লোকপাল বিল সিলেক্ট কমিটিতে
বিপাকে সরকার, ভেস্তে গেল দায় চাপানোর চাল
লোকপাল বিল সিলেক্ট কমিটিতে তথা ঠান্ডা ঘরে পাঠানোর দায় মূলত ‘বন্ধু’ মুলায়মের দলের ঘাড়ে চাপাতে চেয়েছিল সরকার। কিন্তু বিরোধীদের চাপে সে চাল ভেস্তে গেল। শেষ পর্যন্ত দায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী নারায়ণস্বামীকেই রাজ্যসভায় ঘোষণা করতে হল, সরকার সংশোধিত বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দিচ্ছে। আগামী বর্ষা অধিবেশনের শেষ সপ্তাহের প্রথম দিনে এই রিপোর্ট পেশ হবে। অর্থাৎ ফের প্রশ্ন দেখা দিল বিলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে।
বিলটি এই ভাবে আটকে যাওয়ায় ফের সরব হয়েছেন অণ্ণা হজারে। তিনি ঘোষণা করেছেন, ২৫ জুলাই থেকে তাঁর সঙ্গীরা দিল্লির যন্তর-মন্তরে অনশনে বসবেন। শরীর ঠিক থাকলে তিনিও অনশন করবেন।
এমনিতেই লালু-মুলায়ম-মায়াবতীরা লোকপাল বিলের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের আপত্তিকে ঢাল করে এগোচ্ছিল সরকারও। তার উপরে সব দলের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হবে। কিন্তু রাজ্যসভায় যখন সেটি আনা হয়, সরকার সিলেক্ট কমিটির নামে বিলটি ঠান্ডা ঘরে পাঠানোর দায় নিজেদের ঘাড় থেকে সম্পূর্ণ ঝেড়ে ফেলার কৌশল নেয়। বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব পেশ করানো হয় সপা-র নরেশ অগ্রবালকে দিয়ে। সংসদীয় মন্ত্রী রাজীব শুক্ল প্রায় পাশে বসে নরেশকে দিয়ে প্রস্তাব পেশ করান। কিন্তু বিজেপি-বামরা তাতে বেঁকে বসে।
অরুণ জেটলি থেকে শুরু করে সীতারাম ইয়েচুরিরা চাইছিলেন, বিলটি ঠান্ডা ঘরে পাঠানোর দায় ‘বন্ধু’ দলের পরিবর্তে সরকার নিজের ঘাড়ে নিক। সীতারাম বলেন, “বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোয় আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু সরকার নিজে সেই ঘোষণা করুক।” অগত্যা বিরোধীদের চাপে নারায়ণস্বামীকেই ঘোষণা করতে হয়, সরকার এই বিলটি ১৫ সদস্যের সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দিচ্ছে। গোয়ার কংগ্রেস সাংসদ শান্তারাম নাইক এই কমিটির নেতৃত্ব দিতে পারেন। যার মধ্যে অরুণ জেটলি থেকে অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো সদস্যরা থাকবেন। কমিটিতে তাঁদের দলের প্রতিনিধিত্ব না থাকায় আপত্তি জানান আরজেডি সাংসদরা। মনমোহন সরকারের এক মন্ত্রীর কথায়, লোকপাল থেকে লোকায়ুক্তকে আলাদা করার পর তৃণমূল-সহ বিরোধীদের আপত্তির মূল জায়গা দূর সম্ভব হয়েছে। সংশোধিত বিলে বলা হয়েছে, কোনও রাজ্যে এই বিল চালু করতে হলে বিধানসভায় আলাদা করে প্রস্তাব পাশ করতে হবে। আগের বিলে বলা হয়েছিল, লোকপালের ধাঁচেই রাজ্যে লোকায়ুক্ত করতে হবে, তা থেকেও সংশোধিত বিলে সরে এসেছে সরকার। কিন্তু সিবিআইকে সরকারের আওতার বাইরে রাখা, লোকপালের নিয়োগ ও অপসারণের বিষয়, লোকপালের সদস্যরা কে হবেন, এগুলো নিয়ে এখনও সরকার ও বিরোধীরা একমত হতে পারেনি।
তার উপর লালু প্রসাদ, মায়াবতী ও মুলায়ম সিংহের মতো নেতারা মনে করছেন, বিলটির প্রয়োজনীয়তাই নেই। সংসদে আজ মায়াবতীও জানান, বিল নিয়ে তাড়াহুড়োর কিছু নেই। লালুর দলের সাংসদরা বলেন, এই বিলের দরকারই নেই। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এই দলগুলির সমর্থন যখন কংগ্রেসের প্রয়োজন, সেই সময় লোকপালকে কেন্দ্র করে তাদের চটাতেও চাইছে না সরকার। তা ছাড়া সরকার মনে করছে, অণ্ণা হজারের আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফলে লোকপাল বিল পাশ করা নিয়ে তাদেরও আগের মতো তাগিদ নেই।
লোকপাল নিয়ে এমন কিছু মাথাব্যথা নেই বিজেপির-ও। কিন্তু অণ্ণা হজারের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিল আটকে যাওয়ার দায় তারাও সম্পূর্ণ সরকারের উপরই রাখতে চায়। অরুণ জেটলির বক্তব্য, বিরোধীদের দাবি মেনে সরকার লোকপাল এবং লোকায়ুক্তকে পৃথক করার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু এই প্রস্তাবটি সংসদে পাশ করাতে হলেও দু’টি রাজ্য থেকে তা অনুমোদিত হয়ে আসা প্রয়োজন। সংসদের শেষ দু’দিনে তা করা সম্ভব নয়। তা জানা সত্ত্বেও বিলটিকে পিছোনোর উদ্দেশ্যেই সরকার অধিবেশনের শেষ লগ্নে বিলটি নিয়ে এল।
আবার পরে দলের মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, “গত অধিবেশনের শেষ দিনেও মধ্যরাতে সরকার বিলটি নিয়ে পিছু হঠেছে। আজও পিছু হঠল। সমাজবাদীকে সামনে রেখে তারা যা করার চেষ্টা করেছিল, তা-ও ফাঁস হয়ে গিয়েছে। সনিয়া গাঁধী দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বললেও কংগ্রেস যে দুর্নীতি রোধে কিছুই করতে চায় না, আজ তা ফের প্রমাণ হল।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.