এক অপূর্ব কালীমূর্তি। নাম শবশিবা মাতা। অর্থ্যাৎ, শবদেহের উপরে ভোলানাথ। তার উপরে দণ্ডায়মান মাতা। প্রতি বছর ৮ জৈষ্ঠ্য থেকে টানা চার দিন দেবী পূজিত হন মন্তেশ্বরের খ্যাদরা গ্রামে। পুজো ঘিরে শুরু হয় উৎসব। বসে মেলাও।
এ বছর পুজো শুরু হচ্ছে আজ, মঙ্গলবার থেকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, সে প্রায় ৫০০-৬০০ বছর আগের কথা। নিত্যানন্দ মহাপ্রভু প্রয়াগের কুম্ভমেলায় গিয়ে দেখেছিলেন শবশিবা মাতার মূর্তি। সেই মূর্তির অনুকরণে নিত্যানন্দ নবদ্বীপের ব্যাধরাপাড়ায় প্রতিষ্ঠা করেন শবশিবা মাতার মূর্তি। মন্তেশ্বরের খ্যাদরা গ্রামের বাসিন্দারা নবদ্বীপের রাসে সেই মূর্তি দেখে অনুপ্রাণিত হন। প্রায় ২৫০ বছর আগে তাঁরা দেবীর প্রতিষ্ঠা করেন গ্রামে। সেই থেকে প্রতি বছর গ্রামে পূজিত হন দেবী। |
শুধু খ্যাদরা গ্রামই নয়, আশপাশের পারুলিয়া, জুগ্রাম, বামুনিয়া-সহ বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারাও পুজো উপলক্ষে ভিড় জমান। গ্রামের বাসিন্দা বর্ষীয়ান অমর চক্রবর্তীর কথায়, “বিয়ের পরে কনেকে নিয়ে যাওয়া বা আসার সময়ে প্রত্যেকে মন্দিরে আসেন। দেবীর আর্শীব্বাদ নিয়ে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন।” আর এক বাসিন্দা শ্যামসুন্দর ঘোষ বলেন, “ছোট থেকেই দেখছি ধূমধাম করে চলছে শবশিবা মাতার পুজো। আমাদের বিশ্বাস, যে কোনও বিপদে মাকে স্মরণ করলেই তা কেটে যায়।”
গ্রামে পুজো উপলক্ষে বসে মেলা। পসরা সাজিয়ে আসেন দূরদূরান্তের ব্যবসায়ীরা। পুজোর সময়ে গ্রামে আসেন আত্মীয়েরা। বসে যাত্রার আসর। এক সময় নামিদামি যাত্রার দল আসত। তবে এখন আর তা নেই। তাই গ্রামের বাসিন্দারাই যাত্রায় অভিনয় করেন। গ্রামবাসী সৌরেন মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “ এই পুজোই আসলে আমাদের গ্রামের দুর্গোৎসব। শবশিবা মায়ের পুজোয় যা ধুম হয়, তা দুর্গা পুজোতেও হয় না।”
নিয়ম অনুযায়ী, পুজোর শুরুতেই গ্রামের পুরুষ ও মহিলারা মন্দিরের পাশে জরুনি পুকুরে স্নান করে এক সঙ্গে দণ্ডী কাটতে কাটতে মন্দিরে গিয়ে মানত করেন, পূজো দেন। দেবীর বিসর্জনে কোনও শোভাযাত্রা হয় না গ্রামে। ওই জরুনি পুকুরে কার্যত নিঃশব্দেই দেবীর বিসর্জন হয়।
চোখের জলে দেবীকে বিদায় জানায় খ্যাদরা। বলে, আবার এসো মা! |