চিকিৎসার জন্য কটকে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল ৫ জনের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দু’জনকে কটক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার ভোরে ওড়িশার টাঙ্গি থানা এলাকায় ৫ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে। দ্রুত গতির গাড়িটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি লরির পিছনে ধাক্কা মারলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দু’জনের। পরে কটক মেডিক্যাল হাসপাতালে মৃত্যু হয় আরও তিন জনের। মৃত শ্রীকৃষ্ণ মাইতি (৪০), তাঁর ভাই গৌরহরি মাইতি (৩৫), প্রতিবেশী মুকুল ভট্টাচার্য (৪২) ও গাড়ির চালক অনুপ মাইতির (৩২) বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর থানা এলাকার পালপাড়া গ্রামে। মারা গিয়েছেন শ্রীকৃষ্ণবাবুর শ্যালক তপন মাইতিও (৩৪)। তাঁর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থানার নওগাঁ গ্রামে। কটক মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন শ্রীকৃষ্ণবাবুর ছেলে শিবপ্রসাদ ও আর এক শ্যালক লক্ষ্মীকান্ত মাইতি। |
দীর্ঘ দিন ধরে হাড়ের সমস্যায় ভুগছিলেন শ্রীকৃষ্ণবাবু। জেলা ও কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েও সুফল না মেলায় কটকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। রবিবার রাত ১টা নাগাদ একটি গাড়ি ভাড়া করে কটকের উদ্দেশে রওনা দেন শ্রীকৃষ্ণবাবু ও তাঁর ভাই, ছেলে, দুই শ্যালক, এক প্রতিবেশী।
সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ কটক থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার আগে টাঙ্গি বাসস্ট্যান্ডের কাছে দ্রুত গতির গাড়িটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি লরির পিছনে ধাক্কা মারে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে যাত্রীদের উদ্ধার করে টাঙ্গি থানার পুলিশ। গাড়ির গায়ে এগরার এক অটো-মোবাইল ব্যবসায়ীর ফোন নম্বর দেখে যোগাযোগ করে তারা। ওই ব্যবসায়ী তাপস মহাপাত্র বলেন, “সকাল ৭টা নাগাদ ফোনটা পেয়ে বিশ্বাস করতে পারিনি। মাত্র কয়েক দিন আগেই বিয়ে হয়েছিল গাড়ির চালক অনুপের। অনেক কষ্ট করে নম্বর জোগাড় করে অনুপের বাড়িতে খবর দিই।” অনুপের সদ্য-বিবাহিত স্ত্রী সুপর্ণাদেবী কাঁদতে-কাঁদতে বলেন, “অষ্টমঙ্গলায় বাপের বাড়ি যাইনি। ও বলেছিল সোমবার রাতে ফিরে আসবে। তার পর আমাকে নিয়ে যাবে।”
আকস্মিক এই দুর্ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে পালপাড়া গ্রামের মাইতি পরিবারে। শ্রীকৃষ্ণবাবুরা তিন ভাই। পৃথক সংসার। চাষবাস আর শ্রমিকের কাজ করেই সংসার চলত। ছোট ভাই নিতাই মাইতি কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, “আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না দুই দাদার মৃত্যুর খবর। আমাদের পরিবার অভিভাবকহীন হয়ে গেল। পরিবারগুলির ভরণপোষণ কী ভাবে হবে বুঝতে পারছি না। ” বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণবাবুর স্ত্রী আরতিদেবী। স্বামীকে হারিয়েছেন তিনি, ছেলের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। আর কোলের সন্তানকে জড়িয়ে ধরে একটানা কেঁদে চলেছেন গৌরহরিবাবুর স্ত্রী সুতপাদেবী। মৃত মুকুলবাবুরও একমাত্র সন্তানের বয়স তিন বছর।
আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে মৃতদেহ আনার জন্য কটকের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য দেবব্রত পণ্ডা। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক জ্যোতির্ময় কর বলেন, “কী ভাবে এই পরিবারগুলোকে সান্ত্বনা দেব বুঝতে পারছি না। সরকারি ভাবে সাহায্য করার চেষ্টা চলছে।” |