পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত কাদের খানের বান্ধবী, টালিগঞ্জের অভিনেত্রী নুসরত জহান জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে সত্য গোপন করেছিলেন বলে দাবি করল কলকাতা পুলিশ। সেই কারণে নুসরতের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে সত্য গোপনের অভিযোগে মামলাও দায়ের করতে পারে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।
কোন সত্য গোপন করেছিলেন নুসরত?
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি পার্ক স্ট্রিটের একটি নাইটক্লাব থেকে বেরিয়ে গাড়ির মধ্যে ধর্ষিতা হওয়ার
অভিযোগ করেছিলেন এক তরুণী। ওই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সুমিত বজাজ, নাসির খান এবং রুমান খানকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। ১৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় নুসরতের কাছে গোয়েন্দারা জানতে চেয়েছিলেন, কাদের কোথায় রয়েছে। তাঁর কাছে এ-ও জানতে চাওয়া হয়, কাদেরকে তিনি ওই ঘটনার পরে দেখেছেন কি না। গোয়েন্দাদের অভিযোগ, নুসরত সে দিন জানিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে কাদেরের সম্পর্ক থাকলেও ওই ঘটনার পরে সে কোথায় রয়েছে, তা তিনি জানেন না। |
কাদেরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা স্বীকার করে ২০ ফেব্রুয়ারি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও নুসরত কথা বলেছিলেন। সেখানেও তিনি বলেন, পার্ক স্ট্রিটের ঘটনার পরে তাঁর সঙ্গে কাদেরের কোনও যোগাযোগ হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ওই খবর দেখে কাদের ওই দিনই নুসরতের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে। সেই ফোনের সূত্র ধরে গোয়েন্দাদের একটি দল ওই রাতেই কাদেরের খোঁজে মুম্বই রওনা হয়।
গোয়েন্দারা দাবি করেন, মুম্বইয়ে গিয়েই জানা যায়, নুসরত গোয়েন্দাদের কাছে সত্য গোপন করেছেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি যে দিন সুমিত, রুমান এবং নাসির ধরা পড়ে, সে দিন দুপুর থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত (১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি সকাল) নুসরত জহান মুম্বইয়ের একটি হোটেলে কাদেরের সঙ্গেই ছিলেন।
গোয়েন্দারা জানান, কাদের খান মুম্বইয়ের জুহু বিচের একটি হোটেলে ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টে ২০ মিনিট থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টা ৫ মিনিট পর্যন্ত ছিল। হোটেলের সেই ঘর কেবল কাদের খানের নামেই ‘বুক’ করা ছিল। কিন্তু জুহু বিচের ওই হোটেল ছেড়ে কাদের ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি সকাল পর্যন্ত অন্য একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হোটেলে ছিল। সেখানে ঘর ‘বুক’ করা হয় কাদের খান ও নুসরত জহানের নামে। ওই হোটেলের নথি গোয়েন্দা পুলিশ চার্জশিটের সঙ্গে আদালতে জমা দিয়েছে।
পুলিশের দাবি, পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডের পরে কাদের কোথায় লুকিয়ে রয়েছে, নুসরত তা জানতেন। কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) দময়ন্তী সেন নিজে কথা বলেছিলেন নুসরতের সঙ্গে। কাদেরের গতিবিধি নিয়ে তখন বিস্তারিত জানতে চান প্রাক্তন গোয়েন্দা-প্রধান। কিন্তু নুসরত জানাননি কাদের তখন কোথায় রয়েছে। এই সত্য গোপনের অভিযোগেই নুসরতের নামে মামলা দায়ের করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে পুলিশকর্তারা জানিয়েছেন।
কেন সত্য গোপন করেছিলেন নুসরত?
এ দিন নুসরত সে প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আমি কাদেরের সঙ্গে ছিলাম না। মুম্বইয়ে নিজের কাজের সূত্রে গিয়েছিলাম। এর চেয়ে বেশি আর কিছু বলব না।” |