প্রথম গেমের মতো শনিবারের গেমটাও ড্র হল। তবে প্রথম দিনের সঙ্গে তফাত একটাই। দ্বিতীয় গেমে আনন্দের খেলায় মনটা ভরে গেল। প্রথম গেমে যেটা সে ভাবে হয়নি।
অনেকেই ভাবতে পারেন, মাত্র ২৫ চালে ড্র হয়ে যাওয়া একটা গেমে কী এমন লড়াই হল যা মন ভরিয়ে দিল। আসলে মন ভরল ভিশি নিজের খেলায় ফেরাতে। বিশ্ব খেতাব ধরে রাখার খিদে যে ওর একবিন্দুও কমেনি, তারও প্রমাণ পাওয়া গেল এ দিন।
যদিও এর জন্য যদি শুধু ভিশিকেই কৃতিত্ব দিই তা হলে অন্যায় হবে। বিশ্ব খেতাবি লড়াইয়ের দ্বিতীয় রাউন্ডে একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হলাম, আনন্দের সেকেন্ডদের প্রস্তুতিতেও কোনও খামতি নেই। যা বোঝা গেল ওর ১৪ নম্বর চালে। ঘোড়ার ওই চালটা ছিল একেবারে নতুন। যা চমকে দিয়েছিল বরিস গেলফাঁকে। শুধু চমক তৈরিই নয়, ওই একটা চালই গেমটা এনে দিয়েছিল আনন্দের নিয়ন্ত্রণে। যে পরিস্থিতি থেকে আর বেরনো সম্ভব নয় বুঝেই গেলফাঁ ড্রয়ের প্রস্তাব দেয় ২৫ চালের পরে। যা গ্রহণ করতে দেরি করেনি আমাদের আনন্দ। দু’গেমের পরে পয়েন্ট এখন ১-১।
শনিবার সাদা ঘুটিতে গেলফাঁ শুরু করেছিল কুইন্স পন পদ্ধতিতে। জবাবে আনন্দ দেয় ওর প্রিয় স্লাভ ডিফেন্সের মেরান ভ্যারিয়েশন। আত্মবিশ্বাস প্রথম থেকেই সঙ্গী ছিল। তবে গেমের সেরা মুভ ওই ১৪ নম্বর চালটাই। যার জন্য আমি অবশ্য বাহবা দেব আনন্দের সেকেন্ডদেরও। যদিও যে সময় গেলফাঁ ড্রয়ের প্রস্তাব দেয় তখন কিন্তু বোর্ডে থাকা ঘুটির বিচারে কিছুটা পিছিয়ে আনন্দই। গেলফাঁর ছিল দু’টো নৌকা আর একটা গজ। আর আনন্দের দু’টো নৌকা আর একটা ঘোড়া। সাধারণত ক্ষমতার বিচারে ঘোড়ার তুলনায় গজকে একটু এগিয়ে রাখা হয়। তবে এই সর্বোচ্চ পর্যায়ের লড়াইয়ে সেটা খুব বড় ব্যাপার নয়।
আনন্দ বনাম গেলফাঁ শুধু স্ট্র্যাটেজি বা বুদ্ধির নয়। চল্লিশোর্ধ দুই দাবাড়ুকে সব সময় মনে রাখতে হচ্ছে তাদের বয়সকেও। শনিবার সন্ধেয় ২৫ চালের গেমের পরেও দু’জনের চোখেমুখেই ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। বারো গেমের এই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ যদি শেষ পর্যন্ত প্লে-অফে গড়ায় তা হলে স্ট্যামিনাই সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হতে চলেছে। তাই তাড়াহুড়ো করার প্রবণতা নেই কারও মধ্যে। বরং সমঝে চলাই নীতি। তবে ম্যাচ প্লে-অফে গেলে আনন্দেরই সুবিধে। কারণ, র্যাপিড দাবায় ও-ই নিঃসন্দেহে বিশ্বসেরা। আপাতত রবিবারের ছুটিটা উপভোগ্য হবে দু’জনের কাছেই। তৃতীয় গেমে দু’জন মুখোমুখি হবে সোমবার।
এ বারে কলকাতায় আনন্দের খেতাবি লড়াই আলাদা মাত্রা পেয়েছে ২৫বি পার্ক স্ট্রিটে বড় স্ক্রিনে সরাসরি সম্প্রচারে। যত দিন এগোবে সরাসরি এই চ্যাম্পিয়নশিপ লড়াই দেখার আগ্রহ নিশ্চয়ই আরও বাড়বে। আমি চাই আরও বেশি করে ছোটরা আসুক খেলা দেখতে। সঙ্গে শুনুক ধারাভাষ্য। দাবার অনেক কিছু শিখতে পারবে। |