‘তিক্ততা’ গড়াল থানা-পুলিশ পর্যন্ত। অভিজ্ঞান-ঐশ্বর্যার মা সাগরিকা ও বাবা অনুরূপ ভট্টাচার্যের পরিবার পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছে।
শ্বশুরবাড়ির লোকজন শিশু দু’টিকে দেখতে পর্যন্ত দিচ্ছে না বলে প্রথমে বর্ধমানের কুলটি থানায় অভিযোগ করেছিলেন সাগরিকা। এ বার অনুরূপের বাবা অজয় ভট্টাচার্য তাঁর বৌমার আচরণ নিয়ে পাল্টা অভিযোগ করলেন। শিশু দু’টিকে কেউ জবরদস্তি ধরে নিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে পুলিশের কাছে নিরাপত্তাও চেয়েছেন তিনি।
নরওয়ে থেকে ফেরার পরে অভিজ্ঞান-ঐশ্বর্যা কুলটিতে অজয়বাবুদের বাড়িতেই রয়েছে। সেখানে কাকা অরুণাভাস ভট্টাচার্য, অজয়বাবু ও তাঁর স্ত্রী (ঠাকুরদা-ঠাকুমা) থাকেন। নরওয়ের আদালতের নির্দেশে শিশু দু’টিকে তাদের কাকা অরুণাভাসের কাছে রাখা হয়েছে। কিন্তু শিশু দু’টির ভবিষ্যতের উপরে ছায়া ফেলছে মা-বাবার সম্পর্কের তিক্ততা।
শিশু দু’টিকে কাছে না-পেয়ে সাগরিকা ও তাঁর বাবা মনোতোষবাবু ‘অভব্য’ ব্যবহার করেছেন বলে অভিজ্ঞান-ঐশ্বর্যার ঠাকুরদা অজয়বাবু এ দিন অভিযোগ করেছেন। কুলটি থানায় নথিভুক্ত জেনারেল ডায়েরিতে (নম্বর ১২৫) তিনি জানিয়েছেন, নরওয়ে ও ভারত সরকারের চুক্তি অনুযায়ী, তাঁদের বাড়িতেই (যেখানে শিশু দু’টির কাকা অরুণাভাস থাকেন) অভিজ্ঞান-ঐশ্বর্যার থাকার কথা। তাই ওই বাচ্চাদের মায়ের কাছে রাখা যাবে না। সাগরিকা তাঁদের বাড়িতে বাচ্চাদের দেখতে এলেও তিনি যেন পুলিশকে খবর দিয়ে আসেন বলে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন অজয়বাবু।
কেন? পুলিশের কাছে অজয়বাবুর অভিযোগ, “সাগরিকাদের সঙ্গে কিছু অপরিচিত লোকজন বাড়িতে ঢুকে ভয় দেখাচ্ছেন। এরা বাচ্চাদের ক্ষতি করতে পারে।” বাচ্চাদের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ-পাহারারও আর্জি জানিয়েছেন অজয়বাবু। |
গত বুধবার সন্ধ্যায় কুলটির বাড়িতে শিশু দু’টিকে দেখতে গিয়েছিলেন সাগরিকার বাবা মনোতোষবাবু ও তাঁর পরিচিত কয়েক জন। বৃহস্পতিবার সকালে সেখানে গিয়েছিলেন সাগরিকা। ঠিক কী ঘটেছিল তখন? এ ব্যাপারে সাগরিকা ও তাঁর শ্বশুরমশাইয়ের বক্তব্য পরস্পর-বিরোধী।
সাগরিকা বলছেন, “বৃহস্পতিবার দুপুরে ওখানে গিয়ে আধ ঘণ্টা দরজা ধাক্কাধাক্কি করেও ঢুকতে পারিনি। কিছু লোক এসে হুমকি দিয়ে চলে যেতে বলে। পরে পুলিশের সাহায্য নিয়ে ঢুকি। ওঁদের ব্যবহারে বেশিক্ষণ থাকতে পারিনি। কয়েক মিনিট বাচ্চা দু’টোকে একটু দেখতে পেয়েছি।”
সাগরিকার শ্বশুরমশাই অজয়বাবুর বক্তব্য, “বুধবার সন্ধ্যায় মনোতোষবাবু দলবল নিয়ে এসে আমাদের গালিগালাজ করে গিয়েছেন। বৌমা পরের দিন না-জানিয়ে এসেছিল। তখন আমি পুজো করছিলাম, আমার স্ত্রী স্নানে গিয়েছেন। দরজা খুলতে একটু দেরি হলেও বৌমাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পুরো মিথ্যে।” তাঁর দাবি, “বাচ্চারা মায়ের কাছে যেতেই চায়নি।” দু’টি পরিবারই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলছে, বাচ্চা দু’টিকে একসঙ্গে বড় করার কথা কেউ ভাবছে না।
স্ট্যাভাঙ্গার থেকে টেলিফোনে অনুরূপ এ দিন বলেন, “সাগরিকার জন্যই অভিজ্ঞান-ঐশ্বর্যা আমাদের কাছছাড়া হয়। নরওয়ের শিশুকল্যাণ ও স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত আধিকারিকদের রিপোর্টেও মায়ের ধৈর্য ও মানসিক সুস্থিতির অভাবের কথা বলা হয়েছে।” ফেসবুকে সাগরিকাও তাঁর যন্ত্রণার কথা লিখেছেন। তিনি লেখেন, নরওয়ের স্বাস্থ্য-কর্তাদের ‘ভুল বোঝাবুঝি’র ফলে কিছু সমস্যা হয়। অনুরূপও সন্তানদের দেখভালে তাঁকে ঠিকঠাক সহযোগিতা করতেন না বলে সাগরিকার দাবি।
অভিজ্ঞান-ঐশ্বর্যাকে দেশে ফেরাতে হস্তক্ষেপ করেছিল ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক। মন্ত্রকের মুখপাত্র শুক্রবার বলেন, “নরওয়েতে ওই দম্পতিকে সাহায্য করা আমাদের কাজ ছিল। শিশু দু’টিকে দেশে ফেরাতে আমরা সাহায্য করেছি। নরওয়ের আদালত শিশু দু’টি তাদের কাকার কাছে থাকবে বলে জানিয়েছিল।” কিন্তু সাগরিকার প্রশ্ন, নরওয়ের আদালতের নির্দেশ এ দেশে গ্রাহ্য হবে কী ভাবে? বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, এ দেশের আইন বিভাগ বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। |