|
|
|
|
কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ |
জমি কেনার ছাড়পত্র দেয়নি
রাজ্য, বাড়ছে জটিলতা
সৌমেন দত্ত • কাটোয়া |
|
|
কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে দু’মাস আগেই এনটিপিসি-কে আনুষ্ঠানিক ভাবে দায়িত্ব দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ মন্ত্রিসভা। অথচ ওই প্রকল্পের জন্য জমি কেনার ‘ছাড়পত্র’ সরকার তাদের এখনও দেয়নি। ফলে পরিস্থিতি দিন দিন ঘোরালো হচ্ছে।
বর্ধমানের কাটোয়ায় প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গড়তে রাজ্যের পূর্বতন বাম সরকার ৫৫৬ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল। ওই জমি আপাতত রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের (পিডিসিএল) হাতে। এনটিপিসি’কে তা হস্তান্তর করার কথা। তা-ও বাকি। প্রকল্প রূপায়ণের জন্য অধিগৃহীত জমি ছাড়াও অন্তত পাঁচশো একর প্রয়োজন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করবে না বলে এনটিপিসি’কে সরাসরি চাষিদের থেকে জমি কিনতে হবে। অথচ মহাকরণ থেকে ছাড়পত্র না-মেলায় এনটিপিসি এখনও সে কাজে হাতই দিতে পারেনি।
কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণভার এনটিপিসি’কে দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজ্য মন্ত্রিসভা নিয়েছিল গত ১৮ মার্চ। ২৭ মার্চ বিদ্যুৎ দফতরের যুগ্মসচিব কেন্দ্রকে তা জানিয়েও দেন। কথা ছিল, এনটিপিসি তখনই জমি কিনতে নেমে পড়বে। কিন্তু তা হয়নি। কেননা ভূমিসংস্কার আইন অনুযায়ী রাজ্যে বলবৎ ঊর্ধ্বসীমার (২৪.২২ একর) বেশি জমি কিনতে গেলে সরকারের অনুমতি লাগে। আনুষ্ঠানিক ভাবে দায়িত্ব পাওয়ার আগেই, ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ওই অনুমতি চেয়ে আইনের ১৪ (ওয়াই) ধারায় আবেদন করেছিল এনটিপিসি।
আর তার পরে সরকারের তরফে সংস্থাকে চিঠি দিয়ে সামান্য কিছু তথ্য জানতে চাওয়া হয়। আর কিছু নয়। ছাড়পত্রের ফাইল এখনও সরকারের ঘরেই পড়ে আছে। এক এনটিপিসি-কর্তার কথায়, “আমরা সব দিক দিয়ে তৈরি। সরকারি ছাড়পত্র পেলেই জমি কিনতে নামব।” কিন্তু সেটাই হাতে না-আসায় জমি কেনার প্রস্তাব দিয়ে তাঁরা চাষিদের চিঠিও পাঠাতে পারছেন না।
এবং এই বিলম্বের ফলে অন্তত তিন দিক থেকে নতুন করে সমস্যা তৈরি হচ্ছে বলে এনটিপিসি-কর্তারা মনে করছেন। সেগুলো কী?
প্রথমত, সামনেই খরিফ মরসুম। প্রস্তাবিত জমিতে এক বার ধান চাষ শুরু হয়ে গেলে তা না-কাটা পর্যন্ত চাষিরা জমি দিতে চাইবেন না। সে ক্ষেত্রে পুজোর পর পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় থাকবে না। দ্বিতীয়ত, পিডিসিএলের হাতে থাকা অধিগৃহীত জমির পুরোটা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা নেই। রাত-বিরেতে ট্র্যাক্টর ঢুকিয়ে জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় কিছু লোক। জমি হস্তান্তর না-হওয়ায় এনটিপিসি আইনি ব্যবস্থা নিতে পারছে না। তৃতীয় এবং সবচেয়ে গুরুতর বিপদ, এলাকায় জমি নিয়ে ফাটকাবাজির চেষ্টা। সেটা কী রকম?
স্থানীয় সূত্রের খবর: তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে গোটা তল্লাটে জমির দর বেড়ে যাবে বুঝে কিছু সংস্থা বেশি দামে প্রকল্প এলাকার আশপাশে জমি কেনার চেষ্টা শুরু করেছে। ফলে সরকারি দর নিয়ে নতুন করে জটিলতা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। কাটোয়া শহরঘেঁষা জাজিগ্রামের বাসিন্দা গোলোকবিহারী ঘোষ বলেন, “একটি সংস্থার প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে আমার কাছে ক’জন এসেছিলেন। প্রকল্প-এলাকার বাইরের জমির জন্য তাঁরা কাঠাপিছু ৭০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা দিতে রাজি।”
গোলোকবাবুর মতো অনেক জমি-মালিকেরই দাবি, মাসখানেক ধরে ওখানে এমন বেশ কিছু লোকের আনাগোনা চলছে। উল্লেখ্য, এখনই প্রকল্পের জমি কিনতে নামলে কাঠায় বড় জোর ৫৫-৬০ হাজার টাকা (আগে পিডিসিএল যে দরে জমি নিয়েছে, তার সঙ্গে সুদ যোগ করে) দিতে পারে এনটিপিসি। ফলে দাম নিয়ে দরাদরির সম্ভাবনা থাকছে। যেমন, গোলোকবাবুর প্রতিবেশী মৃত্যুঞ্জয় মাজির জমি রয়েছে প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকার ভিতরে। তিনি বলছেন, “কিছু সংস্থা জমির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। ব্যক্তিগত কারণে আমায় কিছু জমি কিনতে হবে। প্রতি কাঠায় ৭০ হাজার টাকা দর চাইছে। সে ক্ষেত্রে প্রকল্প এলাকার ভিতরে বেশি দাম চাইব না কেন?”
একই বক্তব্য স্থানীয় জমি-মালিক তাপস মাঝি, সুকুমার সাহা, রঘুনাথ ঘোষদেরও। তাঁদের প্রশ্ন, বেসরকারি সংস্থা যদি বাজারদরের বেশি দিতে পারে, কেন্দ্রীয় ‘নবরত্ন’ সংস্থা তার চেয়ে বেশি দেবে না কেন?
সব মিলিয়ে যা পরিস্থিতি, তাতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাও চাইছেন, এনটিপিসি যত দ্রুত সম্ভব জমি কিনতে নামুক। রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকায় তৃণমূলের জেলা নেতারা প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি। তবে কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তাড়াতাড়ি জমি কেনা হলে চাষি এবং এনটিপিসি, উভয়েরই মঙ্গল।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অচিন্ত্য মল্লিকের আশঙ্কা, “দ্রুত জমি কেনা শুরু না-হলে হাওয়া অন্য রকম হয়ে যাবে।” |
|
|
|
|
|