উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শল্য চিকিৎসার ‘সুপার স্পেশালিটি’ বিভাগ খুলতে উদ্যোগী কর্তৃপক্ষ। সোমবার ওই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালন সমিতির বৈঠকের পর এ কথা জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা পরিচালন সমিতির চেয়ারম্যান গৌতম দেব। ইতিমধ্যেই খসড়া পরিকল্পনা শিক্ষা স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কলকাতায় সংশ্লিষ্ট দফতরে কথা বলতেও যাবেন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অনুপ রায়, হাসপাতাল সুপার সব্যসাচী দাসরা। ওই বিভাগ গড়তে প্রায় ৭ কোটি টাকা খরচে নতুন একটি ভবন তৈরির পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। শিশু থেকে বয়স্ক বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে শল্য চিকিৎসার পরিষেবা এখানে মিলবে। ইনটেনসিভ থোরাসিক ইউনিট (আইটিইউ) খোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি ২৪ ঘন্টা খোলা রাখার জন্যও কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হয়েছেন। |
বৈঠকে গৌতম দেব। নিজস্ব চিত্র। |
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “শল্য চিকিৎসার সুপার স্পেশালিটি বিভাগ খোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সাধারণ অস্ত্রোপচার থেকে কার্ডিও থোরাসিক, নিউরো-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রোগীদের অস্ত্রোপচার করার পরিকাঠামো এখানে থাকবে। প্লাস্টিক সার্জারি, জটিল রোগের ক্ষেত্রে শিশুদের অস্ত্রোপচার করানো যাবে।” তিনি জানান, হাসপাতালের শয্যা ৫৯৯ টি থেকে বাড়িয়ে ৯১৭টি করার চেষ্টা হচ্ছে। তার জন্য বছরে ২৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হবে রাজ্য সরকারকে। আগামী ৩ মাসের মধ্যে ট্রমা সেন্টার, ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল চালু করতেও চেষ্টা করা হচ্ছে। শল্য চিকিৎসার জন্য প্রস্তাবিত ওই বিশেষ বিভাগ খোলার উদ্যোগের পাশাপাশি হাসপাতাল সাফসুতো রাখতে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে এ দিন মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের পরিচালন সমিতির বৈঠকে। বিভিন্ন ওয়ার্ড রং করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে নিয়মিত নজরদারিও করা হবে। হাসপাতাল চত্বরে গত এক বছরে দোকান, হোটেল-সহ প্রায় ১৭২ টি অস্থায়ী নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। সেগুলির ব্যাপারে পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে। গত এক বছরে গড়ে ওঠা ওই সমস্ত অবৈধ নির্মাণ সরিয়ে দিতে দুই এক দিনের মধ্যেই অভিযানে নামা হবে। অবৈধ নির্মাণ সরানোর ক্ষেত্রে কোন রাজনৈতিক রং দেখা হবে না। তবে পুরনো যে সমস্ত দোকান দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ে বৈঠকে বসা হবে। হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের অনেকে অবসরের পরও কোয়ার্টার আগলে রেখেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ব্যাপারে তাদের ২ বার নোটিস করে কোয়ার্টার খালি করতে বলা হয়েছে। তাতে একাংশ সরে গেলেও ৪৩টি কোয়ার্টার এখনও দখল করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। তা খালি করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিভিন্ন সেমিনার, সভার জন্য মেডিক্যাল কলেজে অন্তত ৫০০ জনের বসার সুবিধা যুক্ত ‘অডিটরিয়াম’ গড়ে তোলা হবে। নাম রাখা হবে গীতাঞ্জলী। এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল গড়ে তোলার সময় জমি অধিগ্রহণ করা হলেও হাসপাতালের নামে জমির ‘নামজারি’ এখনও হয়নি। শীঘ্রই ওই কাজ সেরে ফেলতে উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা। ডায়ালিসিস ইউনিট-এ শয্যা সংখ্যা ৬টি থেকে ১০ টি করা হবে। হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা পরিচালন সমিতির বৈঠকের পাশাপাশি এ দিন রোগী কল্যাণ সমিতিরও বৈঠক হয়। সিদ্ধান্ত হয়েছে, অর্থোপেডিক বিভাগের যন্ত্রাংশ কেনার পাশাপাশি প্রসূতি বিভাগ এবং মেডিসিন বিভাগে দুটি ‘মে আই হেল্প ইউ’ বুথ খোলা হবে। হাসপাতালের চিকিৎসা বর্জ্য নষ্ট করার ক্ষেত্রে বর্তমানে মাটি খুঁড়ে তা ফেলে দেওয়া হয়। বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ওই কাজ করতে চান কর্তৃপক্ষ। আজ, মঙ্গলবার থেকে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিরা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শনে আসছেন। |