পাখা তৈরি করেই পাল্টেছে দিন
বোরো ধান তোলার পরে বেশির ভাগ সময়েই কোনও কাজ থাকত না। সব সময় মিলত না একশো দিনের কাজও। টেনেটুনে সংসার চালাতে হত বাড়ির মেয়েদের। গত বছর দুয়েকে অবস্থাটা খুব বেশি না পাল্টালেও অভাবের সেই তীব্রতা খানিকটা কমেছে কাটোয়ার শ্রীখণ্ড গ্রামের সামন্তপাড়ায়। সৌজন্য, গ্রামের মহিলারা। পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে নাম লিখিয়ে ওই পাড়ার মেয়েরা তৈরি করছেন তালপাতার হাতপাখা। মার্চ-এপ্রিলে যখন মাঠে আর কাজ থাকে না, সংসার চালাতে ওই মেয়েদের পাখা-বিক্রির টাকাই তখন একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। তফসিলি জাতি ও উপজাতি অধ্যুষিত ওই পাড়ার বেশির ভাগ মহিলাই এখন সেই সময়ে তালপাতার পাখা তৈরি করেন। আর তা বাজারে বিক্রি করে আসেন বাড়ির পুরুষেরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগেও এলাকায় পাখা তৈরির চল ছিল। অবসরের সময়ে তালপাতা কুড়িয়ে পাখা তৈরি করতেন পাড়ার মেয়েরা। সেই পাখা অবশ্য তখন গ্রামের বাইরে যেত না। পাড়ার এক প্রবীণ মহিলা মুক্তি পণ্ডিত বলেন, “আগে খুব অল্প পরিমাণে পাখা তৈরি হত। গ্রামেই সব বিক্রি হয়ে যেত। চাষের কাজ না থাকলে সংসার চলত না বললেই চলে।” এখন সেই পাখারই বাজার তৈরি হয়েছে গ্রামের বাইরে। বর্ধমান ও কাটোয়া শহরে। গ্রামের বাসিন্দা সন্টু পণ্ডিত, কাইরাম পণ্ডিত, বিশ্বনাথ পণ্ডিতরা জানান, সপ্তাহে দু’তিন দিন বর্ধমান ও কাটোয়া শহরে গিয়ে বড় ব্যবসায়ীদের কাছে তাঁরা ওই পাখা দিয়ে আসেন। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হয় এতে। তাঁদের দাবি, “১০০ দিনের কাজের সুযোগ থাকলেও প্রতিদিন কাজ পাওয়া যায় না। বোরো চাষ শেষ হওয়ার পর বাড়ির মেয়েরা পাখা তৈরি করে। তা বিক্রি করে যেটুকু যা আয় হয়, তাতেই চলে সংসার।”
শ্রীখণ্ড গ্রামে কাজে ব্যস্ত মহিলারা। নিজস্ব চিত্র।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দু’বছরে এলাকায় বেশ কিছু স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। পাড়ার মেয়ে-বৌ’রা কখনও একা বাড়িতে বসে, কখনও বা একসঙ্গে তৈরি করেন পাখা। বিশেষ করে নিয়মিত রোজগার যখন বন্ধ হয়ে যায়, পাখা তৈরির এই কাজ করেই সামান্য আয়ের মুখ দেখেন তাঁরা। একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সভানেত্রী রুম্পা পণ্ডিত বলেন, “আমরা একটা স্কুলে রান্নার কাজ করি। এই মরসুমে স্কুল ছুটি। রান্নার কাজ বন্ধ থাকায় আমাদেরও রোজগার বন্ধ। এই সময়ে তালপাতার পাখা তৈরি করে সংসার চালাতে হয়।” গ্রামের এক বাসিন্দা বাসন্তী পণ্ডিত বলেন, “পাখা তৈরি করে যা আয় হয়, তাতে বাড়ির ছেলে-মেয়েদের পড়ার খরচ, সংসারের নুন-হলুদ কেনার খরচটুকু উঠে আসে।”
গ্রামের মহিলাদের দাবি, অন্য ব্যবসার ক্ষেত্রে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি চড়া সুদে টাকা ধার করে কাঁচামাল কেনে। ফলে লাভের বেশির ভাগ অংশ চলে যায় ধার শোধ করতেই। কিন্তু পাখা তৈরিতে সেই সমস্যা নেই। পাখা তৈরির উপকরণ কেনার খরচ তেমন নেই। বাঁশ আর রং কিনতেই যা সামান্য খরচ। তবে তাঁদের আক্ষেপ, স্বনিভর্র গোষ্ঠীর সব সদস্যরা একত্রে বসে কাজ করার জন্য যদি একটি ঘর পাওয়া যেত, তা’হলে আরও বেশি সংখ্যায় পাখা তৈরি করতে পারতেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, বাজারে পাখার চাহিদা রয়েছে। বিপণন ব্যবস্থা ভাল হলে তাদের আয় আরও বাড়ত। শ্রীখণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দীপক মজুমদার বলেন, “ওই মহিলারা যাতে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পান, তার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি, একটি ঘর তৈরি করে দেওয়ার চেষ্টাও করা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.