মদন তামাংয়ের স্মরণসভায়
মোর্চা-বিরোধী জোটের ইঙ্গিত
তীতে গোর্খা লিগ নেতা মদন তামাংয়ের নেতৃত্বেই পাহাড়ে প্রথমে সুবাস ঘিসিং ও পরে বিমল গুরুঙ্গের দলের বিরুদ্ধে জোট গড়ে লড়াইয়ের সূচনা হয়। সেই মদনবাবুর স্মরণসভার মঞ্চ থেকেই ফের মোর্চা-বিরোধী জোট তৈরির ইঙ্গিত মিলল।
২০১০-এর ২১ মে দার্জিলিংয়ের ক্লাবসাইড রোডে সভা করার সময়ে খুন হন মদনবাবু। সোমবার সেই এলাকাতেই গোর্খা লিগ আয়োজিত স্মরণসভায় সিপিএম, সিপিআরএম, কংগ্রেস, গোর্খা রাষ্ট্রীয় কংগ্রেস, সিকিম-দার্জিলিং একতা মঞ্চ, গোর্খাল্যান্ড টাস্ক ফোর্স-সহ ৮টি দলের নেতা-কর্মীরা যোগ দেন। ওই মঞ্চ থেকে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য, সিপিএমের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার, প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ দাওয়া নরবুলার মতো অনেকেই ‘পাহাড়ে শান্তি, মত প্রকাশের অধিকার তথা গণতন্ত্র’ বজায় রাখতে ‘এক সঙ্গে পথ হাঁটা’র কথা ঘোষণা করেন। সব ঠিক থাকলে আগামী জুলাইয়ে ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) ভোট হওয়ার কথা। সেই প্রেক্ষাপটে মোর্চা-বিরোধী জোট তৈরির ইঙ্গিত বেশ ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন পাহাড়-সমতলের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে।
দার্জিলিঙে মদন তামাং-এর স্মরণসভায় অশোক ভট্টাচার্য ও জীবেশ সরকার। সোমবার। ছবি: রবিন রাই
প্রাক্তন পুরমন্ত্রীর বক্তব্য, “পাহাড়ের মানুষ যে আবেগ সামনে রেখে আন্দোলন করছেন, তাকে আমরা মর্যাদা দিই। পাহাড়ের উন্নয়ন, শান্তি, মত প্রকাশের অধিকার তথা গণতন্ত্র বজায় রাখার জন্য আমরা সমমনোভাবাপন্নদের সঙ্গে পথ হাঁটব।” অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতি এক ধাপ এগিয়ে বলেন, “ফের পাহাড়ে জোট হতেই পারে। রাজনীতিতে কিছুই অসম্ভব নয়। ইঙ্গিতটা নিশ্চয় রাজনীতি-সচেন মানুষ বুঝতে পারছেন।”
কিন্তু মোর্চা এখনও পাহাড়ের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। মোর্চার উত্থানের পর থেকে পাহাড়ের যে কোনও ভোটেই তা স্পষ্ট হয়েছে। কোন ভরসায় ফের মোর্চা বিরোধী দলগুলি জোট বাঁধার কথা ভাবছে?
গোর্খা লিগ সূত্রের দাবি, এই ‘পরিস্থিতি’র পিছনে রয়েছে একাধিক ‘উপাদান’। প্রথমত, তরাই-ডুয়ার্সের অন্তর্ভুক্তির দাবি নিয়ে আন্দোলনের হুমকি দিয়েও সম্প্রতি জনতার ক্ষোভ ও রাজ্য সরকারের চাপে পড়ে মোর্চা একাধিক বার ‘পিছু হঠতে’ বাধ্য হয়েছে। ফলে, মোর্চার ‘দুর্বলতা’ কাজে লাগানোর জন্য এটাই ‘উপযুক্ত’ সময় বলে মনে করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, জিটিএ ভোটে প্রার্থীপদ নিয়েও মোর্চার অন্দরে কোন্দলের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বিরোধীরা। তৃতীয়ত, মোর্চা বিরোধী শিবিরকে এক ছাতার তলায় এখনই নিয়ে আসা সম্ভব হলে, জিটিএ-ভোট ঘোষণার আগেই ‘সুবিধাজনক’ অবস্থায় পৌঁছনোরও আশা থাকছে।
গোর্খা লিগের এক নেতার সংযোজন, “বিরোধী শক্তি জোট বাঁধলে পাহাড়ের প্রধান রাজনৈতিক দলকে যে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়, অতীত তা আমাদের দেখিয়েছে। মদনবাবু এক সময় ঘিসিং-বিরোধী পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (পিডিএফ) গড়েছিলেন। দাওয়া নরবুলা যে বার লোকসভায় কংগ্রেস প্রার্থী হন, সে বার পিডিএফ তাঁকে সমর্থন করে। শেষ মুহূর্তে নরবুলাকেই সমর্থন করতে বাধ্য হন ঘিসিংও। একজোট হলে রাজনৈতিক ফায়দার সম্ভাবনা বাড়বে, এটা ঘটনা।”
বস্তুত, মোর্চার উপরে রাজনৈতিক ‘চাপ’ তৈরির পথে এ দিন থেকে ফের হাঁটা শুরু করল গোর্খা লিগ। মদন তামাং খুনের মামলায় মোর্চার একাধিক প্রথম সারির নেতার নাম জড়িয়েছিল। ওই মামলায় নাম থাকা সত্ত্বেও যে সব মোর্চা নেতাদের পুলিশ ধরেনি, তাঁদের ধরার দাবিতে এ দিন থেকেই রিলে-অনশনে বসছেন লিগের নেতা-কর্মীরা। সাত দিনের মধ্যে দাবি মানা না হলে ১ জুলাই থেকে গোর্খা লিগের সভানেত্রী তথা মদনবাবুর স্ত্রী ভারতী তামাং দার্জিলিঙে আমরণ অনশনে বসার হুমকি দিয়েছেন।
তবে মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিনয় তামাং বলেছেন, “বিরোধীরা জোট গড়ে লড়তে চাইলে স্বাগত। মোর্চা ছাড়া অন্য কোনও দলকে পাহাড়বাসী গ্রাহ্য করেন না। অতীতে লোকসভা, বিধানসভা ও পুরসভা ভোটে তা বোঝা গিয়েছে। জিটিএ ভোটেও সেটাই ফের স্পষ্ট হয়ে যাবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.