আগাম লোকসভা নির্বাচন নিয়ে গত কাল করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যকে আজ ‘ব্ল্যাকমেলিংয়ের রাজনীতি’ বলে কটাক্ষ করেছে সিপিএম। আর বিজেপি প্রত্যাশিত ভাবেই মমতাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, যত তাড়াতাড়ি তিনি সমর্থন তুলে এই সরকার ফেলে দেন, ততই মঙ্গল। তবে দিল্লির কংগ্রেস নেতৃত্ব শরিক নেত্রীর মন্তব্যকে আমল না দিয়ে ঘোষণা করেছেন, নির্দিষ্ট সময়েই নির্বাচন হবে। ইউপিএ সরকার পুরো মেয়াদই ক্ষমতায় থাকবে। নানা জল্পনার মধ্যে তৃণমূলের মুখপাত্র ডেরেক ওব্রায়েন অবশ্য আজ সাফাই দিয়েছেন, নেত্রী তাঁকে জানিয়েছেন, ইউপিএ সরকার পুরো মেয়াদ থাকলে তিনি খুশিই হবেন।
গত কাল দলের একটি অনুষ্ঠানে তৃণমূল নেত্রী আগামী বছরেই লোকসভা নির্বাচন হতে পারে বলে ‘ইঙ্গিত’ দিয়েছিলেন। সেই সূত্র ধরে সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি আজ সরাসরি কোনও দলের নাম উল্লেখ না করে বলেন, “ছোট শরিক দলগুলি আসলে এই সব বলে সরকারকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করছে।” সিপিএম মনে করছে, তৃণমূল নেত্রী পরিকল্পিত ভাবেই এই মন্তব্য করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মমতার সাক্ষাতের পরেও পশ্চিমবঙ্গের জন্য এখনও বিশেষ আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেনি কেন্দ্র। সিপিএম নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, আগাম নির্বাচনের ‘ইঙ্গিত’ দিয়ে কার্যত মনমোহন সরকারের উপর চাপ বাড়াতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী।
কংগ্রেস নেতৃত্ব অবশ্য আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। দলের মুখপাত্র রশিদ অলভি আজ বলেন, “নির্বাচন সময়েই হবে। ইউপিএ সরকার যে তাদের পুরো মেয়াদ পূর্ণ করবে এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।” অলভির বক্তব্য, গণতন্ত্রে মতপার্থক্য থাকেই। তার জন্য শরিকরা সমর্থন তুলে নিয়ে সরকার ফেলে দেবে না, এই আস্থা কংগ্রেস নেতৃত্বের আছে। কেন্দ্রের কংগ্রেস নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে তৃণমূল কংগ্রেসে গোষ্ঠী-সংঘর্ষ অবিরাম বেড়ে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ নির্বাচন এগিয়ে আসার সম্ভাবনা ও তার জন্য প্রস্তুত থাকার কথা বলে আসলে সংগঠনকে চাঙ্গা করতে চেয়েছেন মমতা।
তবে মমতার বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে বিজেপি নেতা শাহনওয়াজ হুসেন বলেছেন, “উনি ইউপিএ সরকারের কাছ থেকে মুক্তি খুঁজছেন। বিজেপিও চায় এ বছরেই লোকসভা নির্বাচন হোক। যত দ্রুত তা হবে, তত দেশের পক্ষে ভাল।” শাহনওয়াজ এ কথা বললেও বাস্তবে বিজেপি আগাম নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত নয়। দলীয় কোন্দল, নেতৃত্বের সঙ্কটে তারা জেরবার। এই পরিস্থিতিতে আগাম নির্বাচন তাদের কাছে ঝুঁকির। আর সিপিএম যে আগাম নির্বাচনের বিপক্ষে, তা আজ কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন ইয়েচুরি। তাঁর কথায়, “পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে আমাদের মতো দলগুলির পক্ষে নির্বাচনে লড়া কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ছে।” এর পিছনে যে কেবল আর্থিক কারণ রয়েছে তা নয়। পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে রাজ্য স্তরেও অগোছালো অবস্থায় রয়েছে দল। সিপিএম নেতৃত্বের পরিকল্পনা, দু’বছরে দলকে যতটা সম্ভব গুছিয়ে পরের লোকসভা নির্বাচনে যাওয়া। তাই বিজেপির মতো আগাম নির্বাচন ঝুঁকিপূর্ণ সিপিএমের কাছেও।
আজ বিষয়টি লঘু করতে চেয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র ডেরেক ওব্রায়েন টুইট করে জানান, মমতা তাঁকে বলেছেন, বিষয়টির ঠিক ব্যাখ্যা করা হচ্ছে না। নেত্রী দিল্লি গিয়ে শুনেছেন, একটি দল ভোট এগিয়ে আনার কৌশল নেওয়ার কথা ভাবছে। সে কথাই তিনি দলের কর্মীদের জানিয়েছেন। ইউপিএ সরকার মেয়াদ পূর্ণ করলে তিনি খুশিই হবেন। |