বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দরজা খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে রাজ্য সরকার। প্রয়োজনে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়কেও স্বাগত জানাতে প্রস্তুত তারা। শনিবার সকালে একটি বণিকসভা ও ম্যানেজমেন্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সভায় এ কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তবে বিষয়টি প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী।
রাজ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে দেওয়া সম্পর্কে বরাবরই আপত্তি ছিল তিন দশক ক্ষমতায় থাকা বাম সরকারের। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও তাই। এক সময় বেশ কিছু নামী বেসরকারি সংস্থা এ রাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার পরিকল্পনা করলেও তাতে সায় দেয়নি আলিমুদ্দিন। সিপিএম-এর প্রয়াত রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাসের এ ব্যাপারে অনীহা সুবিদিত ছিল। তবে কয়েক বছর আগে এই ব্যাপারে একেবারে ব্যতিক্রমী একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৎকালীন বাম সরকার। যখন অম্বানীদের উদ্যোগে একটি বেসরকারি তথ্য-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ায় সায় দিয়েছিল রাজ্য সরকার। যদিও এখনও তা দিনের আলো দেখেনি।
এ রাজ্যে এ পর্যন্ত একটিই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে রামকৃষ্ণ মিশনের উদ্যোগে। তবে রাজ্যে বাম আমলে তা গড়ে উঠলেও এর জন্য সংশ্লিষ্ট আইন পাশ হয়েছিল সংসদে।
রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা বাম আমলে যে ভাবে পরিচালিত হত, নয়া সরকার যে তার থেকে অনেকটাই ভিন্ন পথে চলতে আগ্রহী, ক্ষমতায় এসেই সে কথা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রেসিডেন্সি কলেজের জন্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের নিয়ে মেন্টর গ্রুপ গড়া, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় রাজনীতির দাপট কমাতে আইন-সংশোধন ইতিমধ্যেই নতুন সরকারের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গীর পরিচয় তুলে ধরেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দরজা খুলে দেওয়ার পথে বামেরা এগোয়নি। কিন্তু সেই পথে পা ফেলতে উদ্যোগী হয়েছে বর্তমান রাজ্য সরকার। যদিও এই ক্ষেত্রে তাঁরা তাড়াহুড়ো করার পক্ষপাতী নন বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে রাজ্যে উচ্চশিক্ষার বিকাশের জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যে প্রয়োজন, তা-ও তিনি গোপন করেননি।
বাম আমলে অবশ্য বেশ কিছু বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যানেজমেন্ট, বি-এড, আইন, এমনকী সাধারণ ডিগ্রি কলেজও খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রেই সেই অভিজ্ঞতা খুব একটা ভাল নয়। উপযুক্ত পরিকাঠামো এবং যোগ্য শিক্ষক না থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় ওই সব কলেজে বিভিন্ন বিষয়ের পঠন-পাঠন চালানো হয় বলে অভিযোগ। মন্ত্রী রাতে বলেন, “রাজ্যে বেসরকারি কলেজের অভিজ্ঞতা তেমন ভাল নয়। অনেক সময়ই পঠন-পাঠনের ফি বাবদ মাত্রাতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এমনকী, দেশের অন্য যে সব রাজ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেগুলির বিরুদ্ধেও নানা রকম অভিযোগ শোনা যায়। তাই সব দিক বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
মন্ত্রী জানান, শুরুতেই কোনও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের পঠন-পাঠনে অনুমতি দেওয়ার পক্ষপাতী নয় রাজ্য। তিনি বলেন, “আগে স্নাতকোত্তরের অভিজ্ঞতা দেখে নিয়ে তবেই স্নাতক স্তরের কথা ভাবা হবে।” কোনও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই শাখা খোলার ব্যাপারে রাজ্য সরকারের অনুমতি চেয়েছে কি না, সে সম্পর্কে অবশ্য কিছু জানাতে চাননি ব্রাত্যবাবু। তবে তিনি বলেন, “রামকৃষ্ণ মিশনের মতো কোনও নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান বা বিদেশের কোনও প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় যদি এই কাজে এগিয়ে আসে, তাতে রাজ্যের ভাল হবে বলেই আমাদের মনে হয়।’’
রাজ্যে ১৪টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে আগ্রহী। তার পরেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন কেন? শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “স্নাতকোত্তর পড়ার চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এলে পড়ুয়াদের সুবিধা হবে। তা ছাড়া এতে রাজ্যের কিছু আয়ও হবে।” |