মর্কেলের না খেলা নিয়ে রহস্য
ধোনিকে ম্যাচ ‘উপহার’ দিল্লির
‘অ্যায়সা মওকা অর কাঁহা মিলেগা’! এ বারে আইপিএলের থিম সঙ। প্রত্যেক মাঠে খেলার আগে-পরে-বিরতিতে বেজে থাকে। আজও চিপকে বারবার বাজছিল। ম্যাচ শুরু আগেই এই স্লোগান চেন্নাই সুপারকিংসের ড্রেসিংরুমের ভিতরে ঝুললে আশ্চর্য হওয়ার কিছু ছিল না।
রবিবার জামাইষষ্ঠীতে কলকাতার জামাই মহেন্দ্র সিংহ ধোনির শহরে থাকার কথা নয়। সেই দিনই তো ফাইনালে শ্বশুরবাড়ির কেকেআর-এর সঙ্গে টক্কর। সে দিন ট্রফি আসুক না আসুক, দিল্লির কাছ থেকে জামাইষষ্ঠীর আগাম ‘উপহার’ হিসেবে ধোনি আজ রাতে চিপকে পেলেন টানা তিন বার আইপিএল ফাইনালে খেলার ছাড়পত্র। অনায়াসে। রবিবার আর একটা জয় মানেই আইপিএল জয়ের হ্যাটট্রিক হয়ে যাবে ‘ক্যাপ্টেন কুল’-এর। যিনি কোনও আইপিএল ফাইনাল নিজের ডেরায় হারেননি।
‘উপহার’ এবং রীতিমতো শুভেচ্ছা সহ! না হলে লিগ তালিকায় এক নম্বরে থাকা টিম কি না এই মরণ-বাঁচনের ম্যাচে খেলাবে না টুর্নামেন্টের সেরা বোলার মর্নি মর্কেলকে? যিনি সকালেও প্রচারমাধ্যমকে বলেছেন, “ভাই অ্যালবির টিমের বিরুদ্ধে বিকেলে খেলব,” বিকেলে তিনিই প্রথম এগারোর বাইরে? টিম ম্যানেজার ম্যাচের ঠিক আগে বলছিলেন, “ওর হাল্কা জ্বর হয়েছে, তাই নেই।” আবার মাহেলাকে দেখা গেল, টিভিতে বলছেন, “আমরা ব্যাটিং শক্ত করতে আর একজন অলরাউন্ডার খেলাতে চেয়েছিলাম বলে মর্নি নেই।” একই কথা ম্যাচ শেষে বললেন সহবাগও। লালমোহনবাবু থাকলে নির্ঘাত মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসত, ‘হাইলি সাসপিশাস!’
তৃপ্ত: চেন্নাইয়ে বাজিমাত করে ধোনি।
ছবি: উৎপল সরকার
৫৮ বলে ১১৩! সেঞ্চুরির পর মুরলী।
ছবি: উৎপল সরকার
রহস্যের এতেই শেষ নয়। ইরফান পাঠান কেন ডাগ আউটে রইলেন, ধোঁয়াশা। ২২২ তাড়া করতে গিয়ে বীরু কেন তিন নম্বরে, মাথা খুঁড়েও যুক্তি পাওয়া দুঃসাধ্য। মুরলী বিজয়ের মারা বিশাল ছয়গুলোর মতোই বিশাল প্রশ্নচিহ্ন সানি গুপ্তকে নিয়ে। কে সানি গুপ্ত? খায় না মাথায় দেয়? এই ম্যাচে তাঁকে দিয়ে বোলিং শুরু করানোর ঝুঁকি নেওয়ার পরে দিল্লি সমর্থকরা সহবাগের মগজধোলাইয়ের দাবি তুললে তাঁদের দোষ দেওয়া যাবে না। দিল্লির সাংবাদিকদের কাউকে কাউকে তো মুখ টিপে হাসতে দেখলাম। জীবনে প্রথম আইপিএল ম্যাচ খেললেন সানি। তকের্র খাতিরে ধরে নিলাম ফাটকা খলতে গিয়েছিলেন সহবাগ। কিন্তু ফাটকা কাজে না লেগে প্রথম ওভারে ১২ দেওয়ার পরেও তো সানি পেয়েছেন আরও দু’ওভার। বোলিং গড় ৩-০-৪৭-০।
এক কথায় রহস্যময় এবং কোনও ক্রিকেটীয় আইকিউয়ের বাইরে দিল্লির দল নির্বাচন। আরও আশ্চর্যের, প্রতিপক্ষ ২২২ রানের প্রায় অনতিক্রম্য এভারেস্টে চড়ে বসেছে দেখেও দিল্লি ইনিংসের শুরুতে ওপেনার হিসেবে ওয়ার্নারের সঙ্গী কি না মাহেলা জয়বর্ধনে! ওয়ার্নারের সঙ্গে মাহেলাকে নামতে দেখে প্রেসবক্সে রসিকতা, “বীরুর নির্ঘাত মাথাটা খারাপ হয়ে গিয়েছে!’’ তিন নম্বরে সেই নামতেই হল এবং মাইক হাসির অসাধারণ ক্যাচে বীরু যখন ডাগ আউটের রাস্তায়, ধোনিকে ধরল ক্যামেরা। আবেগ আর লুকনো যাচ্ছে না, মুখে একেবারে ‘থার্টি টু অল আউট’ মার্কা হাসি। ততক্ষণে ক্লাস ফাইভের বাচ্চাও বলে দেবে, ম্যাচ কার।
টস জিতেই বা সহবাগ ব্যাটিং নিলেন কেন, তা নিয়েও নেটওয়ার্কিং সাইটে তুমুল বিতর্ক। একে চেন্নাইয়ের উইকেট যত সময় যাবে, তত স্লো হয়ে যাওয়ার কথা। তার পরে কেউ টস জিতে ফিল্ডিং নেয়? তার উপর ওই বোলিং। এক কথায় দিল্লির বোলিংকে বোঝাতে লিখতে হয়, “এমন বোলিং কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি!” মনের সুখে বলের চামড়া তোলার কাজটা করছিলেন মুরলী বিজয়। নিখুঁত, নিয়ন্ত্রিত খুনখারাপি ব্যাটিং। আইপিএলে শুরুর দিকে রান পাননি, এক সময় টিম থেকে বাদই পড়ে যাচ্ছিলেন। ৫৮ বলে ১১৫ রানের ইনিংসে ১৫টা চার, চারটে ছক্কা। চার নম্বরে নেমে হেলিকপ্টার শটের দেখনদারি শুরু করেছিলেন ধোনিও। সহবাগের ভাগ্য ভাল, ১৭ নম্বর ওভারে ১০ বলে ২৩ করা ধোনিকে ফেরান বরুণ অ্যারন। নয়তো ২২২-এর বদলে স্কোর ২৫০-ও হতে পারত। দিল্লি ব্যাটিং নিয়ে নিউজপ্রিন্ট নষ্ট করার কোনও মানে হয় না। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে যারা ৮৬ রানে হারে, তারা কী করে লিগ তালিকায় এক নম্বরে ছিল, তা নিয়েই গবেষণা হতে পারে।
সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে আইপিএলে। খাদের কিনারা থেকে প্রবল ‘প্রত্যাবর্তন’-এর ট্র্যাডিশন। সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে আইপিএল-এ। নিজেরা ছিটকে যেতে যেতেও শেষমেশ অন্যকে ছিটকে দেওয়ার ইতিহাস। ট্র্যাডিশন বলুন বা ইতিহাস, ধোনির চেন্নাই দু’টোই অব্যাহত রেখে আবার ফাইনালে। সব হিসেব তছনছ করে। অন্যতম ফেভারিট দিল্লিকে দুমড়ে দিয়ে। ফাইনালের মঞ্চ প্রস্তুত। গম্ভীর-গর্জন বনাম ধোনি-ধমাকা!

সহবাগের ব্যাখ্যা না মেলা তিন সিদ্ধান্ত
১. মর্নি মর্কেলকে দলে না নেওয়া
২. ওপেন না করে নিজের তিন নম্বরে নামা
৩. টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়া
অধরা কাপ। আউট হয়ে ফিরছেন দিল্লি
অধিনায়ক। ছবি: উৎপল সরকার

চিপকে চেন্নাই-রাজ
• আইপিএলে এই নিয়ে চার বার ফাইনালে চেন্নাই। চ্যাম্পিয়ন দু’বার।
• ঘরের মাঠে সিএসকে-র রেকর্ড দুর্দান্ত। ২০১১ সালের গ্রুপ লিগে চিপকে সাতে সাত। ফাইনালে হারায় গেইলদের আরসিবিকে। নিজেদের দুর্গে আজ পর্যন্ত দুই-তৃতীয়াংশ ম্যাচ জিতেছে ধোনির চেন্নাই। খেলেছে ৩১ ম্যাচ। জিতেছে ২১টিতে।
• আইপিএলের পাঁচ বছরে মুখোমুখি যুদ্ধে কেকেআরের দ্বিগুণ ম্যাচ জিতেছে চেন্নাই। ন’বারের সাক্ষাতে নাইটরা জিতেছে ৩ বার, ধোনিরা ৬ বার।
• চিপকে কেকেআরের বিরুদ্ধে ধোনিদের জয়-হারের অনুপাত ৩:১।


পুজোর আগে ইডেনে আবার কেকেআর
আইপিএল ফাইভের ফাইনাল ইডেনে হচ্ছে না বলে যাঁদের আফশোস যাচ্ছে না, তাঁদের জন্য প্রাক-পুজো উপহার অপেক্ষা করছে। অক্টোবরে পুজোর আগে ইডেনে ফের কেকেআর! এবং শাহরুখ খান। চলতি বছরের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কেকেআরের গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলি হওয়ার কথা ইডেনে। একই সঙ্গে ইডেন পাচ্ছে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও। আগামী ১০ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। কিন্তু মাঝে পুজো (২০-২৫ অক্টোবর) পড়ে যাওয়ায় ওই সময় ম্যাচ ফেলা সম্ভব হচ্ছে না ইডেনে। প্রয়োজনীয় পুলিশি অনুমতি পাওয়া যাবে না বলে। চূড়ান্ত সূচি ঠিক হবে ২৮ মে। কিন্তু শুক্রবার চেন্নাইয়ে বোর্ডের বৈঠকের পর জানা গেল, নাইটদের ম্যাচ ফেলা হবে পুজোর আগে। সম্ভাব্য তারিখ--১৩, ১৫ ও ১৭ অক্টোবর। বৈঠকে আইপিএল সিইও সুন্দর রামনের কাছে সিএবি তেমনই দাবি পেশ করেছে। মনে করা হচ্ছে, ওই সময় শহরে পুজোর আমেজ থাকবে। লোকে টিকিট কেটে কেকেআরের ম্যাচ দেখতেও আসবে। যদিও ফাইনাল আয়োজন করা যাচ্ছে না। কারণ, দুর্গাপুজোর বিসর্জন-পর্ব চলবে বলে পুলিশি অনুমতি পাওয়া যাবে না। কিন্তু ইডেনে থাকছে জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। ’৮৭-র বিশ্বকাপ, ’৯৩-এর হিরো কাপ এবং ’৯৬-এর বিশ্বকাপ ছাড়া আজ পর্যন্ত বড় মাপের কোনও টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখেনি ইডেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যা দেখা যাবে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.