করিমপুর রেলগেট সংলগ্ন এলাকা। রেলগেট পেরিয়ে বাইপাস রাস্তা ধরে নলহাটি পাথর শিল্পাঞ্চলে যাতায়াতকারী লরি-ট্রাক, ট্রাক্টর থেকে পুরসভার নিজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে টোল আদায় করা হয়। অথচ বাইপাস রাস্তায় ধূলো-দূষণে জেরবার হন সাধারণ মানুষ। রেলগেট পড়ে থাকলে বাইপাসে ভয়াবহ জ্যাম তো আছেই, তার সঙ্গে আছে খানাখন্দে ভরা রাস্তায় যন্ত্রাংশ ভেঙে গাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। স্বাভাবিক ভাবে ওই এলাকায় ওভারব্রিজ তৈরি করা প্রয়োজন। কিন্তু তা হয়নি।
এ ছাড়া, টোল আদায় কেন্দ্র ছাড়িয়ে তৈরি হওয়া ঢালাই রাস্তা ধরে ঢোকা যায় ১১ নম্বর ওয়ার্ডে। ওই রাস্তার ধারে রয়েছে কমিউনিটি সেন্টার। অথচ ওয়ার্ডের শাপাড়া, মাঠপাড়া, বাইপাস ধারের এলাকায় ঢুকলে দেখা যাবে নিকাশি নালা এখনও অনেক জায়গাতেই গড়ে ওঠেনি। স্থানীয় বাসিন্দা হাসনেহারা বিবি, ফয়েজা বিবি, মর্জিনা বিবিদের অভিযোগ, “বর্ষাকালে এলাকায় জল দাঁড়িয়ে যায়। জমা জলে চলাচলে দুর্গম হয়ে ওঠে এলাকা।” বাসিন্দাদের আরও ক্ষোভ, “ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নিজের লোকেদের ক্ষোভ মেটাতে গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে ঘর পাইয়ে দিয়েছেন। অথচ প্রকৃত প্রাপকদের বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।” ওই বাসিন্দাদের দাবি, এলাকার এক দুঃস্থ বিধবার জায়গা থাকা সত্ত্বেও তাঁকে ঘর দেওয়া হয়নি। ছেলেমেয়েদের নিয়ে বর্তমানে ওই স্বামী হারা বধূ এখন মুম্বইয়ে পরের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। |
শাপাড়া পেরিয়ে পৌঁছলাম মণ্ডল পাড়ায়। সেখানে খড়ের ছাউনি দেওয়া ভগ্নপ্রায় এক মাটির বাড়িতে বাস ফিরোজা বিবির। ফিরোজা বিবি-সহ ৬ জন ছোট্ট এক খোপের ঘরে বাস করেন। ঘরের মেঝেতে উনুনে রান্না করছিলেন ফিরোজা বিবি। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “ঘরটা বসে গিয়েছে। পেছনের দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। যে কোনও সময় ঘর চাপা পড়ে মরে যেতে পারি। এই অবস্থায় বাস করলেও কাউন্সিলর আমাদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেন না।” ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রতি তাঁর অভিযোগ, “কাউন্সিলরকে কতবার বললাম আমাকে একটা ঘর করে দিতে। কিন্তু আজও অবধি কোনও সদুত্তর পেলাম না।” অন্য দিকে, মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দা আয়নাল শেখ, কালিয়া বেগমদেরও ক্ষোভ, “এই পুরসভা ঘর নির্মাণ প্রকল্পে প্রকৃত সামর্থ্যহীনদের বঞ্চিত করেছেন।” এলাকার পুকুর সংস্কার নিয়েও বাসিন্দাদের গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ রয়েছে। বাসিন্দারা জানালেন, এলাকার গোয়াঘরা পুকুরটি সংস্কারের দাবি জানিয়েও কাজ হয়নি। তাঁদের দাবি, এলাকায় পুকুর সংস্কার না হওয়ার জন্য দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সংস্কারের অভাবে পুকুরের জলও পচে গিয়েছে। ফলে বাসিন্দারা সেই জল ব্যবহার করতে পারছেন না। অন্য দিকে, পুরসভার ট্যাপ কলের জলও খুব অল্প সময়ের জন্য পান বাসিন্দারা। তার পরিমাণও স্বল্প। ফলে গৃহস্থালীর সব কাজ করা যায় না ওই জলে। আবার নলকূপগুলিও তুলনায় অনেক দূরে রয়েছে। সব মিলিয়ে এই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিত্যদিন জল সঙ্কটে পড়তে হয়। মণ্ডলপাড়া ছাড়িয়ে মুন্সিপাড়া। সেখালকার কবরস্থান সংলগ্ন এলাকার পুকুরের জল নিকাশি নালার অভাবে বর্ষার সময় ছাপিয়ে যায়। সেই জল পুকুরের পূর্ব পাড়ের বেশ কিছু বাড়িতে ঢুকে যায় বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।
বিদায়ী কাউন্সিলর, তৃণমূলের একরামুল হকের বাড়ির সামনের রাস্তায় গিয়ে দেখা গেল সংস্কারের অভাবে জায়গায় জায়গায় খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। ভাঙা রাস্তা প্রসঙ্গে কাউন্সিলর বলেন, “এ বারে রাস্তাটির কিছু অংশ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী দিনে বাকি কাজ হবে।” এলাকার একটা অংশের মানুষের অভিযোগ, গরীব মানুষের বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে প্রকৃত প্রাপকদের গৃহ নির্মাণ করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে একরামুলবাবুর দাবি, “একলাখি গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে প্রকৃত প্রাপকদেরই ঘর তৈরি হয়েছে।” তিনি বলেন, “প্রথম দিকে এই প্রকল্পে গৃহনির্মাণ নিয়ে মানুষকে বোঝাতে সময় লেগেছে। পরে মানুষ তা বুঝতে পেরেছেন।”
অন্য দিকে, ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী আয়েষা বিবি বলেন, “ওয়ার্ডে কোনও শিশু শিক্ষাকেন্দ্র, প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। স্কুলের অভাবে ওয়ার্ডের ছেলেমেয়েদের অন্য ওয়ার্ডে গিয়ে পড়াশোনা করতে হয়।” তাঁর অভিযোগ, “এলাকায় নির্মিত কমিউনিটি সেন্টারের এখনও কোনও রেজিস্ট্রেশন হয়নি। অথচ পুরসভা এই প্রকল্পে রাজ্যের সেরা হয়ে পুরস্কার নেয় কী করে!” তাঁর কটাক্ষ, “গৃহনির্মাণ নিয়ে মানুষের এত ক্ষোভ। কিন্তু কাউন্সিলররা গৃহ নির্মাণের পুরস্কার পাওয়া নিয়ে বাড়াবাড়ি করছেন!” সিপিএম প্রার্থী শের মহম্মদও কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তাঁর দাবি, “বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে প্রকৃত গরিবরাই বঞ্চিত। দু’বারের কাউন্সিলর রাস্তাঘাট সংস্কার, পানীয় জলের ব্যবস্থা-- এই ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে পারেননি।”
তাই রাজনৈতিক মহলের ধারণা, বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে ঘর নির্মাণ নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যে ভাবে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে, এ বারের ভোটের বাজারে নির্ণায়ক হয়ে উঠতে পারে এই বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজই।
|
নজরে নলহাটি |
ওয়ার্ড ১১ |
• প্রাথমিক স্কুল নেই। নিকাশি নালার অভাবে কিছু এলাকা বর্ষায় ডুবে যায়।
• ব্যবহার্য পুকুর সংস্কার করা হয় না। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
• মাঠপাড়া এলাকায় এখনও রাস্তাঘাট ও বিদ্যুৎ পরিষেবার খামতি আছে। |
ওয়ার্ডের সার্বিক উন্নয়নে দু’বারের কাউন্সিলর ব্যর্থ।
কমিউনিটি সেন্টারের রেজিস্ট্রেশন এখনও হয়নি। মাঠপাড়া,
বাইপাস এলাকার বাসিন্দারা পরিষেবা পাচ্ছেন না।
আয়েষা বিবি, কংগ্রেস প্রার্থী |
২৪ ঘণ্টা ওয়ার্ডে পরিষেবা দিয়ে ৯৯ শতাংশ কাজ
শেষ করেছি। এক সঙ্গে সকলকে বাড়ি তৈরি করে
দেওয়া যায়নি। প্রাথমিক স্কুল গড়ার চেষ্টা চলছে।
একরামুল হক, তৃণমূল কাউন্সিলর |
|