ভারতে টোলগে ওজবের টাকার অঙ্ক দেখে চোখ কপালে উঠে গিয়েছে আর্থার পাপাসের!
ফিফা-এআইএফএফ অ্যাকাডেমির নতুন অস্ট্রেলীয় কোচের সবিস্ময় মন্তব্য, “আপনারা ওই অর্থে আরও ভাল মানের প্লেয়ার পেতে পারেন অস্ট্রেলিয়া থেকে। টোলগে অস্ট্রেলিয়ায় খেললে এর আট গুণ কম অর্থ পেত।”
ভারতের দেড় কোটি টাকা অস্ট্রেলিয়ায় দাঁড়াত ২০ লাখ! পাপাস সবিস্ময়ে দু’তিনবার ওই কথাগুলো বললেন। “টোলগে তো ওখানে এ লিগে ভাল খেলতে পারেনি। পরের ধাপের লিগে খেলেছে। এ লিগের ফুটবলারদের ভাল দাম। কিন্তু টোলগের দাম শুনে অবাক হয়ে যাচ্ছি।” লাঞ্চ টেবিলে বসে বছর বত্রিশের এই কোচের কথা শুনে বোঝা গেল, টোলগে কেন দেড় কোটির চুক্তিতে এত দ্রুত মোহনবাগানে সই করে দিয়েছেন।
কলকাতার ক্লাব কর্তাদের একটি জ্ঞানচক্ষু যদি ফিফা অ্যাকাডেমির অস্ট্রেলীয় কোচ খুলে দেন, অন্য চোখ খুলে দিচ্ছেন এআইএফএফ কর্তারাই। নবি মুম্বইয়ে ছবির মতো সেন্ট অ্যাগ্নেল স্কুলে নতুন অ্যাকাডেমি দেখতে গিয়ে মনে হল, বড় ক্লাবের কর্তারা এই মডেল অনুসরণ করলে কাঁদুনি গাইতে হবে না। খুব দ্রুত কলকাতাতেই মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল নিজস্ব অ্যাকাডেমি করে ফেলতে পারে।
ফিফার প্রথম অ্যাকাডেমি বানাতে এআইএফএফ কী করেছে? অভিজাত সেন্ট অ্যাগ্নেল স্কুলের পরিকাঠামো খুব ভাল। কৃত্রিম ঘাসের ফুটবল মাঠ, সুইমিং পুল, জিম, অন্য সব খেলার সুবিধে রয়েছে। রয়েছে ভাল হোস্টেল।
|
পাপাস
অ্যাকাডেমির নতুন কোচ |
ফেডারেশন মাসে স্কুলকে টাকা দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কুড়ি ফুটবলারকে রেখেছে হোস্টেলে। বাংলার শম্ভু বেরা, দিল্লির সায়ক বরাই, ঝাড়খন্ডের সায়ন্তন পাইন, কর্নাটকের সুমন সরকারের মতো বঙ্গভাষীরা রয়েছে এই দলে। দুটো হলঘরে ঠাসাঠাসি করে আছে কুড়ি জন কিশোর এই ব্যাপারটা বাদ দিলে সব মসৃণ। কোচ আকিল আনসারিদের মতো সহকারী কোচদেরও জায়গা স্টাফ কোয়াটার্সে। ফিফা-এআইএফএফ অ্যাকাডেমির পোস্টারে ভরে গিয়েছে মাঠ ও হোস্টেল চত্বর। স্কুল কর্তৃপক্ষও খুশি ভাল বিজ্ঞাপনে।
কলকাতায় খুঁজলেও এমন পরিকাঠামোর নতুন স্কুল পাওয়া যাবে অনেক। মোহন-ইস্ট কর্তারা কেন তাদেরকে জড়িয়ে নিতে পারেনি, ভাবতে ভাবতে অস্ট্রেলীয় কোচের মন্তব্য মাথায় ঘোরে। পাপাস বলছিলেন, “আমি ডাচ কোচদের দর্শনই শেখাতে চেষ্টা করব। ৪-৩-৩ ছকে। তবে বাচ্চাদের কাছে আমাকেও রোল মডেল হতে হবে। ওদের কাছে প্রথম কোচ আমি। আমি খারাপ কিছু করলে প্রভাব পড়বে ওদের মনে।”
ফিফার হাত ধরে এআইএফএফের এই দারুণ উদ্যোগের মধ্যে দুটো ব্যাপার কাঁটা হয়ে বিঁধছে। অ্যাকাডেমির জন্য যে ফুটবলারদের বাছা হয়েছিল, তাদের মধ্যে ৮৪ জন বাতিল হয়ে যায় বয়স ভাঁড়ানোর জন্য। যে সব কিশোর আছে প্রথম অ্যাকাডেমিতে, তাদের অধিকাংশেরই প্রতিভা চোখ ধাঁধানো নয়। দ্বিতীয় দফায় নেওয়া হয়েছে এদের। দ্বিতীয় সমস্যার কথা বললেন অ্যাগ্নেল স্কুলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাতুরদিনো অ্যালমেইডা। “ওরা বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে। বোরো, মণিপুরি, কোঙ্কনি, ওড়িয়া, বাংলা, তামিল, মালয়ালম। আমাদের স্কুলে ইংরেজি, হিন্দি, উর্দুতে পড়ানো হয়। ওটা বুঝতে পারছে না। আমি এআইএফএফ-কে বলেছি, ওদের নিজেদের রাজ্যের স্কুলে অন্তত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে।” ভদ্রলোক উদ্বিগ্ন।
এ সব উদ্বেগের মধ্যে এক ঝলক টাটকা হাওয়া হয়ে হাজির ৩২ বছরের পাপাস। অনেকটা ইতালিয়ান তারকা গাত্তুসোর চেহারার আদল। প্যান্টটা তুলে হাঁটুর উপরে দেখালেন, অস্ত্রোপচারের দাগ। ওই জন্যই চব্বিশ বছরে থেমে গিয়েছে ফুটবলারজীবন। পাপাসের মুখে শোনা গেল আরিগো সাক্কি, হোসে মোরিনহো, আন্দ্রে ভিলাস বোয়াসের মতো কোচের নাম। যাঁরা বড় ফুটবলার ছিলেন না। “নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়েই ভারতে এসেছি। অস্ট্রেলিয়ায় বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করেছি। এখানেও কিছু করে দেখাতে হবে। তাই সবাইকে ছেড়ে এসেছি,” বললেন পাপাস। এই লোকটির উপরই নির্ভর করছে বেঙ্গালুরু, পৈলান ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে আরও তিন অ্যাকাডেমির ভবিষ্যৎ। মুম্বই পথ দেখালে আরও তিনটি শহরে অ্যাকাডেমি তৈরির গতি প্রাণ পাবে।
মুম্বই বিমানবন্দর থেকে বেরোলেই রাস্তায় রাজ্যসভার এক নতুন সাংসদকে অভিনন্দন জানিয়ে অজস্র পোস্টার কংগ্রেসের। সচিন তেন্ডুলকরের ছবি সেখানে। আইপিএলের বাজারে এখানে ফুটবল অস্তিত্বহীন। নবি মুম্বইয়ের স্কুল চত্বরেই ফিফা-এআইএফএফ অ্যাকাডেমির কথা কত জন জানে সন্দেহ। টোলগের দেশের এক ফুটবল কোচের এই অজানা শহরেই কঠিন পরীক্ষা শুরু। ভারতীয় ফুটবলেরও। |