চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ব খেতাবি ম্যাচে সমতা ফেরাল বিশ্বনাথন আনন্দ। খারাপ মন নিয়ে কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় পৌঁছে আনন্দের জেতার খবরে আমার মনটাও তাই ভাল হয়ে গেল। পাশাপাশি অবশ্য আশঙ্কাও হচ্ছে, বাকি চারটে গেম নিয়ে। এমন সর্বোচ্চ পর্যায়ের দাবা-যুদ্ধেও দুই সেনাপতি কী করে যে এত মামুলি ভুল করছে সেটা ভেবেই আশঙ্কাটা হচ্ছে। সাধারণত এই পরিস্থিতিতে বাকি চারটে গেম ড্র হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। দু’জনের কেউই অহেতুক অ্যাটাকিং গেম খেলার ঝুঁকি নিয়ে হারতে চাইবে না। কারণ, তখন এক বার পয়েন্টে পিছিয়ে পড়লে ম্যাচে ফিরে আসার জন্য বেশি গেম হাতে থাকবে না। তবে ভিশি আর ওর চ্যালেঞ্জার দু’জনেই যে রকম ভুলভাল চাল খেলছে তাতে যে কোনও গেম যে কেউ জিতে যেতে পারে। বিপক্ষের ভুলের সুযোগ নিয়ে।
যেমন সোমবার আট নম্বর গেমে হল। সাদা ঘুটিতে প্রত্যাশিত কুইন্স পন ওপেন না করে কিংস পন ওপেন করে আনন্দ বেশ একটা নতুনত্বের স্বাদ দিল আমার মতো অগুনতি দাবাপ্রেমীকে। কারণ, আগের গেম হারা দাবাড়ু সাধারণত পরের গেম জিততে ঝাঁপায়। কিন্তু আনন্দের হয়তো স্ট্র্যাটেজি ছিল অহেতুক অ্যাটাকিং হতে গিয়ে আরও একটা গেম হেরে আরও পিছিয়ে না পড়ে বরং আপাতত ধৈর্য দেখিয়ে আরও পরের দিকে ঝাঁপাবে। বরং এ দিন গেলফাঁ-ই কালো ঘুটির ওপেনিংয়ে কিংস ইন্ডিয়ান ডিফেন্স নিয়ে চমক দিল। যার জবাবে আনন্দ ‘স্যানিশ ভ্যারিয়েশন’ করে বোর্ডে নিজের পজিশন নিরাপদ রাখতে চাইল। গেলফাঁ আবার সাত আর আট নম্বর চালে ঘোড়া আর গজের চালের মাধ্যমে গেমটা ধরতে চেয়েছিল। কিন্তু তার পরে এমন কতকগুলো পরপর ভুল চাল দিল যে, আনন্দ সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ভাবে জেতার জায়গায় চলে যায়। আর ১৫ নম্বর চালে তো গেলফাঁ বাচ্চা ছেলের মতো ভুল করায় ওর মন্ত্রীই আটকে গেল। যার ফলে ১৭ চালের মাথায় হার স্বীকার করে নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না ওর।
মোদ্দা কথা, আনন্দ জেতার পথে যতটা ভাল খেলেছে, গেলফাঁ তার চেয়ে ঢের বেশি খারাপ খেলে হেরেছে। এর ঠিক উলটোটা আবার ঘটেছিল আগের গেমে। সেই গেমে আনন্দ খারাপ খেলায় গেলফাঁ জিতেছিল। বলা যায়, গেলফাঁ যেন এ দিন তার ঋণ শোধ করল। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, চল্লিশোর্ধ্ব দুই সুপার গ্র্যান্ডমাস্টার সর্বোচ্চ পর্যায়ের ম্যারাথন দাবা-যুদ্ধের টেনশন নিতে পারছে না। শারীরিক ভাবেও চাপ নিতে পারছে না। ফলে খুব মামুলি ভুল চাল দিয়ে বসছে।
তা হলেও যেহেতু শেষ গেম জিতে থাকল, সে জন্য এক দিন বিশ্রামের পর আনন্দ বুধবার মানসিক ভাবে এগিয়ে থেকে নামবে। আবার জিততে পারে। কিন্তু যে মানের খেলা হচ্ছে, তাতে গেলফাঁও ফের সমতায় ফিরতে পারে। সব মিলিয়ে তাই এই ম্যাচ র্যাপিড রাউন্ডে চলে গেলে আমি অবাক হব না। তবে সেক্ষেত্রে অ্যাডভান্টেজ আনন্দ। |