দেবু-ঋদ্ধি যুযুধান, তাতছে শহর
ক জন নিয়মিত খেলছেন। অধিনায়কের আস্থা জিতে হয়ে উঠেছেন প্রিয় ‘দাসি’। অন্য জন এখন দলে নিয়মিত নন। তবে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করে ইতিমধ্যে শহরের নয়নমনি। আগামী রবিবার আইপিএল ৫-এর ফাইনালে যুযুধান দুই দলে শিলিগুড়ির দুই ছেলে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রথম একাদশে দেবব্রত দাসের থাকা প্রায় নিশ্চিত হলেও চেন্নাই সুপার কিংসের জার্সি গায়ে ঋদ্ধিমান সাহার মাঠে থাকার সম্ভাবনা কম। তবে সে দিন ফল যা-ই হোক, ‘ভিকট্রি ল্যাপ’-এ শিলিগুড়ির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত।
শিলিগুড়িতে অগ্রগামী ক্লাবে একই কোচের অধীনে খেলে বড় হয়েছেন দু’জনেই। পুজোর মণ্ডপে দু’জনকে এখনও এক সঙ্গে আড্ডা মারতেও দেখা যায় তাঁদের। বাড়ি ফিরলে ক্লাবে অনুশীলন করেন দু’জনেই। কলকাতা আগেই ফাইনালে পৌঁছেছিল। শুক্রবার রাতে চেন্নাই ফাইনালে ওঠার পরে ঋদ্ধি-দেবব্রতর কোচ জয়ন্ত ভৌমিক বলেন, “দেবব্রত যে ভাবে খেলছে তাতে প্রথম একাদশে থাকবেই। ব্যাটিং-ফিল্ডিং, দু’টোই ভাল করছে। ফাইনালেও ভাল কিছু করে দেখাবে, এই আশায় রয়েছি। তবে ঋদ্ধি যদি সুযোগ পায়, আমি নিশ্চিত, বরাবরের মতো এ বারও নিজেকে প্রমাণ করবে।”
শিলিগুড়ির উত্তর ভারতনগরের বাসিন্দা দেবব্রতকে নিয়ে তাঁর পাড়ার ক্লাব তরুণতীর্থের সদস্যেরা উত্তেজনায় ফুটছেন। কেকেআরের খেলা থাকলেই ক্লাবের সদস্যেরা দল বেঁধে খেলা দেখছেন, হুল্লোড় করছেন। ফাইনালে ওঠার ম্যাচেও দিল্লির রস টেলরের ক্যাচ দেবব্রত ধরতেই উল্লাসে ফেটে পড়েছে গোটা পাড়া। কেকেআরের হয়ে তাঁর খেলায় খুশি অধিনায়ক গৌতম গম্ভীরও। একটি ম্যাচে তাঁর পাওয়া ম্যান অব দ্য ম্যাচের সম্মান দেবব্রতের হাতে তুলে দেন। হালফিল দেবব্রতকে নিয়েই তাই শহরবাসীর উৎসাহ তুঙ্গে।
শিলিগুড়িতে দেবব্রতের বাড়িতে এখন শুধু রয়েছেন তাঁর বাবা বৈদ্যবাবু। মা প্রীতিকণা দেবী ছেলের সঙ্গে কলকাতায় দক্ষিণেশ্বরের বাড়িতে থাকেন। পূর্ত বিভাগের কর্মী বৈদ্যবাবুই ছোটবেলা থেকে ছেলেকে ক্রিকেটে উৎসাহ দিয়ে এসেছেন। তিনি জানালেন, ছোটবেলায় প্লাস্টিকের ব্যাট কিনে দিয়েছিলেন ছেলেকে। আর বল করতেন তিনি নিজেই। শৈশবে দেবব্রতের ব্যাকফুটে গিয়ে ব্যাট করা দেখেই তিনি প্রথমে অবাক হয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “এ সব দেখে ওঁকে অগ্রগামী সঙ্ঘে অনুশীলনের জন্য নিয়ে যাই। তখন দেবব্রতের বয়স ৬ বছর। খেলার জন্য পঞ্চম শ্রেণিতে উঠলে দেবব্রতকে ভর্তি করানো হয় ক্লাবের কাছাকাছি একটি স্কুলে। স্কুল ছুটি হলে সেখান থেকে সহজে ক্লাবের অনুশীলনে চলে যেত দেবব্রত। অনুশীলন সেরে বাড়ি ফিরত রাত ৭টায়।” ছেলের খেলা নিয়ে তাঁর অফিসের লোকজনও বেশ উৎসাহী, জানালেন বৈদ্যবাবু। অনূর্ধ্ব ১৩ বাংলা দলে দেবব্রত সুযোগ পাওয়ায় বৈদ্যবাবু তার খেলার জন্য কলকাতায় থাকার বন্দোবস্ত করেন। প্রথমে বেলগাছিয়া ক্লাবের হয়ে খেলতেন দেবব্রত। প্রথম ডিভিশন ক্রিকেট লিগ তাদের হয়ে খেলার পর চলে যান শ্যামবাজার ক্লাবে। বছর তিনেক সেখানে খেলেছেন। এর পরে গত পাঁচ বছর ধরে খেলেছেন মোহনবাগানে। অনূর্ধ্ব ১৭ এবং অনূর্ধ্ব ১৯ বাংলা দলের হয়ে খেলে দু’বছর সিএবি-র বর্ষষেরা ক্রিকেটার হয়েছেন। খেলেছেন অ্যাফ্রো এশিয়া কাপে অনূধ্ব ১৯ ভারতীয় দলে। সুযোগ পান অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট দলেও। নজরে পড়ার মতো পারফরম্যান্স দেখে ডাক পান আইপিএলে। মাঝে দু’বার আইপিএল খেলতে না পারলেও এ বার ফের নজর কাড়েন সকলের। পাড়ার ক্লাব তরুণতীর্থের কর্মকর্তা মৈনাক তালুকদার বলেন, “দেবব্রত আমাদের গর্ব। শিলিগুড়ি ফিরলেই আমরা ক্লাবের তরফে ওঁকে সংবর্ধনা দেব। রবিবার ফাইনালে ওঁর খেলা দেখতে আমরা সবাই মুখিয়ে আছি। নিজে ভাল খেলে দলকে ও জেতাবে বলে আমরা আশাবাদী।”
কলকাতার দলের হয়ে খেলায় এখনও পর্যন্ত শহরবাসীর বেশি সমর্থন পেয়েছেন দেবব্রতই। তবে ঋদ্ধির উপরেও তাঁদের অগাধ আস্থা। শিলিগুড়ির শক্তিগড়ে তাঁর ক্লাব শৈলেন্দ্র স্মৃতি পাঠাগার ও ক্লাবের কর্মকর্তা গৌতম সরকার বলেন, “যদি প্রথম একাদশে থাকে, তবে নিশ্চয়ই নিজেকে প্রমাণ করবে।”
কলকাতা বা চেন্নাই যে শহরই জিতুক, রবিবাসরীয় রাতে যে শিলিগুড়ি জিতছেই তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.