|
|
|
|
|
|
‘ দেখি দরজায় দাঁড়িয়ে সত্যজিৎ রায়’
অলকানন্দা রায় |
|
রক্ষণশীল বনেদি পরিবারে বড় হয়েছি। জীবনে কোনও রবিবারেই নিয়ন্ত্রণহীন স্রোতে গা ভাসাইনি। ছোটবেলায় থাকতাম ল্যান্সডাউনের কাছাকাছি। পড়তাম সেন্ট জনস ডায়সেশনে। রবিবার হলেই বাবা আমাদের নিয়ে হইহই করে কাটাতেন সারাদিন। দুপুরের খাওয়াদাওয়ার পর একটু বিশ্রাম নিয়েই গাড়ি করে কখনও গড়ের মাঠে, কখনও গঙ্গার ধারে যেতাম বাবার সঙ্গে। বন্ধু-বান্ধবী ছিল না তা নয়, কিন্তু বাবার নির্দেশ ছিল তাদের সঙ্গে গল্পগুজবটা যেন বাড়িতে বসেই হয়। রাস্তায়-রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোর দরকার নেই। আমিও মেনে চলতাম। তাই কোনও রবিবারে কলেজের বন্ধুরা বাড়িতে আসত, আমিও যেতাম।
আমার শনি-রবিবারের আর একটা প্রধান অঙ্গ ছিল ‘দক্ষিণী’। গান শিখতাম নিয়মিত। শেখাতেন অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবিনয় রায়ের মতো শিল্পীরা। সালটা ১৯৬১। রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবর্ষ। ‘দক্ষিণী’-তে আমরা অভিনয় করলাম রবীন্দ্রনাথের ‘শেষ রক্ষা’ নাটকটি। দেশপ্রিয় পার্কের মঞ্চে ইন্দুমতীর চরিত্রে গান ও অভিনয় করলাম। প্রশংসা পেলাম। কিন্তু দর্শকাসনে নানা গুণিজনের মধ্যে সত্যজিৎ রায় ছিলেন কি না, সে ধোঁয়াশা আজও আছে। অথচ সেই অভিনয় দেখেই তিনি রুমা গুহঠাকুরতাকে আমার কথা জিজ্ঞেস করেন। রুমা গুহঠাকুরতার সঙ্গে আই-পি-টি-এ যাতায়াতের সুবাদে মায়ের পরিচয় ছিল। সেই সুবাদে আমার পরিচয় ও ঠিকানা জানিয়ে দেন রুমা গুহঠাকুরতা।
তখন প্রেসিডেন্সির চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী আমি। কলেজ যাওয়ার তাড়ায় ছিলাম। ডোর বেলের শব্দে দরজাটা আমিই খুললাম। সত্যজিৎ রায় সামনে দাঁড়িয়ে। আমাকে প্রায় কিছু বলার অবকাশ না দিয়েই জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোথায় যাচ্ছ?’ আমি বললাম, কলেজে। ঠিক দশ মিনিট বসতে বললেন। অবশ্য এর আগেই টেলিফোনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট হয়েছিল বাবার সঙ্গে। সত্যজিৎ রায় এসেছেন আমার খোঁজে...। উত্তেজনা ও ভয়ের আবেগ মেখে উঠে পড়লাম, গেলাম কলেজে।
উনি তখন বাবার সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন। কলেজ থেকে ফিরেই ছুটে গেলাম মা-র কাছে। শুনলাম সত্যজিৎ রায় ওঁর পরবর্তী ছবিতে আমাকেই চাইছেন। কিন্তু বাবা কিছুতেই রাজি নন।
এর ঠিক পরেই উনি আবার কথা বলেন বাবার সঙ্গে। বাবা শর্মিলা ঠাকুরকে নেওয়ার জন্য জোর করেন। কিন্তু সত্যজিৎ রায় জেদে অটল। তাঁর গল্পের চরিত্রের জন্য ঠিক আমাকেই দরকার। বাবা ও জ্যাঠামশাইদের হার মানতে হল, মায়ের সঙ্গে গেলাম দার্জিলিঙে।
একটা কথা অনেকেরই অজানা। সত্যজিৎবাবু গল্পটি ব্যারাকপুরের একটা বাগানবাড়িতে পিকনিকের ঘটনায় প্লটটি সাজিয়েছিলেন। কিন্তু দার্জিলিঙে চিত্রনাট্য ও অন্যান্য হোমওয়ার্ক করতে গিয়ে উনি মনোস্থির করেন কাঞ্চনজঙ্ঘাই হবে পটভূমি।
প্রায় এক মাস টানা আউটডোর। আমি দু’দিন আগেই গেছিলাম। শুটিংয়ের কাজকর্ম বুঝে নিতে ও মানিয়ে নিতে বেগ পেতে হয়নি। তা ছাড়া মনে মনে ভাবছিলাম স্টেজে যেমন অভিনয় করি, এও তো তাই, শুধু ক্যামেরাটা ফলো করতে হবে। আর একটা ব্যাপার ছবি বিশ্বাস, পাহাড়ী সান্যাল, অনুভা গুপ্ত, হরিধন মুখোপাধ্যায়, করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করছি বলে কোনও জড়তা ছিল না। তখন তো মিডিয়ার এত বাড়বাড়ন্ত ছিল না, ফলে এঁদের অভিনয়-প্রতিভা সম্বন্ধে খুব একটা স্পষ্ট ধারণা ছিল না।
মনে আছে, এক দিন অরুণদা (অরুণ মুখোপাধ্যায়) আর আমি শুটিংয়ের ফাঁকে বেঞ্চে বসেছিলাম। শট রেডি হওয়ায় ডাক পড়ল। দার্জিলিঙে তখনও শীত জাঁকিয়ে পড়েনি। এমনকী শট-এর ফাঁকে কখনও ওভারকোট খুলেও রাখতে হত। আমি লংকোটটা নিজেই পরতে যাচ্ছিলাম, এমন সময় ছবি বিশ্বাস এগিয়ে এসে অরুণদাকে বললেন আমাকে কোট পরতে সাহায্য করতে এটাই সাহেবি রীতি। মনে মনে হাসি পেল। আর ছবি বিশ্বাস নিজেই কোট পরিয়ে দিলেন, আমার আজও শিহরন জাগে। অত বড় মাপের মানুষ আর হবে না।
শুটিং করেছি খোলা মনে। সত্যজিৎ রায় দৃশ্যগ্রহণের আগে স্ক্রিপ্ট রিডিং সেশন করতেন। নির্দেশ যা কিছু দেওয়ার দিয়ে দিতেন সেখানেই। শুটিং চলাকালীন ভুল ধরাতেন না। ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ মুক্তি পাওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের পরও পড়াশোনা করেছি। ইংরেজি সাহিত্য নিয়েই স্নাতকোত্তর করেছিলাম। ইচ্ছে ছিল স্কলারশিপ নিয়ে বিলেতে যাওয়ার, কিন্তু অনুমতি মেলেনি আপনজনদের। |
আমার প্রিয়
লেখক: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব বসু, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ,
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, জয় গোস্বামী। সলমন রুশদি, অমিতাভ ঘোষ, অরুন্ধতী রায়
শিল্পী: সাবিত্রী, সুচিত্রা, মাধবী, উত্তম, সৌমিত্র, হিউ গ্র্যান্ট
গান: রবীন্দ্রসঙ্গীত, হিন্দুস্তানি ক্লাসিকাল, ব্যান্ডের কিছু গান
খাবার: কাঁচালঙ্কা ও আলুসেদ্ধ সহযোগে ভাত |
|
আমি তখন চুটিয়ে সংসারে মন দিলাম। রবিবারে আমার শ্বশুরবাড়ির প্রায় সকলের জামাকাপড় ইস্ত্রি করতাম। সে এক এলাহি কাণ্ড! ডাইনিং টেবিলের পাশেই আয়রন টেবিল। একটার পর একটা ইস্ত্রি করছি... এ এক অদ্ভুত নেশা, ভাল লাগত। কেক, পুডিং জাতীয় আইটেম করে সকলকে দিতাম। বাড়ির বউ, মধ্যবিত্ত রক্ষণশীলতা ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ মুক্তি পাওয়ার পরও বছরের পর বছর ধরে আমি নিষ্ঠার সঙ্গে সংসার করেছি। কিছু মিস করিনি। আমার নিজের পড়াশোনা, বাড়ির ছোটদের পড়াশোনা নিয়ে বসতাম। পাড়া-প্রতিবেশীর বাচ্চারাও আসত। পড়াতাম ইংরেজি।
ছেলেরা স্কুল ছেড়ে কলেজে গেল। অনেকটা সময় এল বেরিয়ে। সোহাগ সেনের নাট্যদলে যোগ দিলাম। শনি-রবি রিহার্সাল থাকত। রবিবারে কখনও স্পেশাল শো হত। এত বছর পরে হঠাৎ নিজের অভিনয় জগতে প্রাণ খুঁজে পেলাম। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ‘ফেরা’ ছবিতে কাজ করলাম। বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভালে গেলাম প্রথম বার। ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’-র সময় কোথাও যেতে পারিনি।
ছোট পর্দায় জগন্নাথ গুহ-র পরিচালনায় ‘সলিউশন এক্স’ দিয়ে শুরু করলাম। প্রায় প্রতিদিনই নানা শুটিং, শো নিয়ে ব্যস্ত থাকি আজকাল। কিন্তু চেষ্টা করি রবিবারটা ফাঁকা রাখার। প্রচুর বই পড়ি। রবিবারের দুপুরে বই নিয়ে শুই জানি না ক্লান্ত চোখে কখন ঘুম আসে, উঠে দেখি বই হাতেই কেটে গিয়েছে রবিবারের দুপুর।
|
সাক্ষাৎকার: অরুন্ধতী মুখোপাধ্যায়
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
|
|
মুখ খোলার, গল্প করার, গলা ফাটানোর নতুন ঠিকানা চারিদিক থেকে কানে আসা
নানা কথা নিয়ে আমরা শুরু করে দিলাম। এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভার আপনাদের |
• এই প্রচণ্ড গরমে রাজ্যে লোডশেডিং নেই! কারণ, রাজ্যে শিল্পায়ন ঘটেনি। ভাগ্যিস ঘটেনি। কারখানায় কাজ পাওয়ার চেয়ে এই গরমে ফ্যানের হাওয়া পাওয়া অনেক বেশি জরুরি!
সুজন দাস। রঘুনাথগঞ্জ
• এক বছর আগে সিঙ্গুরের মিছিলে ‘অনিচ্ছুক’ চাষিরা পা মেলাতে ‘ইচ্ছুক’ হয়। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের এক বছর পরে ‘অনিচ্ছুক’ চাষিরা মিছিলে পা মেলাতে ‘অনিচ্ছুক’। অতএব দিদি সাবধান, ‘ইচ্ছুক’ আর ‘অনিচ্ছুক’-এর হিসেব না গুলিয়ে যায়!
রাজা। হৃদয়পুর
• কাটোয়া থেকে শুরু করে, পার্ক স্ট্রিট থেকে শুরু করে, কার্টুন কাণ্ড থেকে শুরু করে, ডহরবাবু থেকে শুরু করে, লাইব্রেরি থেকে শুরু করে, দশ মাস আগে গর্ভবতী হওয়া থেকে শুরু করে, টেলিভিশনে মাওবাদী প্রশ্ন কাণ্ড থেকে শুরু করে... যা, কী যে বলব ভাবলাম, ভুলে গেছি!
ভোলা। শ্যামবাজার
• মালদহের মসানন্দপুরের বিধায়ককে পুকুরের জল খেতে হয়েছে, কারণ ওখানকার মানুষজনকে ওই জলই খেতে হয়। এ বার থেকে বিধায়করা সাবধান। তাঁদের কাদা রাস্তায় হাঁটা, ট্রেন-বাসের ছাদে সফর করা, বিদ্যুৎ ছাড়া ৪৫ ডিগ্রিতে বাঁচা, অসুখ হলে সরকারি হাসপাতালে গালাগালি খাওয়া প্র্যাক্টিস করতে হবে।
সুদর্শন নন্দী। মেদিনীপুর
• সরকারের বর্ষপূর্তিতে প্রগতি মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। তার উদ্দেশ্য ছিল সরকারের লক্ষ্য (আজকাল তো বাংলার চল কম, তাই ‘গোল’) সম্পর্কে মানুষকে জানানো। দেখা গেল মোটামুটি ফাঁকা মাঠেই গোল দিতে হয়েছে।
অনুব্রত ঘোষ। সল্ট লেক
• সরকারের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান চলছে, কিন্তু জনগণের ভরসা-পূর্তির কোনও চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না।
চাতক। পাহাড়পুর
• মুম্বইতে ‘অ্যাসল্ট’ তার পরেই পুণেতে ‘সমারসল্ট’। শাহরুখ খান নানান কাটা ঘায়ে সল্ট দিয়ে চলেছেন!
স্বাতী ভট্টাচার্য। বালি
• পেট্রোল পাম্পের কর্মী: কত টাকার তেল দেব দাদা?
গাড়িওয়ালা: দশ-পনেরো টাকার তেল ছিটিয়ে দাও ভাই, গাড়িটা জ্বালিয়ে দিই।
শান্তি বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা
• তাপমাত্র দেখলেই বোঝা যাচ্ছে, পৃথিবীর বয়েস বাড়ছে। ৪১-৪২-৪৩, এর কমে কোনও কথা হচ্ছে না।
অবসরী গোলদার। আলিপুর |
|
|
|
আবার মাথায় হাত, এক লাফে সাড়ে সাত,
যেন সাপ-লুডো খেলা চলছে।
যেই তুমি দাও দান, পাবলিক হয়রান,
গাড়িটাতে তুলে ওই, কেড়ে নাও শুধু মই
দাম-দংশনে মাথা জ্বলছে।
ঘুঁটে মালা পরনের সময় যে হৈল,
যত খুশি দাম হাঁকা পেট্রল তৈল |
|
|
|
অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় |
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সবে শুরু হয়েছে। জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে লোকে হিমসিম খাচ্ছে, কারণ সোনার দাম এক লাফে বেড়ে গিয়েছে অনেকটা। দুষ্প্রাপ্যও বটে। সাবিত্রীদেবীর মাথায় একরাশ চিন্তা বড় মেয়ের বিয়ে দেবেন কী করে। নীলাবতী স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত, এমন মানসিক অসুস্থ মেয়ের বিয়ে দিতে গেলে প্রচুর সোনা সহ যৌতুক দিতে হবে। অথচ সাবিত্রীদেবীর সঙ্গতি তেমন নেই, কারণ চার মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে অল্প বয়সে বিধবা হয়েছেন। স্বামী রেলে চাকরির সুবাদে শিমলায় থাকতেন। এবং ওখানেই মৃত্যু হয়। পাড়ার গণ্যমান্যদের সহায়তায় পাড়ারই এক অবিবাহিত যুবককে রাজি করানো হল দুই শর্তে: অতিরিক্ত সোনা সহ প্রচুর যৌতুক এবং বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর কোনও সম্পর্ক থাকবে না। ‘বড় মেয়ের বিয়ে না হলে অন্য মেয়েদের বিয়ে হবে না’, এই প্রথার অত্যাচার মেনে নিয়ে নীলাবতীর বিবাহ সম্পন্ন হল, কিন্তু ফুলশয্যার দিন বাপের বাড়ি চলে আসেন।
এই ঘটনার বারো বছর পর আমার জন্ম। তারও বছর আট পরে এক দিন পিসিমার সঙ্গে সদর দরজার পাশে রকে বসে আছি। পিসিমা (নীলাবতী) হঠাৎ এক ভদ্রলোককে দেখিয়ে বললেন, ‘দ্যাখ, আমার স্বামী যাচ্ছেন।’ বলেই মাথায় ঘোমটা টেনে দিলেন। পিসিমার মাথায়, কপালে সিঁদুরের চিহ্ন দেখিনি কোনও দিন, এমনকী শাঁখা-পলাও ছিল না হাতে। সে দিনই ঠাকুমাকে জিজ্ঞেস করায় উনি সব কথা বলেন।
কয়েক বছর পর পিসিমার স্বামী মারা যান। সে দিন রাতে পিসিমা কেঁদেছিলেন খুব। কুলীন ব্রাহ্মণ ঘরের প্রথা মেনে বৈধব্যও পালন করেছিলেন, আমিষ খাওয়া বন্ধ করে দেন।
সামাজিক প্রথা মেনে পিসিমার যে বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল, স্বামী ও সমাজ পুতুল খেলার মতো সেই বিবাহকে যথাযথ সম্মান দেয়নি। কিন্তু মানসিক অসুস্থ নীলাবতী আমৃত্যু সেই বিবাহকে সম্মান জানিয়ে এসেছেন এবং বিচ্ছেদের ব্যথা নিজের মনে বহন করে গিয়েছেন। স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধাও ছিল অটুট। |
|
|
কেসটা কী হচ্ছে বলুন তো? যে রেটে পড়ছে,
টাকা তো এ বার পয়সা হয়ে যাবে!
বুধাদিত্য গঙ্গোপাধ্যায়, হিন্দুস্তান পার্ক |
|
|
|
ক্ষমা চাইছি |
|
১৯৯৩ সালের নভেম্বর মাসের ঘটনা, যা আজও আমি প্রত্যেক মুহূর্তে অনুভব করি। আমার মা কলকাতায় চিকিৎসার সুবিধার্থে আমার কাছে এলেন। মায়ের লিভার সিরোসিস হয়েছে, সঙ্গে প্রবল শুগার। মা এক সময় প্রচণ্ড মিষ্টি খেতে ভালবাসতেন। হঠাৎই সে দিন কী মনে হল মাকে দু’টি রসগোল্লা খেতে দিতে ইচ্ছে হল। কিন্তু মায়ের তো শুগার! তৎক্ষণাৎ খুব খেয়াল করে রসগোল্লার রস টিপে টিপে প্রথমেই ফেলে দিলাম। তার পর জলে ডুবিয়ে সেটাও ফেলে দিলাম। আবার এক বার খুব ভাল করে জল দিয়ে ধুয়ে মাকে খেতে দিলাম। মা মুখে দিয়ে করুণ ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে রসগোল্লা দু’টি আস্তে আস্তে খেলেন। এই ঘটনার ১০-১৫ দিনের মাথায় মা দেহত্যাগ করলেন। চিরদিনের জন্য আমরা মাতৃহারা হলাম। কিন্তু মায়ের সেই করুণ দু’টি চোখ আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। ভুলতে পারি না সেই ঘটনা। মা গো, আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
অর্চনা সিংহ, বেহালা |
|
ই মেল-এ অথবা ডাকে, চিঠি পাঠান।
ই-মেল: chirkut.rabi@abp.in
চিঠি: চিরকুট, রবিবাসরীয়,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০০০১
|
|
|
|
|
|
|