রিভিউ কমিটি গড়তে নির্দেশ
ইউএপিএ নিয়ে কেন্দ্র সতর্ক করল রাজ্যকে
মাওবাদী তাত্ত্বিক নেতা কোবাড ঘান্দীর বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ) প্রয়োগের প্রক্রিয়ায় ‘ভুল’ করেছিল দিল্লি পুলিশ। পরে সেই ভুল শোধরানো হয়। তার থেকে শিক্ষা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এখন রাজ্যকে সতর্ক করে দিয়েছে, এখানে ইউএপিএ-তে ধৃত ছত্রধর মাহাতোদের ক্ষেত্রে ওই আইন প্রয়োগে যেন কোনও ভুল না হয়।
২০০৮ সালের সংশোধিত ইউএপিএ মেনে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য খুব সম্প্রতি বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যসচিবদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন গোয়েন্দা নিরাপত্তা অধিকর্তা (২) রমেশকুমার সুমন। এপ্রিল মাসের শেষের দিকে পাঠানো সেই চিঠিতে কী বলা হয়েছে?
সরকারের এক মুখপাত্র জানান, চিঠিতে বলা হয়েছে, সংশোধিত ইউএপিএ-র ৪৫(২) ধারা মেনে কেন্দ্র বা কোনও রাজ্য সরকার যদি কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করতে চায়, তা হলে সে ব্যাপারে তাদের স্বাধীন রিভিউ কমিটির সুপারিশ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার ওই কমিটি গঠন করবে। কমিটি হবে দু’জনকে নিয়ে। নেতৃত্ব দেবেন হাইকোর্টের কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। অন্য সদস্য হবেন রাজ্যের আইন দফতরের সচিব।
কবে এই রিভিউ কমিটি গঠন করছে রাজ্য, কমিটির দুই সদস্যের নাম কী, কমিটির কাছে কতগুলি ‘কেস’ পাঠানো হয়েছে, ইউএপিএ দেওয়ার জন্য কমিটি কতগুলি সুপারিশ করেছে এবং তার মধ্যে কতগুলি গ্রহণ করে নির্দেশিকা জারি করেছে সরকার এ সব তথ্যও কেন্দ্রকে জানাতে বলা হয়েছে। এই বিষয়ে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আইনে আছে যা করা হয়
• অভিযুক্ত ব্যক্তির ব্যাপারে তদন্ত করার পরে রিপোর্ট খতিয়ে দেখবে স্বাধীন রিভিউ কমিটি। কমিটির সুপারিশ সরকার গ্রহণ করলে মামলা দায়ের হবে। • অভিযুক্ত ব্যক্তির ব্যাপারে তদন্ত করার পর সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখেন স্বরাষ্ট্র সচিব। তাঁর সুপারিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গ্রহণ করলে মামলা দায়ের হয়।
কিন্তু আইন সংশোধনের প্রায় সাড়ে তিন বছর পরে কেন এই নির্দেশ? সূত্রের খবর, দিল্লি-সহ অনেক রাজ্যই আইন মেনে রিভিউ কমিটি গড়েনি। পশ্চিমবঙ্গও নয়। রাজ্য সরকারের এক মুখপাত্র জানান, এ রাজ্যে গৌর চক্রবর্তী, তেলুগু দীপক, ছত্রধর মাহাতো, মধুসূদন মণ্ডলের মতো বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে ইউএপিএ-তে মামলা চলছে। কীসের ভিত্তিতে এঁদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ-তে মামলা দায়ের করা হল? জবাবে মুখপাত্রটি জানান, গ্রেফতার করার পরে প্রথমে এক জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার অফিসারকে দিয়ে তদন্ত করানো হয়। সেই তদন্ত রিপোর্ট ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ’ হিসেবে স্বরাষ্ট্রসচিব খতিয়ে দেখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ পাঠান। তাঁর সবুজ সঙ্কেত পেয়ে ইউএপিএ-তে মামলা দায়ের করা হয়।
একই পদ্ধতি মেনে কোবাড ঘান্দীর বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকা এবং সেই সংগঠনের হয়ে কাজ করার অভিযোগ এনে ইউএপিএ-তে মামলা করে দিল্লি পুলিসের স্পেশ্যাল সেল। এর সঙ্গে ছিল ভারতীয় দণ্ডবিধি মেনে আরও চারটি মামলা। গত ২৮ মার্চ দিল্লির অতিরিক্ত দায়রা আদালতের বিচারক ‘রাজ্য আইন না-মানা’য় কোবাডকে ইউএপিএ থেকে রেহাই দেন। বিচারক জানান, ইউএপিএ-তে মামলা করার মতো তথ্যপ্রমাণ থাকলেও রিভিউ কমিটির সুপারিশ ছাড়াই মামলা দায়ের হয়েছে। তবে অন্য চারটি মামলায় জামিন না মেলায় কোবাড জেলেই রয়েছেন।
এই ঘটনার পরে অস্বস্তিতে পড়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কারণ, দিল্লি পুলিশ সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আওতায়। মন্ত্রক দিল্লি পুলিশের কঠোর সমালোচনা
করে দ্রুত রিভিউ কমিটি তৈরি করার নির্দেশ দেয়। সেই মতো রিভিউ কমিটি গঠন করে তাদের সুপারিশ নেওয়া হয়। এর পরে গত ২৪ এপ্রিল ইউএপিএ-এর একই ধারায় (২০ এবং ৩৮) কোবাডের বিরুদ্ধে নতুন করে চার্জশিট পেশ করা হয় আদালতে। ৩০ এপ্রিল আদালত তা গ্রহণ করে। ফলে আবার ইউএপিএ-তে মামলা শুরু হয়েছে কোবাডের বিরুদ্ধে।
ইউএপিএ থেকে কোবাডের রেহাই পাওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তাই রাজ্যগুলিকে চিঠি পাঠিয়ে সতর্ক করে দিয়েছে। সূত্রের খবর, রিভিউ কমিটি গঠনের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে রাজ্য সরকার। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি এখানেও ইউএপিএ-তে ধৃতদের ‘মামলাগুলি’ নতুন করে রিভিউ কমিটির কাছে পেশ করা হবে? রাজ্যের নতুন স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের জবাব, “আমি এত গভীরে গিয়ে দেখিনি। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তাই পুরো না জেনে কিছু বলতে পারব না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.