ট্রেভর বেলিস। আড়ালে থাকতে ভালবাসেন। গৌতম গম্ভীরের টিমের যেন পর্দার পেছনে থাকা হাউজওয়াইফ। অথচ অনেকেই মনে করেন টিমের ভেতরে একটা শান্তশ্রী চেহারা তিনি এনেছেন। যেটা পরপর ক’বছর হারতে থাকা দলে খুব প্রয়োজন ছিল। সেই কেকেআর কোচ পুণের হোটেলে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন সোমবার টিম নিয়ে প্র্যাক্টিসে যাওয়ার আগে।
প্রশ্ন: কেকেআর নিয়ে মরসুমের শুরুতে আপনার ভিশন কী ছিল? আর সেই দৃষ্টিভঙ্গির কতটা সেমিফাইনাল অবধি সার্থক হল?
বেলিস: আমি চেয়েছিলাম টিমের মধ্যে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে যাতে ছেলেরা তার ওপর ভর করে নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারে। ভেতরের পরিবেশটা যদি নড়বড়ে হয়ে যায় তখন স্বাভাবিকতাটা আটকে যায়।
প্র: সেমিফাইনালের আগে আপনার কি মনে হচ্ছে লক্ষ্যে অনেকটা সফল?
বেলিস: ফল তো দেখতেই পাচ্ছেন। আইপিএল জেতা থেকে আমরা আর মাত্র দুটো ম্যাচ দূরে।
প্র: এই যে চার দিকে নানা কিছু ঘটছে। আপনার টিম মালিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা। স্টিং অপারেশন। মাদক সেবনের পার্টিতে প্লেয়ারের ধরা পড়া। এত সবের মধ্যে আপনার প্লেয়াররা ম্যাচে মন রাখবে কী করে? খোদ আইপিএলই যেখানে আক্রান্ত সেখানে তাদের ভাবনা তো বারবারই সেমিফাইনালের বাইরে চলে যাওয়া উচিত।
বেলিস: এই সময় মন দেওয়া উচিত ছেলেরা ঠিক যেটা করতে পারে তার ওপর। বাইরের ব্যাপার নিয়ে বেশি ভেবে লাভ নেই। এমন কঠিন সময়ের মন্ত্র হল, ছেলেরা একে অপরের কাছাকাছি থাকো। একজন আর একজনের সাফল্য উপভোগ করো। আর বাইরের চাপ নেওয়ার কথা বলছেন? টুর্নামেন্টে এখন অবধি যারা সেরা দুটো দলের একটা, তারা চাপ নেবে এটাই কি প্রত্যাশিত নয়?
প্র: ইউসুফ পাঠান কি আপনার কোচিং জীবনের সেরা চ্যালেঞ্জ?
বেলিস: উঁ, উঁ (খানিকটা আনমনা)। ইউসুফ আস্তে আস্তে ঠিক হচ্ছে। |
প্র: আস্তে আস্তে ঠিক হতে হতে তো আইপিএলই শেষ হয়ে যাবে।
বেলিস: ইউসুফকে আমরা বারবারই বলছি যে ও পারবে। ওর বিশ্বাসটা ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমার মনে হয় যে অবস্থায় ছিল তার থেকে এখন ও অনেক ভাল।
প্র: কেকেআরের একটা ব্যাটিং স্ট্র্যাটেজি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। গম্ভীর ভাল শুরু করার পর ১১ থেকে ১৬-১৭ ওভার যখন মনোজ তিওয়ারি-পাঠান খেলছেন, স্ট্রাইক রেটটা ঝপ করে কমে যাচ্ছে।
বেলিস: (মুখ গম্ভীর) পরিস্থিতি যা ছিল, দু’সপ্তাহে অনেক ভাল হয়েছে। মনোজ আর ইউসুফকে এখন বেশ মাথা-ঠান্ডা দেখাচ্ছে। যেটা ভাল লক্ষণ।
প্র: গত বছরের ২ এপ্রিল যাকে আউট করার ফন্দি ভাঁজছিলেন, সেই তাকে নিয়ে কাল ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন দেখছেন। শ্রীলঙ্কা কোচ হিসেবে ওয়াংখেড়েতে সে দিন গম্ভীর ছিলেন আপনার বিপক্ষ শিবিরে। আজ আপনারা একই রথে।
বেলিস: হ্যাঁ, আমি আজও মনে করি বিশ্বকাপ ফাইনালটা গম্ভীরই শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। ধোনি অনেক কৃতিত্ব পেয়েছে ঠিকই। কিন্তু আমি বলব আসল কাজটা করেছিল গম্ভীর। সচিনের উইকেটটা পড়ে যাওয়ার পর যখন আমরা নিশ্চিত আর একটা পড়লেই ভারত পুরো বাগে এসে যাবে, সেই সময় গম্ভীর দাঁড়িয়ে গেল। শুধু দাঁড়ালই না, পাল্টা মারতে শুরু করল।
প্র: আর ক্যাপ্টেন গম্ভীর?
বেলিস: খুব ভাল করছে। বিশেষ করে মুম্বইয়ের দিন ওর অধিনায়কত্ব দেখে আমার মন ভরে গেছে।
প্র: সুনীল নারিনের রহস্য সমাধান করা যাচ্ছে না কেন?
বেলিস: শ্রীলঙ্কা টিমে অজন্তা মেন্ডিসও এ রকম ছিল। এক-দেড় বছর পর ব্যাটসম্যান আস্তে আস্তে ওকে বুঝতে শুরু করল।
প্র: কেকেআর নেটেও কি কেউ নারিনকে খেলতে পারে না?
বেলিস: ও ভাবে বলা কঠিন। নেটে নারিন অত বল করে না।
প্র: আপনি বলছেন মেন্ডিসের মতোই ওকে ধরে ফেলবে লোকে। কিন্তু এখন অবধি তো কেউ পারেনি।
বেলিস: পারেনি তার কারণ নারিন খুব ধূর্ত। সারাক্ষণই নিজেকে বদলে যাচ্ছে। একে তো ওপর থেকে বলটা ছাড়ে। তার ওপর কন্ট্রোলটা ভাল। সব সময়ই লেংথের হেরফের করে যায়।
প্র: সহবাগের বিরুদ্ধে তা হলে নারিন?
বেলিস: ও ভাবে বলা কঠিন। তবে পুণের যা উইকেট, নারিন থাকায় আমরা অন্তত খুশি। বিপক্ষ খুশি কি না জানি না।
|
দুই গুরুর ইতিকথা |
আজ যাঁদের মগজাস্ত্র বাইরে থেকে ঠিক করতে পারে ম্যাচের ভাগ্য... |
পুরো নাম: ট্রেভর হার্লি বেলিস
বয়স: ৪৯ বছর
১৫২ দিন
জন্ম: গোলবার্ন, নিউ সাউথ ওয়েলস
কোচিং অভিজ্ঞতা: ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে তোলা, ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে তোলা, ২০১২ বিগ ব্যাশ লিগে সিডনি সিক্সার্সকে চ্যাম্পিয়ন করা, ২০০৬ পুরা কাপে নিউ সাউথ ওয়েলস ব্লু-কে জেতানো। বর্তমানে কেকেআরের কোচ।
“ট্রেভর সব সময় নিজেকে লো প্রোফাইল রাখে। কিন্তু নিজের কাজের সঙ্গে কখনও আপস করে না।”
—গৌতম গম্ভীর |
পুরো নাম: এরিক ওয়েন সিমন্স
বয়স: ৫০ বছর
৭৩ দিন
জন্ম: কেপ টাউন, কেপ প্রভিন্স
কোচিং অভিজ্ঞতা: ২০০২-২০০৪ দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় দলের কোচ, আইপিএলের দ্বিতীয় সংস্করণে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের পরামর্শদাতা, ২০১০-২০১২ ভারতের বোলিং কোচ। বর্তমানে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের কোচ।
“সিমন্স আমাদের দলের চেহারাটা পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। ওর অভিজ্ঞতাও আমাদের দারুণ ভাবে সাহায্য করেছে।” —মর্নি মর্কেল |
|