|
|
|
|
দারিদ্রেও হার মানেনি ৩ মেধাবিনী |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। পাটকাঠির দেওয়াল। দিনের বেলা মা’কে বাড়ির কাজকর্মে সাহায্য করতে হয়। রাতেও বেশি ক্ষণ কুপি জ্বালিয়ে পড়ার অসুবিধা। কিন্তু তার মধ্যেই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া জ্যোৎস্না খাতুন হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় ৭২৩ নম্বর পেয়ে রাজ্যে দ্বিতীয় হয়েছে।
বাবা সইটুকু শুধু করতে জানেন। মা নিরক্ষর। মুর্শিদাবাদের ইসলামপুরের বিষ্ণুপুর গ্রামের জ্যোৎস্না যে টুকু সময় বার করতে পারে, পড়াশোনা করে। একমাত্র বিনোদন হল বিকেলে প্রতিবেশীদের বাড়িতে গিয়ে গল্প করা।
জ্যোৎস্নার বাবা দিনমজুর একসেদ আলি বলেন, “সারা গ্রামের মানুষই আমাদের পরিবার। প্রতিবেশীরাই জ্যোৎস্নাকে একটা সাইকেল কিনে দিয়েছেন।” সাইকেলটি অবশ্য সে পেয়েছে গত বছর। তার আগে হেঁটেই যাতায়াত করত সে। জ্যোৎস্না বলে, “আমার স্বপ্ন শিক্ষিকা হওয়ার। এত দূর যখন আসতে পেরেছি, যত দূর যেতে হয় নিশ্চয়ই যেতে পারব।”
স্থানীয় রানিনগর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের বাবলু আলম জানান, ওই পরিবার খুবই দুঃস্থ কিন্তু অত্যন্ত ভদ্র বলে সারা গ্রামই তাঁদের পছন্দ করে। তিনি বলেন, “জ্যোৎস্না বরাবরই খুব ভাল ছাত্রী। আমরা সবাই ওর পাশে রয়েছি।”
পরিবার দুঃস্থ হলেও পড়াশোনায় প্রবল আগ্রহ এবং মেধার জোরে এ বার হাই-মাদ্রাসা পরীক্ষায় চমকে দিয়েছে আল আমিন মিশনের খলতপুর হাই মাদ্রাসার দুই ছাত্রী রূপালি খাতুন ও মেহেরুন্নেসা খাতুনও। |
|
|
|
মেহেরুন্নেসা |
রূপালি |
জ্যোৎস্না |
|
রূপালি ৭১৫ নম্বর পেয়ে রাজ্যে সপ্তম। বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরে। বাবা ইরাবুল সর্দার রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালান। স্বরূপনগরের মালঙ্গপাড়া কেসিবি ইনস্টিটিউশন থেকে অষ্টম শ্রেণি পাশ করার পরে সাংসারিক দৈন্য পড়াশোনায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল রূপালির কাছে। বরাবর প্রথম হত স্কুলে, কিন্তু তখন পড়াশোনা ছেড়েই দেবে বলে ভেবেছিল সে।
তবে বাড়ির লোকজনই সে সময়ে যোগাযোগ করেন হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের আল-আমিন মিশনের সঙ্গে। মিশনই রূপালিকে ভর্তি করিয়ে দেয় খলতপুর হাই মাদ্রাসায়। সেখান থেকেই রূপালি এ বার পরীক্ষা দিয়েছে।
উলুবেড়িয়ার আল আমিন মিশন অ্যাকাডেমিতেই থাকে রূপালি। তার পড়াশোনা, থাকা-খাওয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা করে মিশনই। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চায় রূপালি। তার কথায়, “অষ্টম শ্রেণি পাশ করার পরে বাবার পক্ষে আমার বই কেনা এবং গৃহশিক্ষকের বেতন জোগানো কঠিন হয়ে পড়ে। তাই পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেতে বসেছিল। মিশন বাঁচিয়ে দিয়েছে। এ বার আরও ভাল ভাবে পড়াশোনা করতে হবে।”
মেয়ের সাফল্যে মিশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ইরাবুলও।
চিকিৎসক হতে চায় মিশনের আর এক ছাত্রী মেহেরুন্নেসা খাতুনও। কলকাতার মেটিয়াবুরুজের মেয়েটিও থাকে আল আমিন মিশন অ্যাকাডেমিতে। ৬৯০ নম্বর পেয়ে মেধা-তালিকায় তার স্থান ২৮ নম্বরে। বাবা খায়রুল আনাম অন্যের দোকানে দর্জির কাজ করেন।
মেহেরুন্নেসার কাকা সদরুল আলম এ দিন বলেন, “দুই মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে দাদা সর্বস্বান্ত হয়ে যান। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি মেহেরুন্নেসার আগ্রহ দেখে আমরা শেষ পর্যন্ত মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওরা পাশে না
থাকলে ভাইঝির পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন হত।” একই কথা মেহেরুন্নেসারও।
তবে, আল আমিন মিশনের কর্ণধার নুরুল
ইসলাম অবশ্য সাফল্যের যাবতীয় কৃতিত্বই দিতে চান দুই ছাত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টাকেই। যোগাযোগ করা হলে এ দিন তিনি বলেন, “ওদের মেধা আছে। পড়াশোনার আগ্রহ আছে। সেটাই বড় কথা। আমরা ওদের সেই লড়াইয়ে পাশে আছি মাত্র।”
|
— নিজস্ব চিত্র |
|
|
|
|
|