‘বিশ্বাসঘাতক’ কাকে বলে, বিজয়ন-ভি এস দ্বন্দ্ব তুঙ্গে
কটি খুন। ঘাতকদের সন্ধান চলছে। কিন্তু ‘বিশ্বাসঘাতক’ কারা, তা-ই নিয়ে কেরল সিপিএমে দ্বন্দ্ব চরমে!
কয়েক দিন আগে কেরলের কোঝিকোড় জেলায় খুন হয়েছেন টি পি চন্দ্রশেখরন। সিপিএম ছেড়ে বেরিয়ে যিনি আরএমপি (রেভলিউশনারি কমিউনিস্ট পার্টি) নামে পৃথক দল গড়েছিলেন। শাসক ইউডিএফের নেতারা টি পি-র খুনের জন্য তাঁর প্রাক্তন দল সিপিএম নেতৃত্বের ‘ষড়যন্ত্র’কেই দায়ী করছেন। এমনকী, এলডিএফের গুরুত্বপূর্ণ শরিক হয়েও সিপিআই এই ঘটনায় সিপিএম-কে ‘খোঁচা’ দিয়ে বলেছে, ‘মাফিয়া সংস্কৃতি’ কমিউনিস্ট দলে থাকা উচিত নয়! সিপিএম নেতৃত্ব প্রত্যাশিত ভাবেই খুনের দায় বা অভিযোগ, কোনওটাই মানতে নারাজ। তার ফলেই ফের তুঙ্গে কেরল সিপিএমের চিরকালীন লড়াই পিনারাই বিজয়ন বনাম ভি এস অচ্যুতানন্দন!
দলত্যাগী টি পি-র বাড়িতে শ্রদ্ধা জানাতে এলডিএফ বিধায়কদের যাওয়ার অনুমতি দেননি বিজয়নরা। শুধু তা-ই নয়, কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বলে বসেছেন, টি পি-র মৃত্যু নিঃসন্দেহে ‘দুঃখজনক’। কিন্তু সিপিএমের কিছু করার নেই। যে ‘বিশ্বাসঘাতক’, সব সময়েই সে ‘বিশ্বাসঘাতক’!
নাম না-করলেও নিহত টি পি-কে বিজয়ন ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেছেন, এ নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে চর্চা শুরু হতেই উল্টো সুর শোনা গিয়েছে ভি এসের গলায়। কেরলের বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর অভিমত, কেউ টি পি-কে ‘বিশ্বাসঘাতক’ মনে করে থাকলে তা তাঁর ‘ব্যক্তিগত’ মত। সিপিএমের টি পি-কে ‘বিশ্বাসঘাতক’ মনে করার কারণ নেই। ছেড়ে দিতে রাজি নন বিজয়নও। নিজের জেলা কান্নুরে একটি দলীয় কার্যালয় উদ্বোধন করতে গিয়ে তিনি পাল্টা বলেছেন, যাঁরা দলে থেকে দলকে গালমন্দ করে সমর্থকদের হাততালি পান, তাঁরা বুঝতে পারছেন না, কী ভাবে দলের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করছেন!
‘বিশ্বাসঘাতকতা’র সংজ্ঞা নিয়ে রাজ্য সিপিএমের শীর্ষ মহলে এই তরজার আবহে নতুন জল্পনাও শুরু হয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে কি ভি এস-ও দল ছাড়ার কথা ভাবছেন? সদ্যসমাপ্ত পার্টি কংগ্রেসে তাঁকে পলিটব্যুরোয় না-নেওয়ায় এমনিতেই রাজ্য সিপিএমে প্রবল প্রতিক্রিয়া হয়েছে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সীতারাম ইয়েচুরির মতো পলিটব্যুরো সদস্যেরাও দলের অন্দরে মত দিয়েছেন, ভি এসের ‘জনপ্রিয়তা’র প্রেক্ষিতে তাঁর বিষয়টি আলাদা করে বিবেচনা করলেই ভাল হত। এমতাবস্থায় টি পি-কাণ্ডে ভি এসের বক্তব্য থেকেই তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা গতি পেয়েছে।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মতে, সিপিএম ছেড়ে বেরিয়ে গেলেই কেউ ‘বিশ্বাসঘাতক’ হয় না। দলত্যাগীদের ব্যাপারে সিপিএমের একেবারে দরজা বন্ধ করে রাখার রীতিও ঠিক নয়। ভি এসের মতে, কোনও কারণে মতান্তরের জেরে দলত্যাগীদের সঙ্গে কিছু সময় পরে সিপিএম নেতৃত্বের আবার আলোচনায় বসা উচিত। সমস্যা মেটাতে চেষ্টা করা উচিত। কোনও ভাবেই কাজ না-হলে আলাদা দল করার অধিকার বিক্ষুব্ধদের আছে। ভি এস ব্যবহার করেছেন এম ভি রাঘবন, ‘গৌরী আম্মা’র উদাহরণ। যাঁরা সাম্প্রতিক কালে সিপিএম ছেড়ে আলাদা দল গড়েছেন।
কেরল-রাজনীতির কারবারিদের একাংশের প্রশ্ন, তা হলে কি বিজয়নদের সঙ্গে অ-বনিবনার জেরে ভি এস দল ছেড়ে প্রাক্তন দলত্যাগীদের নিয়ে বামপন্থী মঞ্চ গড়ার চেষ্টা করবেন? বিজয়ন-অনুগামী শিবির বলছে, ভি এস মুখেই যা বলার বলবেন। কাজে কিছু করার সম্ভাবনা এখন আর নেই! যদিও বাস্তবে তেমন ঘটলে বিজয়ন-শিবির ভিতরে ভিতরে খুশিই হবে! ভি এস ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, বিরোধী দলনেতা শুধু টি পি-র মতো প্রাক্তন নেতাদের ‘ভুল মূল্যায়নে’র প্রতিবাদ করেছেন। নিজের ব্যাপারে কিছু বলেননি। আর কংগ্রেসের এক নেতার বক্তব্য, “এখন ওঁরা নিজেদের মধ্যে যা-ই বলুন, সিপিএমের মনোভাবে এক রকম ফ্যাসিবাদী প্রবণতা আছে! নেয়াট্টিঙ্কারার সিপিএম বিধায়ক সেলভারাজ (ইস্তফা দিয়ে ওই কেন্দ্রেই এখন উপনির্বাচনে শাসক জোটের প্রার্থী) ইউডিএফে না-এলে ওঁরও হয়তো একই পরিণতি হতো!”
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, “খুনের ঘটনায় পুলিশ ১২ জনকে ধরে জেরা করছে। আমরা চাই, অপরাধীরা ধরা পড়ুক। তবে ওই মৃত্যু ও তার পরবর্তী বিতর্ক, দুটোই অনভিপ্রেত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.