ইঞ্জিনিয়ার হওয়াই স্বপ্ন রবিউলের
পৌনে এক বিঘা খেতিজমি আর দু’কামরার টালির বাড়ি। ওই জমিটুকুও বছর চারেক আগে বড় মেয়ের বিয়ে দিতে মহাজনের কাছে বন্ধক রাখতে হয়েছে। ফলে গৃহকর্তা আবু রায়হানকে খেতমজুরি করে স্ত্রী-সন্তান মিলে ৫ জনের সংসার টানতে হয়। তাতেও অবশ্য চলে না। আবু রায়হানের বছর চোদ্দোর ছেলে হাসিবুরও অন্য জেলায় রাজমিস্ত্রির যোগাড়ের কাজ করে। সোমবার হাই মাদ্রাসার ফল প্রকাশের আগে পর্যন্ত ‘বেলডাঙা দারুল হাদিস সিনিয়র মাদ্রাসা’র আলিম (মাধ্যমিক সমতুল) শ্রেণির ছাত্র রবিউল ইসলামের পরিচয় হতদরিদ্র পরিবারের ওই চৌহদ্দির মধ্যেই আটকে ছিল। এ দিন মাদ্রাসা বোর্ডের মাধ্যমিক স্তরের ফল প্রকাশের পরে হরেকনগর গ্রামের ওই কিশোরের নাম এক লহমায় রাজ্যময় ছড়িয়ে গেল। পরীক্ষায় রাজ্যে সে ষষ্ঠ স্থান পেয়েছে।
রবিউল ইসলাম
আখতারুল ইসলাম
পাঁচ জনের সংসারে উনুন জ্বালাতে কান্দির বাতিডাঙা-গোবরহাটি গ্রামের নাজিমুদ্দিন শেখকে যেতে হয়েছে সুদূর আরব মুলুকে। বাবার ভার কিছুটা কমাতে নাজিমুদ্দিনের নাবালক ছোট ছেলেকেও অন্য জেলায় রাজমিস্ত্রির যোগাড়ের কাজ করতে হয়। সেই হতদরিদ্র পরিবারের বড় ছেলে আখতারুল ইসলাম লেখাপড়ার টানে বছর পাঁচেক আগে বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে ‘বেলডাঙা দারুল হাদিস সিনিয়র মাদ্রাসা’ থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে মির্জাপুর গ্রামের মসজিদে। মসজিদে থাকা, মির্জাপুর গ্রামের লোকজনের দেওয়া খাবার আর ‘বেলডাঙা দারুল হাদিস সিনিয়র মাদ্রাসা’য় লেখাপড়া করা তার জীবনপঞ্জি বলতে ওইটুকুই। সহপাঠী রবিউলের থেকে ৯ নম্বর কম পেয়ে সে রাজ্যে অষ্টম হয়েছে। ৯০০-র মধ্যে রবিউল পেয়েছে ৭৪৪। আর আখতারুল ৭৩৫।
তবুও রবিউলের দুঃখ ঘুচল না। রবিউল বলে, “আমাদের মাদ্রাসায় আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত বিএ সমতুল্য কামিলা পড়ানো হয়। এবং এমএ সমতুল্য এম এম (মুমতাজুল মুহাদ্দেসীন) পর্যন্তও পড়ানো হয় এই মাদ্রাসায়। কিন্তু বিজ্ঞান শাখা নেই। আমার ইচ্ছা বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। তাই আল আমিন মিশনে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। পাশও করেছি। কিন্তু টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারিনি।” বেলডাঙার দেবকুণ্ড হাই মাদ্রাসার ছাত্রী ফাহিমা খাতুনের কিন্তু স্বপ্নপূরণ হয়েছে। মাদ্রাসা বোর্ডের মাধ্যমিক পরীক্ষায় দেবকুণ্ড হাইমাদ্রাসার ছাত্রী ফাহিমা ৭০৬ নম্বর পেয়ে রাজ্যে দশম স্থান পেয়েছে। ওই হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আব্দুস সবুর বলেন, “আল আমিন মিশনে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়ে ফাহিমা লেখাপড়া শুরু করেছে। সে অঙ্কে একশোয় একশো পেয়েছে। বাকি বিষয়েও লেটার পেয়েছে। দেবকুণ্ড হাইমাদ্রাসার এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ১৫১ জনের সবাই উত্তীর্ণ হয়ছে।”
তার ছোট ভাই থেকে বাড়ির ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশিপাশি রবিউল বলে, “আমাদের মাদ্রাসার শিক্ষক আসির আলির কাছে ইংরাজি ও ভাবতা মাদ্রাসার শিক্ষক মিরাদ আলির কাছে অঙ্ক করেছে। তাঁদের আমি পয়সা দিতে পারিনি। তাঁরা বিনা টাকায় না পড়ালে ওই রেজাল্ট সম্ভব হত না। তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ভাষা নেই আমার।”
ছবি: গৌতম প্রামাণিক।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.