|
|
|
|
সরকারি প্রকল্পে কাদের বাড়ি, ‘সুপারিশ’ তৃণমূল সভাপতির |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
তিনি প্রশাসনের কেউ নন। নন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তা সত্ত্বেও শাসক-দলের ব্লক সভাপতি হওয়ার সুবাদে বিডিওকে চিঠি দিয়ে জানালেন, সরকারি গৃহ-প্রকল্প ‘আমার বাড়ি’তে কাদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়া জরুরি। বিডিও আবার সেই চিঠি পাঠিয়ে দিলেন গ্রাম পঞ্চায়েতের এক্সিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্টদের কাছে। এই ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার। দলীয় প্যাডে চিঠি লিখে তৃণমূল ব্লক সভাপতি এ ভাবে ‘সুপারিশ’ করতে পারেন কি না, তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। যাঁর চিঠি ঘিরে বিতর্ক, তৃণমূলের সেই ব্লক সভাপতি অলোক আচার্য অবশ্য এতে অন্যায়ের কিছু দেখছেন না। তিনি বলেন, “প্রকৃত গরিব মানুষ যাতে বঞ্চিত না হন, সে জন্য চিঠি লিখেছি। তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের নাম ‘আমার বাড়ি’ প্রকল্পের জন্য মঞ্জুর করার আবেদন রেখেছি।” আর ডেবরার বিডিও মালবিকা খাটুয়ার বক্তব্য, “ওই তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের কী পরিস্থিতি, এক্সিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্টদের তা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলেছি। এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।”
|
|
পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ কয়েকটি এলাকায় ‘আমার বাড়ি’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এই গরিব মানুষদের সরকারই বাড়ি তৈরি করে দেবে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ডেবরা ব্লকে এই প্রকল্পে ৭০টি বাড়ি তৈরি হওয়ার কথা। এখানে গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে ১৪টি। অর্থাৎ, প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকায় ৫টি করে বাড়ি তৈরি হতে পারে। ১৪টির মধ্যে ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েত সিপিএম পরিচালিত। ২টিতে ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। নিয়মমতো পঞ্চায়েতের তরফেই নামের তালিকা তৈরি করা হবে। কিন্তু বিডিওকে চিঠি দিয়ে অলোকবাবু লিখেছেন, ‘আমার বাড়ি প্রকল্পে সহযোগিতা পাইবার জন্য সমগ্র ডেবরা ব্লকের দুঃস্থ ও উপযুক্ত ব্যক্তিদের নামের তালিকা প্রদান করা হইল। আপনার নিকট প্রার্থনা, উপরিউক্ত নামগুলো আমার বাড়ি প্রকল্পের জন্য মঞ্জুর করিয়া বাধিত করিবেন।’ অথচ তালিকায় তৃণমূল পরিচালিত ডুঁয়া-১ ও খানামোহন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কারও নাম নেই। অর্থাৎ সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েত এলাকার সম্ভাব্য বাড়ি-প্রাপকদের নাম দিয়েই চিঠি দিয়েছেন অলোকবাবু। কিন্তু কেন? অলোকবাবু বলেন, “সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলো যাঁদের নাম পাঠিয়েছিল, তাঁরা সকলেই সিপিএম কর্মী-সমর্থক। আদৌ গরিব মানুষ নন। আমরা চাই, প্রকৃত গরিব মানুষ সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পান।”
বিডিও কেন দলীয় প্যাডে লেখা এই চিঠি গ্রাম পঞ্চায়েতের এক্সিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্টদের কাছে পাঠালেন? ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলো যে নামের তালিকা পাঠিয়েছিল, তাতে অসঙ্গতি রয়েছে বলে আগেই অভিযোগ এসেছিল। তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরাই অভিযোগ করেছিলেন, অনেক পঞ্চায়েতে বৈঠক না করে, কোনও রেজুলিউশন ছাড়া নামের তালিকা তৈরি করা হয়। বিডিও বলেন, “সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতগুলোকে বৈঠকের সিদ্ধান্তের কপিও পাঠাতে বলেছি।” যদিও বিডিও’র এই পদক্ষেপ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অনেকের বক্তব্য, গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে যে সব তালিকা এসেছে, সেখানে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁরা প্রকৃত গরিব কি না, তা খতিয়ে দেখা যেতে পারে। কিন্তু, কোনও দলের ব্লক সভাপতি যদি কোনও তালিকা দেন, তা খতিয়ে দেখা জরুরি নয়। এ প্রসঙ্গে সিপিএমের ডেবরা জোনাল কমিটির সম্পাদক তথা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ প্রাণকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, “এ ভাবে কেউ তালিকা দিতে পারে বলে জানতাম না। তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলো প্রকৃত গরিব মানুষের নাম পাঠিয়েছে, আর সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলো প্রকৃত গরিব মানুষকে বঞ্চিত রেখেছে, এমন ধারণাও ভুল।” তৃণমূল ব্লক সভাপতির পাঠানো তালিকায় সিপিএম পরিচালিত ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ৬০ জন মানুষের নাম রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে স্বজনপোষণের অভিযোগ মানতে নারাজ অলোকবাবু। তাঁর কথায়, “আমাদের তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁরা গরিব কি না, তদন্ত হোক। তাতে আপত্তি নেই। আমরা চাই, প্রকৃত গরিব মানুষকে এই প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হোক।” |
|
|
|
|
|