বিছানার ডান দিকে খেলার বুট জোড়া অগোছালো অবস্থায় পড়ে। দু’হাত দূরে চেন খোলা হ্যান্ডব্যাগটা মাটিতে লুটোচ্ছে।
সোমবার সাতসকালে গণেশ বাজারে ভুবনেশ্বর-কটক লিঙ্ক রোডের ওপরে যে তিন তারা হোটেলে বাংলা দল রয়েছে, সেখানে গিয়ে দেখা গেল ব্যাগপত্তর গোছগাছের কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছেন সাব্বির আলি। পঞ্জাব ম্যাচের জন্য যেটুকু প্রয়োজন, শুধু সেটাই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না, মাত্র তিন দিনেই সন্তোষ ট্রফি অভিযান শেষ হয়ে গেল বাংলার, “মহারাষ্ট্রের কাছে হারটা কোমর ভেঙে দিয়েছে। তবু একটা আশা ছিল, কেরল ম্যাচ নিয়ে। কিন্তু পুরো টিমটাই ফ্লপ করল। সেমিফাইনাল অন্তত খেলা উচিত ছিল।”
বংলার পারফরম্যান্স দেখে অসম্ভব হতাশ গ্রুপের অন্য দলের কোচেরাও। কেরল কোচ এবং সাব্বির আলির প্রাক্তন সতীর্থ এম এম জেকব যেমন বললেন, “বাংলা মানেই শক্ত প্রতিপক্ষ, আর সেটা বলা যাবে না। একটা সময় ভারতীয় ফুটবলে ওদের একচেটিয়া রাজত্ব ছিল ঠিকই। কিন্তু এখন আর সেই তেজ নেই। খেলার মান অনেক পড়ে গিয়েছে। এ বারের দলটা তো ছুটতেই পারছে না।” মহারাষ্ট্র কোচ ইরেনীয় ভাজের গলায় তো আরও চড়া সুর, “আমার ফুটবল জীবনে এত খারাপ বাংলা দল আগে কখনও দেখিনি। বাংলার খেলা দেখে আমি অবাক। ভাবতেই পারছি না, এই দলে একদিন গৌতম সরকার, সুব্রত ভট্টাচার্য কিংবা প্রসূন বন্দ্যোপাধায়ের মতো ফুটবলাররা খেলেছে। খেলার মোটিভেশন নেই।”
দল নির্বাচন করা নিয়ে এখন যাবতীয় প্রশ্নের মুখে সাব্বির। ব্যর্থতার শতভাগ দায় চাপানো হচ্ছে তাঁর কাঁধে। বাংলার ভরাডুবির কাটাছড়া করতে বসে কী কী পাওয়া গেল স্বয়ং সাব্বির আলির নোট বুকে, একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নেওয়া যাক।
১) আগের দু’বার দলে খেলা তৈরির লোক ছিল। এ বছর সন্তোষ ওঁরাও সেই জায়গায় চূড়ান্ত ব্যর্থ।
২) ভাল মানের স্ট্রাইকার নেই। তন্ময়-মিঠুন-তারিফের যোগ্যতা থাকলেও, গোলকানা।
৩) নড়বড়ে রক্ষণ। আগের বছর অনুপম সরকার এবং সফর সর্দার যে ফুটবলটা খেলেছিলেন, তার দশ ভাগও খেলতে পারেননি সাগ্রাম মাণ্ডি কিংবা গৌর নস্কর।
৪) সামান্য অভিজ্ঞ ফুটবলাররা দলকে তাতাতে পারেননি।
৫) টিম স্পিরিটের মারাত্মক অভাব। মাঠের ভিতরে হোক কিংবা মাঠের বাইরে। ঝাঁপিয়ে পড়া, জেতার জেদ কোনওটাই ছিল না দলে।
৬) পর্যাপ্ত অনুশীলনের অভাব। যার ফলে কম্বিনেশন প্র্যাক্টিস ঠিকঠাক হয়নি।
কাটাছেঁড়া করে অবশ্য আর কোনও লাভ নেই। মঙ্গলবার পঞ্জাবকে হারিয়ে কোনও রকমে এখন শুধু মুখ বাঁচানোর কথা ভাবছে বাংলা। উল্টো দিকে আবার সন্তোষে প্রথম জয়ের মুখ দেখতে মরিয়া পঞ্জাবও। তাই জাগতার সিংহের দল দুর্বল হলেও, বাংলাকে কিন্তু লড়াই করেই জিততে হবে। |