মহিলাদের প্রতি যৌন হয়রানির শাস্তি আরও কঠোর করতে রাজ্য সরকারকে প্রস্তাব দিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ ধারা অনুযায়ী, কোনও মহিলাকে হেনস্থা করা হলে বা করার চেষ্টা হলে তা জামিনযোগ্য অপরাধ। এই ধারায় অপরাধীর দু’বছর পর্যন্ত জেল বা জরিমানা অথবা দু’টিই একসঙ্গে হতে পারে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের হেনস্থা নিয়ে ক্রমবর্ধমান অভিযোগের নিরিখে আইনের এই ধারা সংশোধন করার প্রস্তাব দিয়েছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষকে লেখা চিঠিতে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় সুপারিশ করেছেন, দোষীর কারাদণ্ডের মেয়াদ ন্যূনতম পাঁচ বছর ও সর্বাধিক সাত বছর করা হোক। পাশাপাশি এই অপরাধকে জামিন অযোগ্য অপরাধ হিসাবে ঘোষণা করা হোক।
অশোকবাবুর কথায়, “রাজ্যে একের পর এক শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের অভিযোগে মানবাধিকার কমিশন উদ্বিগ্ন। তাই আমরা চিঠি দিয়ে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ ধারা সংশোধনের আবেদন জানিয়েছি।” ১৯৯০ সালে পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের যৌন হয়রানির ৩৫৭টি ঘটনা ঘটেছিল। ২০১১ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৩২০। এর আগে একাধিক রাজ্য এই আইন সংশোধন করেছে বলে অশোকবাবু জানান। তিনি বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ও বিবেকানন্দের সার্ধশতবর্ষে রাজ্য সরকার এটা করলে পশ্চিমবঙ্গের জন্য সেরা উপহার হবে।”
পার্ক স্ট্রিট থেকে শুরু করে কাটোয়ায় চলন্ত ট্রেনে মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগ, বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে মূক-বধির রোগিণীকে ধর্ষণের অভিযোগ, কালিকাপুরে মহিলার শ্লীলতাহানি, সোনারপুরে বাবার সামনে মেয়েকে হেনস্থা, বিরাটিতে তরুণীর শ্লীলতাহানির অভিযোগের মতো ঘটনায় ইতিমধ্যেই রাজ্য রাজনীতি যথেষ্ট উত্তপ্ত। এর মধ্যে মানবাধিকার কমিশনের এই চিঠি অন্য মাত্রা যোগ করল। রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষ জানিয়েছেন, তাঁরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। তিনি বলেন, “রাজ্যে নারীদের উপর আক্রমণের ঘটনা বাড়ছে না কমছে, সে বিষয়ে কোনও মন্তব্যে যাব না। তবে মানবাধিকার কমিশনের চিঠি আমরা পেয়েছি। আইন সংশোধনের বিষয়টি বিবেচনার জন্য বিচারবিভাগের ল সেল-এ পাঠানো হয়েছে।”
কমিশন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও ওড়িশা ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ ধারায় কিছু সংশোধনী এনে একে আরও কঠোর করেছে। অন্ধ্রপ্রদেশে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ ধারা সংশোধন করে জেলের মেয়াদ ন্যূনতম পাঁচ বছর ও সর্বাধিক সাত বছর করা হয়েছে। মধ্যপ্রদেশে ৩৫৪এ ধারা এনে ন্যূনতম এক বছর এবং সর্বাধিক ১০ বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানা কার্যকরা করা হয়েছে। ওড়িশাও আইন সংশোধন করে যৌন হয়রানিকে জামিন-অযোগ্য অপরাধ বলে ঘোষণা করেছে। |