সচিন তেন্ডুলকর, অভিনন্দন! রাজ্যসভায় মনোনীত হওয়ার জন্য!
পুণে শহরের চারদিক ছেয়ে গিয়েছে সচিনের মুখওয়ালা বিজ্ঞাপনে। সংখ্যায় দ্বিতীয় এবিপি মাঝা-র বিজ্ঞাপন। মরাঠি এই চ্যানেলটা এত কাল স্টার মাঝা ছিল। পয়লা জুন থেকে এবিপি আনন্দর মতোই নতুন নামে আবির্ভূত হচ্ছে।
তার না হয় চাঁদু বোড়ের শহরের টিভি দর্শককে জানানোর প্রাণপণ দায় রয়েছে। সচিনের হোর্ডিং হঠাৎ কেন? যখন রাজ্যসভায় তাঁর মনোনীত হওয়ার খবরটা ট্র্যাশে চলে গিয়ে তাঁকে গোপনে শপথ নিতে দেওয়া হবে কি না, সেটা লোকে জানতে চাইছে?
এক এক সময় মনে হচ্ছে, পুণের যে পুরপিতা হোর্ডিংগুলো আগাম ভাড়া নেন, তিনি এমন বিশ্বাসাচ্ছন্ন ছিলেন যে, ওয়াংখেড়েতে নাইটদের মুম্বই ইন্ডিয়ান্স হারাবেই। তখন তো পুণেতেই প্লে অফ সেমিফাইনাল খেলতে আসবেন সচিন!
শহরজুড়ে পুণে ওয়ারিয়র্সের যত বিজ্ঞাপন ছিল সব উধাও। পুণে ম্যারিয়ট হোটেল, যেখানে প্লে অফ সেমিফাইনালে অংশগ্রহণকারী দু’টো দল উঠেছে, সেখানে তো একটা বিরাট লাউঞ্জ ছিল পুণের হল অফ ফেম। হোটেল কর্তৃপক্ষ রাতারাতি সব সরিয়ে নিয়েছেন। সেমিফাইনাল কভার করতে এসে মনে হচ্ছে, শেষ দুইতে যাওয়ার যুদ্ধের আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে শহরের পক্ষে একটা মর্মান্তিক যুদ্ধ। পতন ঘটেছে সৌরভের নেতৃত্বে পুণে দুর্গের।
শহরে এত বড় একটা ম্যাচ হচ্ছে। মাঠে কাল ভিড় হওয়াও অবধারিত। কিন্তু সেই ব্যাকুলতা বা মেজাজ নেই। লবিতে গমগমে ভিড় নেই। প্রাণকেন্দ্র এম জি রোড থেকে শিবাজি নগর। ফের ম্যারিয়ট। সব ঘুরে মনে হল দিনের সবচেয়ে উত্তেজক আলোচনা: মিষ্টি আলফানসো আমের অবশেষে বাজারে ঢুকে পড়া। আড়াই ঘণ্টাটাক দূরত্বের রত্নগিরি থেকে আসে এই আম। অ্যাদ্দিন টক-টক হচ্ছিল, এ বার ব্র্যান্ডের মর্যাদা রাখতে পারে এমন ‘মিষ্টি’ এসেছে।
গৌতম গম্ভীরের নেতৃত্বে দেখলাম প্র্যাক্টিসে বার হচ্ছে কেকেআর। দারুণ ঝকঝকে দেখাচ্ছে গম্ভীরকে। সাড়ে পাঁচশোর ওপর রান করেই শুধু বসে নেই, মাঠের বাইরেটাও কড়া হাতে সামলাচ্ছেন। আগের দিন পুণে ম্যাচে ব্রেট লি চূড়ান্ত এগারোয় নাম নেই শুনে মাঠেই যাননি। স্টেডিয়াম থেকে ফিরে গম্ভীর বিধান দেন, ওকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হোক। এত সাহস হয় কী করে? তার পর বলেন, থাক টিমের সঙ্গে। খেলাব না। গম্ভীর মনোভাব অপরিবর্তিত রাখবেন কি না, জানি না। তবে ব্রেট লি সুড়সুড় করে অনুশীলনে গেলেন। |
তার একটু আগে চেক আউট করতে দেখা গেল দীপ দাশগুপ্তকে। সৌরভ-সহ টিম গত কাল যে যার মতো ফিরে গিয়েছে। টিমের রান্নাঘরের দায়িত্বে থাকা দীপ ফিরছেন সব গুছিয়ে-গাছিয়ে। খুব বিষণ্ণ, ম্লান মুখচোখ। ম্যাচ বা তার আগের দিন রাত্তিরে নিয়ম করে বৈঠকে বসতেন পনেরো তলার কোণের ঘরটায়। ওই ১৪০২ নম্বর ঘরটা হয়ে দাঁড়াল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অধিনায়ক জীবনের বিদায়ী তো বটেই, সবচেয়ে অভিশপ্ত ঘর। ক্রিকেটীয় সংস্কারে বিশ্বাসী নাইট সমর্থকেরা জানলে খুশি হবেন, অপয়া এই ঘরটার বর্তমান বাসিন্দার নাম বীরেন্দ্র সহবাগ!
সহবাগের দিল্লি ডেয়ারডেভিলস এবং গম্ভীরের কেকেআর দু’দলই আইপিএলের আধুনিকতম ভাইরাস নিয়ে যথেষ্ট সজাগ। যার নাম স্টিং অপারেশন। আইপিএলে এখন এমন সময় চলছে যে, সবচেয়ে অবিশ্বাস্য খবরটাও লোকে পাকা খবর হিসেবে বিশ্বাস করতে রাজি। প্লেয়াররা শুনছেন ব্রেকফাস্ট লাউঞ্জ এবং বারে গোপন ক্যামেরা নিয়ে মিডিয়া ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রয়োজনে অপরিচিত কোনও তরুণীকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করছে। প্লেয়ার সার্কিটের খবর, রবিবার রাতে ওয়েন পার্নেল আর রাহুল শর্মা জুহুর হোটেলে যে নৈশ পার্টিতে যোগ দিয়ে ফেঁসে গিয়েছেন, তা স্রেফ মহিলা চক্করে। নইলে ওঁরা দু’জনের কেউই ধূমপান বা মদ্যপান করেন না, ড্রাগ নেওয়া তো অনেক দূর। জুড়ি হিসেবে অবশ্য এরা অবিচ্ছেদ্য এবং কথা ছিল ওই পার্টিতে নতুন কিছু মহিলার সঙ্গে পরিচয়ের পর সোজা ভোরের ফ্লাইট ধরবেন। পুণে টিমে ঠাট্টা করে পার্নেল-রাহুলকে বলা হয় হাজব্যান্ড-ওয়াইফ। তাঁদের দাম্পত্য এমনই অটুট যে, রবিবার সন্ধেবেলা মুম্বইতে একসঙ্গে পুণে কর্তাদের বলেন, পরের বছর সৌরভ অধিনায়ক থাকলে ওয়ারিয়র্সে খেলতে উৎসাহিত বোধ করবেন না।
না সহারা, না বোর্ড, কেউই এই ‘দম্পতি’র সমর্থনে এগোচ্ছে না। সহারার বক্তব্য, মরসুম শেষ। তাই আমাদের দায় নেই। আর বোর্ড প্রেসিডেন্ট শ্রীনিবাসন নিজেই সোমবার মিডিয়ায় প্রকাশিত তাঁর পারিবারিক কেচ্ছা নিয়ে এমন বিব্রত যে ফ্রন্টফুটে আসার অবস্থায় নেই। বাজারে ডলারের তুলনায় টাকা যেমন পড়ছে, আইপিএলের ভাবমূর্তিও তেমনই। তাই বোর্ড পাল্টা সদর্থক প্রচারে নামল এ দিন। সবিস্তারে জানাল, কোন প্রাক্তন ক্রিকেটারকে আইপিএলের টাকা থেকে তারা কত সাহায্য করছে এবং সেই টাকাগুলো কী ভাবে কাকে কাকে ম্যাচের ফাঁকে বিলি করা হবে!
শাহরুখ খান শুনলাম মঙ্গলবার ম্যাচের আগে এসে পড়বেন। চ্যানেলে পরিবেশ সংক্রান্ত শো-তে এ দিন মজা করে বললেন, “সেই সব মানুষ, যারা স্টেডিয়ামে ভদ্র ব্যবহার করে না, তাদের আমি কেকেআরে নিই না।” কেকেআরে তাঁর ঘনিষ্ঠরা অবশ্য মালিকের অপমান ভুলতে পারছেন না। লক্ষ্মীরতন শুক্ল এ দিন আনন্দবাজারকে বলছিলেন, “সে দিন আমি খুব কাছে ছিলাম। শাহরুখের কোনও দোষই নেই। টিভিতে ওর মুখে যে গালাগাল শুনেছেন, সেটা হয়েছে সহ্যের শেষ সীমা ছাড়ানোর পর।” কেকেআরে কেউ কেউ এর চেয়েও গভীরতম প্রসঙ্গে ঢুকতে চান। সেমিফাইনালের আগে তাঁদের অসন্তুষ্টি, আজ অবধি শাহরুখ-কাণ্ডের জন্য মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দুঃখপ্রকাশ করল না কেন? আইপিএল চুক্তি অনুযায়ী মাঠটা তো তাদেরই এই দু’মাস লিজে নেওয়া। সে সময় এমসিএ কে?
বেঙ্কি মাইসোর অবশ্য অন্য আলোচনায় আগ্রহী। আইপিএল কেন এত বড় ম্যাচ তাঁদের ইডেনে খেলতে দিল না? পুণে না দিল্লির হোম মাঠ, না তাদের। কার পার্ক থেকে ম্যাচ টিকিট, সব ব্যাপারেই সংগঠকরা তাঁদের ধরছেন সফরকারী দল হিসেবে। পুণেতে শুধু একটাই সান্ত্বনা পিচ স্পিনারদের অনেক বেশি সাহায্য করবে। তাই টস জিতলে কেকেআরের ফাইনাল যাওয়ার সম্ভাবনা ঝকমকে থাকা উচিত। লর্ডসে এ দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হারের মধ্যে টুইটারে থাকা ডেভিড লয়েডের যাঁর কথা বারবার মনে পড়ছিল, সেই সুনীল নারিন যথারীতি নাইটদের সেরা আশা। সাকিব আছেন। আছেন ইকবাল আবদুল্লা।
কোনটাকে দিনের মেজাজ ধরা উচিত নাইটদের স্পিনের রামধনুতে প্রথম আইপিএল ফাইনাল উদ্ভাসিত দেখার আকাশ?
না হতমান ওয়াজেদ আলি শাহের মতো সৌরভ সাম্রাজ্যের পতন—
যব ছোড় চলে পুণে নগরী
কহে হাল কে হম পর কেয়া গুজরি! |