|
|
|
|
পরিষেবা-পরিচয়ে পুরসভা/২ |
নিকাশি-সমস্যায় জেরবার শিল্পশহর |
দেবমাল্য বাগচি • হলদিয়া |
নদীকেন্দ্রিক শিল্প-শহর হলদিয়া। হুগলি ও হলদি নদীর এই সঙ্গমস্থলে ১৯৫৫ সালেই বন্দর তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে এই বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় নানা শিল্প, কল-কারখানা। শিল্পশহরে কাজের খোঁজে ভিড় জমিয়েছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ-জন। অপরিকল্পিত ভাবে যেমন নির্মাণ হয়েছে একের পর এক বাড়ি, তেমনই রাস্তা-খালের ধারে গজিয়ে উঠেছে ঝুপড়ি-বস্তি। নিকাশির জন্য নর্দমা তৈরির দিকে নজর দেয়নি পুরসভাও। তাই নদী থাকা সত্ত্বেও নিকাশি সমস্যায় জেরবার শিল্পশহর। সাফাই নিয়েও অভিযোগের অন্ত নেই পুরবাসীর। |
|
|
চেনা ছবি। বেহাল নিকাশি আর জঞ্জালের স্তূপ হলদিয়ায়। |
|
১৫ বছর আগে পঞ্চায়েত থেকে পুরসভার উত্তীর্ণ হলদিয়ায় নিকাশি সমস্যা বরাবরের। বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেই জল জমে দুর্বিষহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পুরপ্রধান তমালিকা পণ্ডাশেঠ অবশ্য পুর-এলাকায় নিকাশির সমস্যা আছে বলে মানতে নারাজ। পুরপ্রধানের বক্তব্য, “পুনর্বাসন কলোনি এলাকায় নিকাশির তেমন সমস্যা নেই। সমস্যা আছে শুধুমাত্র কিছু গ্রামীণ এলাকায়। শিল্পের জন্য জমিদাতা কলোনির বাসিন্দাদের কথাই আমাকে আগে ভাবতে হয়।” আবার নর্দমা থাকলেও তা সাফাই হয় না বলে অভিযোগ কলোনি এলাকার বাসিন্দাদের। যদিও তমালিকাদেবীর দাবি, “প্রতিটি ওয়ার্ডে সাফাইকর্মী রয়েছেন।”
বাস্তবে পুরসভার ১, ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে নিকাশির কোনও বালাই নেই। বাড়ির ব্যবহৃত জল বেরিয়ে পড়ছে নিচু জমি বা নয়ানজুলিতে। কিন্তু সংস্কারের অভাবে প্রায় রুদ্ধ নয়ানজুলি থেকে আর জল বেরোনোর উপায় নেই। বর্ষা এলেই সমস্যা আরও বাড়ে। পুরসভার বিস্তীর্ণ এলাকায় রাস্তাঘাট ডুবে ঘর-বাড়ির মধ্যেও জল ঢুকে পড়ে। জমা জলে মশাদের উপদ্রব বাড়ে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মশা-মারার জন্য কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুরসভা। মাসে অন্তত একবার মশা-মারার তেল স্প্রে করলে পরিস্থিতি এতটা খারাপ হত না বলে মত পুরবাসীর। |
|
শিল্পশহরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের এই এলাকায় আজও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। |
৩ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিটি কর্মী ভোলানাথ দাস বলেন, “আমাদের এলাকায় নর্দমা না থাকায় জল জমিতে জমে। কিছু নয়ানজুলি রয়েছে। তা-ও যথাযথ পরিষ্কার হয় না। মশার দাপট বাড়ছে দিন দিন।” ১ নম্বর ওয়ার্ডের সুতাহাটা বাজার এলাকায় রাস্তার ধারে জমি ও খাল ভরিয়ে বাড়ি গজিয়ে ওঠায় সমস্যা আরও বেড়েছে। সমস্যার কথা মেনে নিলেও এর দায় নিতে নারাজ ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শুভ্রবরণ শতপথী। তিনি বলেন, “আমি এই নিয়ে বহু বার চেঁচিয়েছি পুরসভায়। কিন্তু পুরসভা সামগ্রিক ভাবে পদক্ষেপ না করলে আমি একা আর কী-ই বা করব?”
১০, ১১, ১২, ১৫, ২৪, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে কলোনি এলাকায় নর্দমা থাকলেও গ্রামীণ এলাকাগুলিকে নিকাশির কোনও ব্যবস্থাই নেই। কলোনি এলাকার নিঃসৃত জল এসে জমছে এই গ্রামীণ এলাকাতেই। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের খঞ্জনচক এলাকার বাসিন্দা রাজকুমার পাড়ুইয়ের অভিযোগ, “ভোট এলেই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন সব রাজনৈতিক দলের নেতারা। ভোট মিটে গেলে তাঁদের আর দেখা মেলে না। নিকাশির সমস্যার কথা পুরভবনে গিয়ে জানিয়ে এলেও কাজ হয়নি।” এলাকার কাউন্সিলর তথা উপপুরপ্রধান নারায়ণ প্রামাণিকের বক্তব্য, “পুরসভা হলেও গ্রামীণ এই এলাকায় রায়তি জমিতে যে-যার মতো বাড়ি বানাচ্ছে। কিছু করার নেই।” ১১ নম্বর ওয়ার্ডের চিরঞ্জীবপুরে বস্তির পাশেই খাল। সংস্কার না হওয়ায় বর্ষাকালে অতিরিক্ত জল খাল উপচে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। একই অবস্থা নদী-তীরবর্তী ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের রাজারচক বস্তি এলাকায়।
২, ৫, ৬, ৭, ৮, ১৩, ১৯, ২০, ২৩, ওয়ার্ডে নর্দমা রয়েছেতবে কোথাও সঙ্কীর্ণ আবার কোথাও ভাঙা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, কর্মী থাকলেও নর্দমা সাফাই হয় না। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে মাখনবাবুর বাজারের ঠিক পিছনের কলোনি এলাকায় জঞ্জালে ভরা সঙ্কীর্ণ নর্দমা অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় পড়ে থাকে। সংস্কার হয় না খালও। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী শক্তিপদ পাঠকের কথায়, “নিকাশি আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এলাকায় যে খালটি রয়েছে, তা বহু দিন সংস্কার হয়নি। ফলে বর্ষাকালে জল বেরোতে পারে না।”
উপ-পুরপ্রধানের ওজর, “আমাদের পুরসভা এখনও নবীন। ধীরে ধীরে আমরা সমস্ত এলাকারই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি। ‘মাস্টার প্ল্যান’ তৈরিরও ভাবনা রয়েছে।”
শুধু ‘ভাবনা’য় কিন্তু খুব আর ভরসা রাখতে পারছেন না পুরবাসী।
|
ছবি: আরিফ ইকবাল খান। |
|
|
|
|
|