ভিড়ে বেশ ভাটা, ‘প্রগতি’র মেলা ভরাচ্ছেন কর্মীরাই
‘সাফল্য’ প্রচারে ‘প্রগতি উৎসব’-এর চেহারাটা আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যেই অনেকটা বদলে গেল।
দু’দিন আগে যেখানে চোখ ধাঁধানো অনুষ্ঠানে প্রথম বর্ষপূর্তি পালন করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার, সোমবার সন্ধ্যায় সেই মিলনমেলা চত্বরই খানিকটা বিবর্ণ। স্টলে স্টলে সরকারি কর্তারা হাজির থাকলেও আমজনতার ভিড় চোখে পড়ার মতো কম। ফলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, সাধারণ মানুষই যদি সে ভাবে না-আসেন, তা হলে বিস্তর খরচ করে এই সমারোহের ‘যৌক্তিকতা’ কতটা?
এ দিন মেলা ঘুরে দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ স্টলে শুধু কর্মী-অফিসারদেই ভিড়। বড় বড় পাখা চালিয়ে তাঁরা বসে আছেন চেয়ার পেতে। জানা গেল, মহাকরণের অলিখিত নির্দেশ অনুযায়ী যুগ্ম সচিব স্তরের দু’জন অফিসারকে প্রতি দিন দফতরের স্টলে উপস্থিত থাকতেই হবে। এবং সেই নির্দেশ মেনে তাঁরা প্রত্যেকে দফতরের ২৫-৩০ জন করে কর্মী নিয়ে মিলনমেলায় হাজির। কিন্তু সাধারণ লোক কই?
এক অফিসার বলেন, “লোক আগে এসেছে। কাজের দিনে আর কত আসবে? তা ছাড়া মানুষ কাজ চায়। ছবি-ছড়ায় প্রকল্পের বিবরণ হয়তো অতটা টানছে না।”
সুনসান
প্রায় ফাঁকা মিলনমেলা প্রাঙ্গণ। নানা আয়োজন থাকলেও ভিড়
নেই ‘প্রগতি উৎসব’-এ। সোমবার সুদীপ আচার্যের তোলা ছবি।
এ দিন দুপুর দু’টোয় মেলা খোলার পর থেকে নানা দফতরের বোর্ড লাগানো গাড়ি একের পর এক মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকেছে। কিন্তু মন্ত্রীরা কোথায় গেলেন? সচিবেরা? মেলায় ‘ডিউটিরত’ বিভিন্ন দফতরের কর্মীরা জানান, রবিবার চার-পাঁচ জন মন্ত্রী এসেছিলেন। সোমবার তা-ও নয়। মহাকরণে এক সচিবের কথায়, “রবিবারেও নেতাজি ইন্ডোরে হাজিরা আবশ্যিক ছিল। তাই সপ্তাহের প্রথম দিনে আর মেলামুখো হইনি।” আর এক সচিবের মন্তব্য, “কী-ই বা আর করার আছে? অন্য অফিসারেরা তো আছেন!”
লোক টানতে অবশ্য চেষ্টার কসুর করেনি কিছু দফতর। যেমন এ দিন বিকেল থেকে পর্যটনের স্টলে শুরু হয়েছে ছৌ নাচ। নানা রঙের আলোর খেলা আর বাজনার আকর্ষণে কিছু লোক স্টলে ঢুকলেও কিছুক্ষণ পরে ফের হাঁটা দিয়েছেন পাশের স্টলে। অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতর লোক সংস্কৃতির নমুনা প্রদর্শনের আয়োজন করেছে। স্টলে ঢোকার মুখে অস্থায়ী মঞ্চে গান গাইছেন এক বাউল। সামনে দাঁড়িয়ে বেশ ক’জন শ্রোতা। ভিতরে এক মহিলা কর্মী জাতি শংসাপত্র, আইএএস কোচিং ও নিরাপত্তারক্ষীর প্রশিক্ষণ নেওয়ার আবেদন ‘অনলাইন’-এ নথিভুক্ত করার জন্য বসে আছেন কম্পিউটারের সামনে। কিন্তু লোক কই?
জানা গেল, তাঁর কাছে এখনও একটাও আবেদন জমা পড়েনি। তবে এরই মধ্যে ‘ভিড়’ বেশি পুলিশের স্টলে। বিপর্যয় মোকাবিলার কর্মীরা কী ভাবে আগুনের সঙ্গে লড়াই করে বহুতল থেকে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করেন, স্টলের ভিতরে চলছে তারই প্রদর্শনী। কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের সঙ্গে ওই স্টলেই রয়েছে কারা দফতর। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পুরুষ-মহিলাদের কেউ ছবি আঁকছেন, কেউ চটের উপরে সুতোর কাজ করছেন, কেউ বা মাটি দিয়ে নানান মডেল বানাচ্ছেন। দড়ির ঘেরাটোপে রক্ষীদের নজরদারির মধ্যেও দিলীপ লেট-সুজাতা দত্ত-শম্ভু মুর্মু-মন্টু দাসেদের হাতের কাজ দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছেন অনেকে।
‘সাফল্য’ প্রচারের পাশাপাশি মেলায় ‘হাতের কাজ’ বিক্রির অনুমতি পেয়েছে স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও কুটিরশিল্প দফতর। সেখানেও বিকিকিনি নগণ্য। রেশম শিল্প সমবায়ের এক কর্তার আক্ষেপ, “পাঁচ হাজার টাকারও মাল বিকোয়নি। কিনবে কে? লোক কোথায়?”
‘প্রগতি’ প্রচারের মিলনমেলায় এখন এটাই প্রশ্ন।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.