|
|
|
|
তৃণমূলের প্রচারে এখন ‘লক্ষ্মণ-ঘনিষ্ঠ’ |
দেবমাল্য বাগচি • হলদিয়া |
কয়েকমাস আগেও হলদিয়ায় তাঁর পরিচিতি ছিল সিপিএম নেতা লক্ষ্মণ শেঠের ‘ছায়াসঙ্গী’ হিসাবে। এখনও ‘খাতায়-কলমে’ তিনি হলদিয়া পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএমের কাউন্সিলর। গত অক্টোবরে এক অনিয়মের অভিযোগে তিনি গ্রেফতার হওয়ার পরে সিপিএম ওই ঘটনাকে তৃণমূলের ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’ বলেও অভিহিত করেছিল। হলদিয়ার রাজনীতিতে এ হেন ‘বর্ণময়’ চরিত্র শেখ মুজফ্ফরকে ঠিক পুর-ভোটের আগে দেখা যাচ্ছে তৃণমূলের একাধিক প্রচার-সভায়। লক্ষ্মণ-জায়া তমালিকা পণ্ডাশেঠ যে ১৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে এ বার প্রার্থী, সেখানে তৃণমূল প্রার্থী আজিজুল রহমান মুজফ্ফরের সম্পর্কিত নাতি। তাঁর হয়ে প্রচারে বিশেষ ‘সক্রিয়’ মুজফ্ফর। তাঁর দাবি, “হলদিয়ার উন্নয়নে সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর হাত শক্ত করতেই আমি তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। পুর-ভোটেও তৃণমূলের হয়ে প্রচার করছি।” আর শুভেন্দুবাবুর বক্তব্য, “ওঁর (মুজফ্ফর) আত্মীয় আমাদের দলের প্রার্থী। তাই উনি প্রচার করছেন।” তাঁর সংযোজন, “যে কেউ আমাদের প্রচারে যেতে পারেন। সমর্থন করতেই পারেন। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে আমাদের সমর্থক। তবে ওঁকে দলের সদস্যপদ দেওয়া হয়নি।”
এক সময়ে হলদিয়া বন্দরের ক্রেন-অপারেটর থেকে ঠিকাদারি সংস্থার মালিক হয়ে ওঠা। হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কের ভবানীপুরের তালপুকুরে লৌহ আকরিক-সহ নানা সরঞ্জামের বিশাল গুদাম গড়ে তোলা। বন্দরের আমদানি-রফতানিতে ‘একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ’ কায়েম। প্রাসাদোপম বাড়ি। মুজফ্ফরের এ হেন ‘উত্থান’ লক্ষ্মণ শেঠের ‘ঘনিষ্ঠতা’র সূত্রে বলেই স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি। এমনকী, নানা সময়ে তাঁর ব্যবসায় ‘অনিয়ম’, রাতারাতি বিশাল সম্পত্তির মালিক হয়ে ওঠা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলেও সিপিএম নেতৃত্ব তাতে আমল দেননি বলে বিরোধীদের অভিযোগ ছিল। ২০০৭-এ লক্ষ্মণবাবুর ‘আগ্রহে’ই সিপিএমের টিকিটে পুর-ভোটে প্রার্থী হন মুজফ্ফর। কাউন্সিলরও হন হলদিয়া পুরসভার। পরের পুর-ভোটেই, লক্ষ্মণবাবু যখন জেলে (সোমবারই তাঁর জেল হেফাজতের মেয়াদ আরও ১৪ দিন বেড়েছে), মুজফ্ফরের ‘ভোলবদল’ নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। মুজফ্ফর অবশ্য বলছেন, “লক্ষ্মণবাবুকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু ওঁর হাতে এখন ক্ষমতা নেই। দলও কোণঠাসা। যে দল রাজ্যে ক্ষমতায়, তাদের সঙ্গে থেকেই হলদিয়ার উন্নয়ন করতে চাই।” এ বছর সিপিএমের সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ করেননি মুজফ্ফর। সিপিএমও এ বার তাঁকে আর পুর-ভোটে প্রার্থী করার কথা ভাবেনি। ভবিষ্যতে মুজফ্ফরকে তৃণমূলের সদস্য পদ দেওয়া হবে কি? সাংসদ শুভেন্দুবাবুর মন্তব্য, “ভোটের সময়ে কাউকে সদস্যপদ দেওয়া হচ্ছে না। তবে আমি সব মানুষকেই তৃণমূলকে সমর্থন করতে বলছি। উনিও মানুষের বাইরে নন।” সিপিএমের হলদিয়া জোনাল কমিটির সম্পাদক সুদর্শন মান্না বলেন, “উনি (মুজফ্ফর) কী করছেন না করছেনজানি না। জানলে, দলে আলোচনা হবে। তবে সেটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়।” ৫ বছরে পুর-বোর্ডে তাঁর সহকর্মী ও স্বামীর ‘বিশেষ ঘনিষ্ঠ’ মুজফ্ফরের ‘পরিবর্তন’ নিয়ে তমালিকাদেবীর প্রতিক্রিয়া, “শুনেছি, উনি বিরোধীদলের প্রচারসভায় ছিলেন। কী আর করা যাবে!” |
|
|
|
|
|