রাজনীতির সবুজ বাতিতে বিরক্ত শহরবাসী
ছিল সাদা। বদলে এখন লাগানো হচ্ছে সবুজ টিউবলাইট। পথবাতিতেও ‘পরিবর্তন’! পথচারীর ধাঁধাই লাগুক, আর যদি কিছু ঠাওরও না হয়কী আর এসে যায়! সবুজ যে শাসকদলের রং। পরিষেবার বেলায় যতই পিছিয়ে পড়ুন, মেদিনীপুরের পুর-কর্তৃপক্ষ তাঁদের শাসক-সত্ত্বায় রাঙিয়েই ছাড়বেন নাগরিকদের। এমনই নাছোড়বান্দা।
তবে, নাগরিক-সমাজ তো আর পুরো শাসকের তাঁবে থাকে না। রাস্তার আলোর এই সবুজায়ন নিয়ে তাই শুরু হয়েছে চাপানউতোর। শহরবাসীর গরিষ্ঠ অংশের বক্তব্য, সাদা আলোয় পথ চলতে সুবিধা হয়। সবুজ আলো উজ্জ্বল নয়, চোখে ধাঁধাও লাগে। এর ফলে সমস্যা বাড়ে। সমস্যা হচ্ছেও। মেদিনীপুরের পুরপ্রধান প্রণব বসুর অবশ্য বক্তব্য, “এক কাউন্সিলর তাঁর নিজের ওয়ার্ডে কয়েকটি সবুজ টিউবলাইট লাগিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আমি আর কী করতে পারি!” আপাতত, শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে সবুজ টিউবলাইট লাগানো হচ্ছে। এই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শ্যামল ভকত আবার পুরসভার আলো-বিভাগেরও দায়িত্বে রয়েছেন। নির্বিকার শ্যামল বলেন, “এই নিয়ে হইচইয়ের কী আছে! রাস্তার ধারে সুবজ আলো থাকলে দেখতে ভাল লাগে। তাই লাগিয়েছি!” এ প্রসঙ্গে প্রাক্তন পুরপ্রধান নাজিম আহমেদের টিপ্পনি, “শহরে সবুজায়ন হচ্ছে! আসলে মুখ্যমন্ত্রী সবুজায়ন করতে বলেছেন। এখানে তো গাছপালা লাগানো হচ্ছে না। তাই শহরকে সবুজ রংয়ে ঢাকার চেষ্টা চলছে। ধন্য এই পরিবর্তন!” আর পুরসভার বিরোধী দলনেতা, সিপিএম কাউন্সিলর গোপাল ভট্টাচার্যের মন্তব্য, “যা মনে হচ্ছে, তাই করছে। কে কী বলবে! শহরবাসীর সুবিধা-অসুবিধার কথা কী পুরসভা ভাবছে? ভাবলে এটা হত না।”
নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন, শহরগুলিকে সুন্দর ভাবে সাজাতে। প্রশাসনের পাশাপাশি এ কাজে সামিল হয়েছে মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদ, মেদিনীপুর পুরসভাও। মেদিনীপুর শহর জুড়ে নানা সমস্যা রয়েছে। প্রায়ই যেখানে-সেখানে আবর্জনার পাহাড় জমে থাকে। বহু জায়গায় রাস্তাও বেহাল। এই সব সমস্যা দূর করে শহর সাজানোর নানা পরিকল্পনার কথাই নানা সময়ে শোনা যায়। সিদ্ধান্ত হয়েছিল, কাঁসাই নদীর উপর সেতুতে আলো লাগানো হবে। মেদিনীপুর শহর সাজানোর জন্য রাস্তা সম্প্রসারণ, কয়েকটি রাস্তা ওয়ান-ওয়ে করে ডিভাইডার দেওয়া, গাছ লাগানো, পার্ক সংস্কার, রাস্তায় পর্যাপ্ত আলো লাগানোর প্রস্তাব রয়েছে। ইতিমধ্যেই শহরের ডিভাইডার, শহিদ মূর্তির চারপাশ, রিং রোডের রেলিংয়ে নতুন রং পড়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও শুরুতে বির্তক দেখা দিয়েছিল। আগে শহরের ডিভাইডারগুলিতে সাদা-কালো কিংবা হলুদ-কালো রং করা ছিল। কিন্তু, রাজ্যে পালাবদলের পর সাদা-সবুজ রং করা শুরু হয়। ডিভাইডারে কেন সবুজ রং থাকবে, সেই নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পরে ফের সাদা-সবুজ রংয়ের উপর সাদা-কালো রং দেওয়া হয়। এমনিতেই এখন সরকারের কোষাগারে সঙ্কট। তার উপর এ ভাবে দু’বার রং করে সরকারি অর্থের অপচয়ে একাংশ শহরবাসী ক্ষুব্ধ হন।
সম্প্রতি আবার মেদিনীপুর পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় সবুজ টিউবলাইট লাগানো হয়েছে। পুরসভা সূত্রে খবর, ৫০টি সবুজ টিউবলাইট এসেছে। এর মধ্যে ২৫টি লাগানো হয়েছে। আলো বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর তাঁর নিজের ওয়ার্ডেই এই বিচিত্র বাতি লাগিয়েছেন। পথচলতি মানুষের সুবিধার জন্যই রাস্তার পাশে আলো লাগানো হয়। কিন্তু, সবুজ টিউবলাইট লাগানোর ফলে পথচলতি মানুষ সমস্যায় পড়ছেন। রাস্তায় সে ভাবে আলোই হচ্ছে না। ৫ নম্বর ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা, গৃহবধূ রমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সাদা আলো থাকলেই সুবিধা হয়।” আরেক বাসিন্দা চৈতালি সরকার বলেন, “রাস্তার ধারে সবুজ আলো লাগানো হবে কেন, তাই তো বুঝতে পারছি না।” শ্যামল অবশ্য বলেন, “কয়েকটি জায়গায় লাগিয়েছি। এর ফলে পথচলতি মানুষের সমস্যা হচ্ছে বলে শুনিনি। কেউ সমস্যার কথা বলেনওনি।” তা হলে কী এ বার শহরের অন্যান্য ওয়ার্ডেও সবুজের অভিযান শুরু হবে? তৃণমূল কাউন্সিলরের মন্তব্য, “পুরপ্রধান বললে লাগানো হবে!” পুরপ্রধান অবশ্য এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন। তাঁর কথায়, “উৎসব-অনুষ্ঠান উদ্যাপনে নানা রংয়ের আলো লাগানো যেতেই পারে। এই যেমন আমাদের সরকারের বর্ষপূর্তি হল। শহরের মূর্তিগুলোর চারপাশেও সবুজ আলো লাগানো হয়েছিল। কিন্তু, স্থায়ী ভাবে সবুজ আলো লাগানো হলে পথচলতি মানুষের সমস্যা হবে।” রাজ্যের অন্য পুর-শহরের মতো মেদিনীপুরেও মুখ্যমন্ত্রীর মন-মতো ত্রিফলা (ট্রাইড্যান্ট) বাতিস্তম্ভ লাগানো হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৫৪টি স্তম্ভ বসানো হয়েছে। দেখভালের অভাবে স্তম্ভ থেকে বাতি চুরিও শুরু হয়ে গিয়েছে। সরকারের কোষাগার যখন ‘বেহাল’, তখন স্রেফ সৌন্দর্যায়ন করতে গিয়ে এমন বাতিস্তম্ভ লাগানোরই বা কী প্রয়োজন ছিল, সেই প্রশ্নও উঠেছে। এর ফলে পুরসভাকে বাড়তি বিদ্যুৎ-বিলও দিতে হচ্ছে। তার উপরে সবুজ টিউবলাইট লাগানো শুরু হতেই শহরে প্রতিবাদ উঠেছে। কংগ্রেস কাউন্সিলর সুনন্দা খান অবশ্য বলেন, “রাস্তার পাশে সবুজ টিউবলাইট লাগানো অনুচিত। সাদা আলো থাকলেই পথ চলতে সুবিধা হয়।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.