|
|
|
|
শনিবারের নিবন্ধ |
ভানুরেখা গণেশন,এমপি জি |
স্বপ্নের তুলতুলে নারী এখন রাজ্যসভার কর্কশ বাস্তবে। সারা জীবনের প্রেমটা কোথায় যেন একেবারে আটকে গেল। লিখছেন প্রীতীশ নন্দী |
উত্তেজক টিন-এজ ছেড়ে সবে উড়ছি যখন, তখনই প্রেমে পড়ি রেখার। ব্যাপারটা আপনাদের একটু অদ্ভুত লাগতে পারে। বিশেষ করে যখন জানবেন যে সে সময়ে আমার দারুণ একটা প্রেম চলছে। মেয়েটি ছিল আমার হাইস্কুল সুইটহার্ট, যার মা সত্যজিৎ রায়ের একটি সিনেমায় কিছু দিন আগেই কী একটি নামগোত্রহীন ভুতুড়ে চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এবং তার জন্য আমার গার্লফ্রেন্ডটি যারপরনাই লজ্জিত। বাঁচোয়া একটাইসে সময়ে লা মার্টিনিয়ার স্কুলের খুব সামান্য সংখ্যক ছাত্রছাত্রীই সত্যজিৎ রায়ের ছবি দেখত। তবে সে কথা থাক। এ গপ্পোটা তো আর আমার হাইস্কুলের প্রেম নিয়ে নয়। গপ্পোটা রেখাকে নিয়ে।
আমাদের সময়ে সিনেমাকে বলত রুপোলি পর্দা। রেখা তখন এক পাতি সিনেমার দৌলতেই সেই রুপোলি পর্দায় বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে ফেলেছেন। উল্টো দিকে নায়ক সময়ের আগেই পক্ককেশ এক যুবক, নবীন নিশ্চল। নবীনের সঙ্গে আমার কলকাতাতেই আলাপ হয়েছিল। আমি সেই ছবি‘সাওন ভাদো’ দেখতে গেলাম। এখানে বলে রাখিআমার ছবি দেখার অভ্যেসটা ছিল বেশ ছড়ানো মতো। অনেক সময়েই যে হলে ঢুকছি, সেখানে ঠিক কী দেখব সে সম্বন্ধে কোনও ধারণাই থাকত না। কিন্তু ‘সাওন ভাদো’ আমার জীবনটাই পাল্টে দিল। মোটাসোটা, শ্যামবর্ণা, স্ফীতকুচ, যৌন-বিষ্ফোরক সেই রেখার একটা ঝলকবুঝে গিয়েছিলাম সারা জীবনের প্রেমাস্পদকে আমি পেয়ে গেছি। রেখা ছিলেন টিএনটি। বুঝলেন না তো? আরে, ট্রাইনাইট্রোটুলিন। রাসায়নিক ফর্মুলা CH3C6H2(NO2)3। সুগন্ধী সেই রাসায়নিক স্ফটিকখণ্ড যা ৮১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে পৌঁছে গলে যায়। সে সময়টা স্ফুরিত টিনএজ ফ্যান্টাসির। যৌনাকাঙ্ক্ষায় মাখামাখি হওয়ার। রেখার সেই ঝলক সারা জীবনের মতো আমার চরিত্রটাই নষ্ট করে দিল। সেই যে নষ্ট হলাম, আর ঠিক হতে পারলাম না। এক দশক পর যখন রক্তমাংসের রেখার সঙ্গে মুম্বইতে দেখা হল, তখনও না। আবিষ্কার করলাম আসল মানুষটা পর্দার নায়িকার থেকে অনেকগুণ বেশি উষ্ণতার আঁচ ছড়ায়। আর সেই হাস্কি, নিকোটিন-ঋদ্ধ গলার স্বরও তো আমার থেকে অনেক কম সুন্দরী সংসর্গ করা
পুরুষকেও নিহত করতে পারে।
এর মধ্যে এম জে আকবরের অনুরোধে ‘সানডে’ পত্রিকার একটি বার্ষিক সংখ্যার অতিথি সম্পাদক হয়েছি আমি। সেই সংখ্যাটা আবার ভারতীয় নারীর প্রতি উৎসর্গীকৃত (আমার তো পুরো জীবনটাই ভারতীয় নারীদের প্রতি উৎসর্গীকৃত)। আর আমি যখন সম্পাদক, সেই সংখ্যার মলাটে কার ছবি থাকবে, সেটা আন্দাজ করার জন্য কোনও পুরস্কারই কারও প্রাপ্য নয়। অবশ্যই রেখার একটি মুভি স্টিল দিয়ে সেই মলাট সাজানো হয়েছিল। রেখা তাঁর সহজাত জমকালো উপস্থিতিতে, পরনে গয়না ছাড়া আর কিছুই নেই। স্টিলটা ছিল সে সময়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ভারতবর্ষের প্রথম তুলতুলে যৌনোত্তেজক একটি ছবি থেকেযাকে আজকের ভাষায় বলা যায় সফ্ট অ্যাজ সফ্ট ক্যান বি পর্ন ফ্লিক। অবশ্যই সেটা আসলে কোনও পর্ন ফ্লিক ছিল না। কিন্তু রেখা সেখানে করেছিলেন এক বারবনিতার চরিত্র। অবশ্যই জীবনে এটাই একমাত্র বারবনিতার চরিত্র নয় রেখার। বারবনিতা এমন একটা চরিত্র যেটা ভানুরেখা গণেশন পূর্ণতার পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন অবশ্য তৈরি হল যখন মীরা নায়ার তাঁকে বহু বছর পর ‘কামসূত্র’ ছবিতে অভিনয় করালেন। প্রায় অসম্ভব মনে হলেও, তখন রেখা অবশ্য আরও অনেক বেশি সুন্দরী হয়ে উঠেছেন। তাঁর শরীরে যে শিশুসুলভ মেদ ছিল তা ঝরে গেছে, প্রায় ছ’গুণ ফর্সা হয়ে গেছেন (ভগবান জানেন কী করে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি তখনও আবিষ্কৃতই হয়নি) এবং সে সময়ে আমার দেখা যে কোনও মহিলার থেকে হাজার গুণ যৌনোত্তেজক হয়ে উঠেছে তাঁর উপস্থিতি। এমন কী স্বপ্নেও।
রেখার প্রতি আমার যে প্রেম, সেটা তাঁর জীবনে আসা অন্যান্য পুুরুষদের মতোই, সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধগন্ধী ছিল। তত দিনে আমি বিবাহিত। বিয়েটা দারুণ হয়েছিল, কিন্তু বিবাহিত জীবনটা হয়ে গেল একটু গণ্ডগোলের। আমরা তখন ডিভোর্সের কথাও চিন্তা করছিলাম। যেহেতু ঠিক যেমন ভেবেছিলাম, সে ভাবে বিবাহিত জীবনটা গড়ে উঠছিল না, তাই আমিও সে সময়ে অন্য শহরে থাকা আরেক সুন্দরীর সঙ্গে একটি ঝঞ্ঝাদীর্ণ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলাম। অন্য শহরের বাসিন্দা সেই মেয়েও তখন মুম্বই ইন্ডাস্ট্রিতে হাল্কা আনাগোনা শুরু করেছে। কিন্তু জীবনে যতই সম্পর্ক থাকুক, রেখার সঙ্গে আমার সম্পর্ক পর্বতের মতো দৃঢ়বদ্ধ ছিল বরাবর। আমার চিন্তায়, আমার স্বপ্নে তিনিই ছিলেন একমাত্র মহিলা। এমন একটা কিছু ছিল তাঁর মধ্যে যার মাধ্যমে আমার মতো পরকীয়াপ্রেমী পুরুষের কাছ থেকেও তিনি নিরবিচ্ছিন্ন বিশ্বস্ততা আদায় করে নিতে পারতেন। |
|
পর্দায় তাঁর অভিনয় আমি মোহিত হয়ে লক্ষ করতাম। প্রত্যেক ছবিতে তিনি আরও পরিশীলিত হচ্ছেন, এটাও নজরে আসত। এবং একদিন তিনি সেই অভিনেত্রীতে পরিণত হলেন, যিনি অভিনয়ের জন্য পুরস্কারও পেতে পারেন। তাঁর জীবনটাও আমাদের কাছে তাঁর ছবির মতোই উত্তেজক ছিল। মনে আছে একটি লম্বা সকাল কাটিয়েছিলাম সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে। সেই আড্ডাটা শুরু হয়েছিল সত্যজিৎবাবুর জলদ্গম্ভীর কণ্ঠস্বরে একটি প্রশ্ন দিয়ে‘তা হলে এখন রেখার খবর কী? নতুন কোনও ইন্টারেস্টিং অ্যাফেয়ার?’ মনে আছে আড্ডাটা এইসব পাতি স্ক্যান্ডালের আলোচনা থেকে ধীরে ধীরে বাঁক নিয়ে চলে গিয়েছিল এমন একটা পর্যায়ে, যার শেষে রায়বাবু ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি বরাবর রেখাকে নিয়ে একটি ছবি তৈরির কথা ভেবেও শেষ পর্যন্ত করে উঠতে পারেননি, কারণ মহিলার জন্য সঠিক চরিত্রটা খুঁজে পাননি। সে কথা শুনে আমি নিজেকে বলেছিলাম, দেখ হে, রেখার জন্য অস্থির হওয়ার পেছনে কোনও ভুল নেই। সত্যজিৎ রায়ের মতো বিরাট ব্যক্তিত্বের মনেও সেই মহিলার জন্য একটা তুলতুলে কোণ আছে। যেমন সে সময়ে প্রায় সারা বিশ্বের ছিল।
আর রেখার প্রেমের সংখ্যা তো গোনাগুনতির বাইরে ছিল তখন (অনেকে বলেন তাঁর বিয়ের সংখ্যাও প্রচুর)। কিন্তু তাতেও তাঁর প্রেমিকের অভাব কোনও দিন হয়নি। প্রেমিকের লাইন লেগেই থাকত তাঁর জীবনে, এবং কতশত ভগ্নহৃদয় যে তিনি পথে ফেলে চলে গেছেন, তার হিসেব কে বা রাখে? আর তারই মধ্যে ছিল বিবাহিত সম্পর্কের সঙ্গে তাঁর লুকোচুরি খেলা। যেমন, একবার গুজব রটল যে বিনোদ মেহরা নামক এক সামান্য অভিনেতার সঙ্গে তাঁর মালাবদল হয়েছে। যদি হয়েও থাকে, সে বিয়ে সামান্য সময়ের জন্যই টিকেছিল। তারপর গুজব রটল কিরণ কুমার নামে আরেক বি-গ্রেড ভিলেনের প্রেমে পড়েছেন তিনি। এর পর খবর এল লালওয়ানি নামে কোন এক এনআরআই লাখপতি (সে সময়ে লাখপতিটাই বাজারে চলত) নাকি তাঁকে প্রায় বিয়ে করে ফেলেছেন (প্রসঙ্গত, এই লালওয়ানি হলেন জেসিকা লাল খুনের প্রত্যক্ষদর্শী বীণার ভাই)। আর তারপর মঞ্চে অবতরণ করলেন মুকেশ অগ্রবাল। যিনি সত্যি সত্যিই এক বছরের বিবাহিত জীবন কাটিয়েছিলেন রেখার সঙ্গে। এক বছর পর ওঁদের ডিভোর্স হয়ে যায়, যার কিছু দিনের মধ্যে ভদ্রলোক আত্মহত্যা করে ফেলেন। রেখে যান একটি নোটযে তাঁর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। নাহ! যে মহিলাকে সারা দেশ কামনা করে, তাঁর সঙ্গে বিবাহিত জীবনযাপন কি আর সহজ কাজ।
অগ্রবালের মৃত্যুর পর মিডিয়ার সঙ্গে রেখার একটা কর্কশ সম্পর্ক তৈরি হয়। চুরি যাওয়া গয়নাপত্র আর আয়কর দপ্তরের রেইডে ব্যাপারটা আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে। অবশ্য এই সব পর্বর অনেক আগে থেকেই রেখা চারিদিকে ফিসফাস করে যাচ্ছেন তাঁর অন্য এক সম্পর্ক নিয়ে। সেই পুরুষটি রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী এক অভিনেতা (হি উইথ আ ক্যাপিটেল এইচ), যিনি নিজে ততটাই তেড়েফুড়ে এই সম্পর্কটাকে অস্বীকার করে যাচ্ছেন, এবং যাঁর স্ত্রী ও পরিবার এমন একটা ভান করে যাচ্ছেন, যেন রেখা নামক ব্যক্তিটির কোনও অস্তিত্বই নেই। কিন্তু ততদিনে বি-গ্রেড এবং পাতি অভিনেতাদের প্রেমে হারিয়ে যেতে যেতে রেখা শেষ পর্যন্ত এমন একজন প্রেমিক পেয়ে গেছেন যিনি সর্বার্থেই অত্যন্ত প্রভাবশালী।
আর এই সময় নাগাদই রেখা নিজেকে আড়াল করতে শুরু করেন। তত দিনে নতুন নায়িকাদের একটা চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি হতে শুরু করেছে। এবং তাঁরা সবাই রেখার থেকে অনেক কমবয়সী। এর মধ্যেই যশ চোপড়া ‘সিলসিলা’ বানালেন। ছবিটাকে রেখার জীবনের ত্রিকোণ প্রেমের ছায়ায় তৈরি গল্প হিসেবে বাজারে খাওয়াতেও চেষ্টা করলেন। কিন্তু সে বছরই রেখা তাঁর অভিনয় জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চরিত্রটিতে অভিনয় করে ফেললেনউমরাও জান নামে এক বারবনিতার চরিত্রে। চার বছর পর তিনি করলেন বসন্তসেনার চরিত্রে অভিনয়। এবং দু’টো ছবিতেইএকটায় অত্যধিক পোশাকে নিজেকে ঢেকে, অন্যটায় অতি কম পোশাকে নিজেকে জাহির করেতিনিই ছিলেন শ্রেষ্ঠতম আই-ক্যান্ডি। তারও চার বছর পর রেখা দিলেন ‘খুন ভরি মাঙ্গ’। সেটা ছিল রিভেঞ্জ-ড্রামা এবং দুর্দান্ত হিট। ‘রিটার্ন টু ইডেন’ নামে একটি অস্ট্রেলিয়ান সোপের ছায়া অবলম্বনে তৈরি সেই ছবিতে কবির বেদি ছিলেন তাঁর উল্টো দিকে। আর ছিল কোন এক ট্যারা অভিনেত্রী। কোনও যুক্তির ধার না ধেরে যে মহিলা কবিরকে রেখার মতো সুন্দরীর কাছ থেকেও ছিনিয়ে নেয়। রেখার পরের হিটটাও ছিল একটা রিভেঞ্জ ড্রামা।
|
রেখার সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে আমার প্রধান আগ্রহ ওঁর শাড়ির ওয়ার্ডরোব নিয়ে। কবে উনি কোন শাড়ি পড়ে সংসদে যান, সেটার দিকে তাকিয়ে আছি। আর রেখার রাজ্যসভায় মনোনীত হওয়াটাকে আমি ভীষণ ভাবে সমর্থন করি। কেন নয়? হাজার হোক, বেশির ভাগ সাংসদের থেকে ওঁকে অনেক সুন্দর দেখতে, ওঁর চলাফেরা, কথাবার্তায় মর্যাদা চুঁইয়ে পড়ে, কোনও ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই এবং সবচেয়ে বড় কথা উনি একজন মধুর ব্যক্তিত্বের মানুষ।
শোভা দে, কলামনিস্ট |
রাজ্যসভায় যাঁরা ওঁকে মনোনীত করে পাঠিয়েছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই আশা করছেন রেখা সেখানে গিয়ে কিছু ভাল কাজ করবেন। এখন সাংস্কৃতিক এবং বিনোদনের দুনিয়া থেকে অনেকেই যাচ্ছেন সংসদে। তেমন ভাবেই রেখাও গেছেন। রুপোলি পর্দা এত দিন ধরে তাঁর একটা রহস্যময়তা তৈরি করেছে। এর মধ্যে মানুষ হিসেবে রেখার রহস্যময়তা ভেঙে যাবার কিছু নেই। ওঁর সঙ্গে কাজ করেছি। আমার কখনওই সে ভাবে ওঁকে রহস্যময়ী মনে হয়নি। তাই রাজ্যসভায় গেলেও, তাঁর রহস্য আবছা হয়ে যাবে, এমন মনে হয় না।
গৌতম ঘোষ, পরিচালক |
|
এর মধ্যেই রেখা অন্য ধারার পরিচালকদের সঙ্গে বেশ কয়েকটা ছবি করে ফেলেন। শ্যাম বেনেগল, গোবিন্দ নিহালনি, গিরীশ করনড়, মুজাফ্ফর আলি, হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়, গুলজার। সত্যি বলতে, রেখা অভিনীত যে সব ছবি আমার সবচেয়ে পছন্দের, তার মধ্যে বেশ কয়েকটা এঁদের পরিচালনাতেই। ‘কালযুগ’। ‘বিজেতা’। ‘উৎসব’। ‘উমরাও জান’। ‘ইজাজত’। তবে আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছিল ‘খুবসুরত’। এ ছবিতে রেখা এক কথায় অসাধারণ। যেমন কমিক টাইমিং তেমনই প্রতিভা। এই ভাবেই রেখা নামক আমার অতিপ্রিয় সেক্স-সিম্বলটি এক পরিপূর্ণ অভিনেত্রী হয়ে উঠেছিলেন। এমন একজন অভিনেত্রী যিনি প্রশংসা পেয়েছিলেন, সম্মান অর্জন করেছিলেন, বৈধতা ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। দু’বছর আগে তিনি পদ্মশ্রী হলেন আর এখন তিনি রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য। যে স্বীকৃতি তিনি বরাবর চেয়ে এসেছেন, এত দিনে তা যেন ঢেলে আসছে
তাঁর কাছে।
রেখাকে সবচেয়ে ভালভাবে চিনেছিলাম মুম্বই পৌঁছনোর পর। আমার অনেকগুলো কাজ ছিল তখন‘টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’ চালানো, ‘দ্য ইলাসট্রেটেড উইকলি’ আর ‘ফিল্মফেয়ার’-ও সম্পাদনা করতে হত। রেখার অপার্থিব সৌন্দর্য আমার সম্পাদিত ম্যাগাজিনের মলাটগুলোকে মাঝে মাঝেই উজ্জ্বল করত। তিনি আমার জন্য লিখেওছিলেন, এবং আমরা একে অপরের সঙ্গে দারুণ কিছু সময়ও কাটিয়েছিলাম। কিন্তু যেদিন থেকে তিনি অন্তরিন হলেন, সেদিন থেকে আমি তাঁর নির্জনপ্রিয়তাকে সম্মান জানিয়ে এসেছি। যেমন যে কোনও ভদ্রলোক স্বাভাবিক ভাবেই করবেন আর কী। ওই মাঝে মধ্যে দু’-একটা ফোন-কল। ব্যাস! অবশ্যই আমার ৩৩ বছর পর পদ্মশ্রী সম্মান আসায় তাঁর সঙ্গে রসিকতা করেছি। আর আমার সংসদ ছাড়ার আট বছর পর যে তিনি রাজ্যসভায় মনোনীত হয়েছেন, তা নিয়েও সামান্য রসিকতা করতে পারলে ভাল লাগবে। এবার তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী কয়েকজন রাজনীতিকের সঙ্গে পরিচিত হবেন। আলাপ হবে এমন কয়েকজনের সঙ্গে যাঁদের মধ্যে, আমার মতে, লুকিয়ে আছে দেশের অর্থভাণ্ডার সাফ করার অনন্য প্রতিভা।
কিন্তু এই লেখাটা তো শুরু হয়েছিল প্রেমের গল্প হিসেবে। এটা তো রেখার জীবনী নয়। সেই প্রেমের গল্প এখন কোথায় দাঁড়িয়ে? খারাপ শুনতে লাগলেও, বলতে বাধ্য হচ্ছি, সে গল্প আটকে গেছে। সব ভারতীয় ভদ্রলোকের মতোই সেই সব অভিনেত্রীদের আমি এড়িয়েই চলতে ভালবাসি, যাঁরা সিনেমায় মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। মায়েদের তো নিরাপদ দূরত্ব থেকে সম্মান জানানো উচিত, আর তাঁদের জীবনে পদ্মশ্রী
বা রাজ্যসভায় মনোনয়ন পাওয়ার মতো ঘটনা ঘটলে হাততালি দিয়ে অভিবাদন জানানো উচিত। কৈশোর আর যৌবনের সন্ধিকালে দেখা সেই সব গর্হিত স্বপ্ন এখন অলীক ছাড়া আর কী?
কিন্তু স্বপ্ন কি আমি এখনও দেখি? এখনও কি প্রেমে পড়ি আমি? আরে মশাই, যে দেশের আনাচেকানাচে এমন চোখ ঝলসে দেওয়া সুন্দরীরা রয়েছেন, সে দেশে থেকে প্রেমে না পড়ে উপায় আছে? |
|
|
|
|
|