রক্ত সংগ্রহ করার ‘ব্লাড-ব্যাগ’ সরবরাহ হচ্ছে না উত্তরবঙ্গের সরকারি হাসপাতালগুলির ব্লাডব্যাঙ্কে। তাই বিভিন্ন সংস্থার তরফে রক্ত সংগ্রহের জন্য শিবির করা হলেও সেই রক্ত সরকারি ব্লাডব্যাঙ্কগুলির একাংশ নিতে পারছে না। সোমবার শিলিগুড়িতে যুব কংগ্রেসের তরফে শিবির করে ৯০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হলেও মাত্র ৫০ ইউনিট শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংগ্রহ করতে পেরেছেন। ‘ব্লাড-ব্যাগ’-এর অভাবে বাকি রক্ত তারা সংগ্রহ করতে পারেননি। এমনিতেই উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের সঙ্কট চলছে। মজুত করা ‘ব্লাড-ব্যাগ’ এখনও যাদের সামান্য পড়ে রয়েছে তারা কিছু ক্ষেত্রে রক্ত সংগ্রহ করতে পারছেন। তবে পর্যাপ্ত ব্লাড-ব্যাগ অবিলম্বে সরবরাহ করা না হলে ব্লাডব্যাঙ্কগুলির পরিষেবা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে উত্তরবঙ্গ জুড়েই। পরিস্থিতির জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির আধিকারিকেরা। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালগুলির ব্লাডব্যাঙ্কে রক্ত সংগ্রহের জন্য ‘ব্লাড ব্যাগ’ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আঞ্চলিক ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে সরবরাহ করা হয়। দিন তিনেক আগেই তাদের মজুত করা ‘ব্লাড ব্যাগ’ সমস্ত ফুরিয়ে গিয়েছে। ওই আঞ্চলিক ব্লাড ব্যাঙ্কের আধিকর্তা মৃদুময় দাস পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। স্যাক্স (ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট এডস প্রিভেনশন অ্যান্ড কনট্রোল সোসাইটি)-এর তরফে উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক ব্লাড ব্যাঙ্কে সরবরাহ করা হয়। ব্লাড ব্যাগ সরবরাহ করতে সাক্সে আবেদন করার পদ্ধতি বদল হওয়ার জেরেই সমস্যা হয়েছে বলে দাবি করেন মৃদুময়বাবু। তিনি জানান, আগে কাগজে লিখিত ভাবে আবেদন করলেই ব্লাড ব্যাগ পাওয়া যেত। এখন কম্পিউটারে আবেদন করতে হয়। ওই কাজ করতে আমাদের আঞ্চলিক ব্লাড ব্যাঙ্কে পর্যাপ্ত কর্মী নেই। যাঁরা রয়েছেন তাদেরও যথাযথ প্রশিক্ষণ নেই। এতদিন ‘স্টোর কিপার’-ও ছিল না। সম্প্রতি একজন যোগ দিয়ে কোনও রকমে সামলাচ্ছেন। মৃদুময়বাবু বলেন, “গত ১৪ মে কম্পিউটার ব্যবস্থায় আবেদন করা হলেও চিঠির উপরে ভুলবশত উত্তরবঙ্গ আঞ্চলিক ব্লাড ব্যাঙ্ক না লেখায় আবেদনটি গ্রহণ করা হয়নি। এটা ভুল হয়েছিল। তবে তা আমাদের জানানো হয়নি। কেন ব্লাড ব্যাগ আসছে না বারবার জানতে চাইলেও পরিষ্কার করে কিছু জানানো হচ্ছিল না। সম্প্রতি তা জানতে পেরে জরুরিভিত্তিতে নতুন আবেদন করা হয়। ব্লাড-ব্যাগ না থাকায় মালদহ, শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে তা সরবরাহ করা যায়নি।” উত্তরবঙ্গ আঞ্চলিক ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সোমবার বিকালে ৭ হাজার ব্লাড-ব্যাগ এসে পৌঁছেছে। তবে এ দিন কোনও হাসপাতালে সরবরাহ করা যায়নি। তবে ওই পরিমাণও পর্যাপ্ত নয়। উত্তরবঙ্গে ১২টি ব্লাডব্যাঙ্কের জন্য বছরে অন্তত ১ লক্ষ ব্লাড-ব্যাগ দরকার হয়। সেই মতো ৩ মাস অন্তর প্রয়োজন ন্যুনতম ২৫ হাজার ব্লাড-ব্যাগ। এ দিন যে পরিমাণ ব্লাড-ব্যাগ এসেছে তা কয়েক দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। শীঘ্রই ২০ হাজারের মতো ব্লাড ব্যাগ না এলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ দিন শিলিগুড়ি যুব কংগ্রেসের তরফে রক্তের সঙ্কট মেটাতে রক্ত সংগ্রহের শিবির করে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত সরবরাহ করার কথা কর্তৃপক্ষকে আগাম জানানো হয়েছিল। যুব কংগ্রেসের শিলিগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের সভাপতি পিন্টু ঘোষ, ফাঁসিদেওয়া বিধানসভা কেন্দ্রের সভাপতি চন্দন রায় বলেন, “একদিকে রক্তের সঙ্কট চলছে বলে ব্লাড ব্যাঙ্কের থেকে জানানো হচ্ছে। বিভিন্ন সংগঠনের তরফে যখন রক্ত সংগ্রহের শিবির করা হচ্ছে তখন সেখান থেকে রক্ত সংগ্রহ করতেপারছেন না কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি দুর্ভাগ্যের।” শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের আধিকারি জয়িতা চক্রবর্তী বলেন, “ব্লাড-ব্যাগ না থাকার জন্যই আমরা সব রক্ত নিতে পারিনি। আবেদন, উদ্যোক্তারা যাতে ভুল না বোঝেন। ৫০টি ব্লাড ব্যাগ থাকায় সেই পরিমাণ রক্ত সংগ্রহ করেছি।” |