ভোটটা অকাল। কিন্তু জলসঙ্কট তো অকালের নয়! ভরা জৈষ্ঠ্যের সন্ধ্যায় তাই বাঁকুড়া শহরের কাছের দেরুয়া-রশুনকুড় গ্রামে গিয়ে বেশ অস্বস্তিতেই পড়তে হল তৃণমূল প্রার্থী মিনতি মিশ্রকে।
তার আগে অবধি অবশ্য সব ঠিকঠাকই চলছিল। একঘর থেকে অন্য ঘরে গিয়ে ভোট চাওয়া। আশ্বাস মেলায় হাসি মুখে সেখান থেকে বেরিয়ে অন্য ঘরে। তাল কাটল হঠাৎই। দীর্ঘদেহী এক যুবক আচমকাই গলা চড়িয়ে ক্ষোভের সঙ্গে বলে উঠলেন, “জলের জন্য পাগল পাগল দশা। কী ভেবেছেনটা কি?” ভোটের ময়দানে হঠাৎই কঠোর বাস্তবের মুখোমুখি প্রয়াত কাশীনাথ মিশ্রের স্ত্রী।
গ্রামে জল নেই। সে তো এই সময় বাঁকুড়া জেলার বেশির ভাগ এলাকারই সমস্যা। কিন্তু, প্রার্থীকে সামনে পেয়ে ভোটারদের ক্ষোভ যে বেড়েছে! পানীয় জলের সমস্যায় জেরবার গ্রামবাসীরা চান নির্দিষ্ট আশ্বাস। অস্বস্তির আরও কারণ, যে গ্রামের ঘটনা, তা তৃণমূল এবং এসইউসি পরিচালিত জগদল্লা-১ পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। অথচ ধারেপাশে কোথাও দেখা যাচ্ছে না এলাকার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যকে।
ভোটারদের কাছে কী শুনলেন তৃণমূল প্রার্থী?
শুনলেন, গ্রামে প্রায় বেশ কয়েকটি নলকূপ রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে একটি ছাড়া বাকি সব ক’টি দীর্ঘদিন ধরেই খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। যে একটি নলকূপ দিয়ে জল বার হয় সেটির জলও মুখে দেওয়ার যোগ্য নয়। গ্রামবাসী সুজয় সাহা, অভিষেক ধল্লরা তৃণমূল প্রার্থীকে জানালেন, বাধ্য হয়ে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কল থেকে তাঁদের জল নিতে হয়। দিনের প্রায় কয়েক ঘণ্টা সময় ছাড়া বাকি সময় ওই বিদ্যালয়ের মূল লোহার গেট থাকে তালা বন্ধ। গ্রামের ছেলেমেয়েরা সেই গেট ডিঙিয়ে জল নিয়ে আসে। গ্রামের বধূ মমতা বাউরি, ময়না কালিন্দীরা প্রার্থীকে পেয়ে বললেন, “আমরা চরম সমস্যায় পড়েছি। শাড়ি পরে গেট ডিঙিয়ে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই বাড়ির ছেলেরা না থাকলে জলও আনতে পারি না।”
গ্রামবাসীদের আরও অভিযোগ, তাঁরা এই সমস্যার কথা পঞ্চায়েত সদস্যকে বারবার জানানো সত্ত্বেও উনি কিছুই করেননি। গ্রামবাসীদের কাছ থেকে নালিশ শোনার পর প্রচারসঙ্গী বাঁকুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল দিলীপ অগ্রবালকে মিনতিদেবী এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য বিশ্বজিৎ কালিন্দীকে ফোনে ধরার নির্দেশ দেন। ফোনে ধরা হলে মিনতিদেবী বিশ্বজিৎবাবুকে ধলড্যাংয়ের তৃণমূল কার্যালয়ে দেখা করতে বলেন। মিনতিদেবী বলেন, “ভোট বড় কথা নয়। এখানকার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে পানীয় জল পাচ্ছেন না। অথচ সব জেনেও পঞ্চায়েত সদস্য হাত গুটিয়ে কেন বসে আছেন, আমি তার কৈফিয়ত চাইব।” প্রচার শেষে ফিরে যাওয়ার আগে তৃণমূল প্রাথর আশ্বাস, দ্রুত বিকল নলকূপগুলি সারানোর বন্দোবস্ত করা হবে।
ওই পঞ্চায়েত সদস্য অবশ্য এই দুর্দশার জন্য পঞ্চায়েত প্রধানকেই দায়ী করেছেন। বিশ্বজিৎবাবুর অভিযোগ, “সমস্যার কথা একাধিকবার পঞ্চায়েত প্রধানকে জানিয়েছি। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে কোনও সহযোগিতা পাইনি।” পঞ্চায়েত প্রধান, এসইউসি-র কৃষ্ণা শীটের পাল্টা দাবি, “অসহযোগিতার অভিযোগ মিথ্যা। বাসিন্দাদের কাছ থেকে জল সমস্যার কথা জেনে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।”
এত দিন সেই চেষ্টা কেন করা হয়নি, সেই প্রশ্ন তুলেছেন দেরুয়া-রশুনকুড় গ্রামের মানুষজন। বাঁকুড়ার বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে মিনতি মিশ্রের প্রতিদ্বন্দ্বী, সিপিএম প্রার্থী নীলাঞ্জন দাশগুপ্তের কটাক্ষ, “পরিবর্তনের সরকার এক বছরে দলীয় উৎসব, অনুষ্ঠান ছাড়া আর কোনও দিকেই নজর দিতে সময় পায়নি। স্বভাবতই মানুষ তাদের উপরে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে।” |