হয়েছে।”
স্কুল পরিচালন সমিতির নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘মাঠ ও শিক্ষা বাঁচাও কমিটি’ লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেয়। কমিটিকে সমর্থন করে কংগ্রেস। কংগ্রেসের নেতারা ‘মাঠ ও শিক্ষা বাঁচাও কমিটির প্রার্থীদের পক্ষে পথসভা এবং জনসভা করেন।
রবিবার সকাল থেকে ভোট শুরু হয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট গ্রহণ চলতে থাকলেও দুপুর ২টো নাগাদ গোলমাল বাধে। ‘ছাপ্পা ভোট’ মারা হচ্ছে এই অভিযোগ তুলে তৃণমূল এবং মাঠ বাঁচাও কমিটির কর্মী-সমর্থকেরা পরস্পরের মধ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। শুরু হয় বোমাবাজি। পুলিশকে লক্ষ করেও বোমা এবং ইট ছোড়ার অভিযোগ ওঠে। বেশ কিছু ক্ষণের জন্য ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। গ্রামবাসীরা আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকেন। ‘মাঠ ও শিক্ষা বাঁচাও কমিটি’র পক্ষে অভিযোগ করা হয়, পাঁচলার তৃণমূল বিধায়ক গুলশান মল্লিকের নেতৃত্বে তাদের কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলা হয়েছে। কমিটির সভাপতি তথা অন্যতম প্রার্থী আলতাব হোসেন মিদ্দে বলেন, “আমাদের কর্মী-সমর্থকদের মারধর করে তাড়িয়ে দেয় তৃণমূলের লোকজন।”
হাওড়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি কাজি আব্দুল রেজ্জাক বলেন, “বিধায়কের উপস্থিতিতে তাঁর অনুগামীরাই হামলা করে। কিছু ক্ষণ ভোট বন্ধ থাকার পরে ফের চালু হলে ছাপ্পা ভোট মারে তৃণমূল।”
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে গুলশান বলেন, “সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা বাইরে থেকে লোক এনে আমাদের কর্মী সমর্থকদের লক্ষ করে বোমাবাজি করে। এমনকী, পুলিশকে লক্ষ করেও বোমা মারে তারা। আইন মেনে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ৩০০ মিটারের মধ্যে আমি বা আমাদের দলের কোনও পদাধিকারী যাননি।” সিপিএমের পক্ষে জানানো হয়েছে, এই ভোটের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই।
জেলা পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ভোটকে কেন্দ্র করে সামান্য গোলমাল হয়েছিল। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। হামলা, বোমাবাজির অভিযোগে কয়েক জনকে ধরা হয়েছে।” |