আলট্রাসনোগ্রাফি-র রিপোর্টে জানা গিয়েছিল, প্রসূতির গর্ভেই মারা গিয়েছে তাঁর সন্তান। এরপরেই গাফিলতির অভিযোগ তুলে রেডিওলজিস্টকে মারধর করেন পূর্ণিমা গড়াই নামে ওন্দার আগড়দা গ্রামের বাসিন্দা ওই প্রসূতির বাড়ির লোকজন। হাসপাতালে ভাঙচুর চালানো হয়। রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সরকারি সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগে বধূর দুই আত্মীয়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম তারাপদ গড়াই ও গোপীনাথ গড়াই। তাঁরা বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়া এলাকার বাসিন্দা। সোমবার দু’জনকে বাঁকুড়া আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের ১৪ দিনের জেলহাজতে পাঠিয়েছেন। বাঁকুড়া পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।”
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শনিবার ন’মাসের অন্তঃসত্ত্বা পূর্ণিমাদেবীকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়েছিল। রবিবার সকালে তাঁর প্রথমবার আলট্রাসনোগ্রাফি হয়। রিপোর্টে শিশুটির কোনও সমস্যা ধরা পড়েনি। রাত্রে শিশুটির নড়াচড়া অনুভব না করায় পূর্ণিমাদেবী হইচই শুরু করেন। সে সময়ে তাঁকে ফের আলট্রাসনোগ্রাফি করানো হয়। ওই রিপোর্টে দেখা যায়, শিশুটি ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, রিপোর্ট পাওয়ার পরেই পূর্নিমাদেবীর আত্মীয়েরা রেডিওলজিস্টকে মারধর শুরু করেন। ‘সেপ্টিক ওয়ার্ড’-এর ‘আলট্রাসোনোগ্রাফি’ মেশিনের উপরে চড়াও হন তাঁরা। জানালার কাচ ভাঙা হয়। প্রসূতি বিভাগের চেয়ার-টেবিল তছনছ করে জনতা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে।
পূর্ণিমাদেবীর স্বামী শান্তিনাথ বলেন, “আমি বারবার সিজার করার কথা বললেও ডাক্তাররা শোনেননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই আমার সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই মারা গেল।” এ ব্যাপারে লিখিত কোনও অভিযোগ অবশ্য করেননি পূর্ণিমার বাড়ির লোকজন।
ঘটনা প্রসঙ্গে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের এক আধিকারিক বলেন, “সন্তান প্রসবের সম্ভাবনা দেখা দেওয়ার পরে নানা কারণে শিশু মৃত্যু ঘটতে পারে। ঠিক কী কারণে শিশুটি মারা গিয়েছে, তা পরীক্ষা করেই বোঝা যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে চিকিৎসায় গাফিলতি কোনও ভাবেই হয়নি।” ওই আধিকারিক আরও বলেন, “ওই প্রসূতীর আত্মীয়েরা উত্তেজিত হয়ে যে কাজ করেছেন, তার জেরে সরকারি সম্পত্তি নষ্টের পাশাপাশি ঘণ্টাখানেকের জন্য হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবাও ব্যাহত হয়েছে।” ঘটনার নিন্দা করে বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় বলেন, “রোগীর আত্মীয়েরা এই ভাবে মেজাজ হারিয়ে ফেললে মুশকিল। এই ঘটনায় স্বাস্থ্য পরিষেবা কিছু ক্ষণ বিঘ্নিত হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত তা সামলে নিয়েছেন।” |