যে বোয়িং ৭৮৭ ‘ড্রিমলাইনার’ বিমানকে কেন্দ্র করে সাবেক এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলটরা ধর্মঘটে যেতে শুরু করেছেন, সেই বিমান এই মাসেই এয়ার ইন্ডিয়ার হাতে আসছে। এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ জুন মাস থেকেই বিমানটি আকাশে ওড়ানোর জন্য সব রকম প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পাইলটদের একাংশের ‘বিদ্রোহে’ তাঁরা তাঁদের সিদ্ধান্ত বদলাচ্ছেন না।
সম্প্রতি হায়দরাবাদে যে বিমানমেলা হয়েছে, সেখানে একটি ‘ড্রিমলাইনার’ নিয়ে এসেছিল এয়ার ইন্ডিয়া। সেটি পরীক্ষামূলক ভাবে উড়েওছিল হায়দরাবাদের আকাশে। এখন সিঙ্গাপুরে শুরু হয়েছে বিমান চালানোর জন্য প্রশিক্ষণ। সেখানে সাবেক এয়ার ইন্ডিয়ার আট জন পাইলটের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন সাবেক ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের পাইলটরাও। আশা করা হচ্ছে, জুন মাসে ‘ড্রিমলাইনার’ নিয়ে এঁরাই প্রথম আকাশে উড়বেন। সিঙ্গাপুরে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ড্রিমলাইনারের জন্য নতুন ‘সিমুলেটর’ (মাটিতে রাখা বিমান, যেখানে বসে প্রশিক্ষণ নেন পাইলটেরা) আনা হয়েছে। সেটি মুম্বইয়ে রাখা আছে।
সাবেক ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স আর সাবেক এয়ার ইন্ডিয়া মিলে গিয়ে এখন শুধু ‘এয়ার ইন্ডিয়া’ হয়েছে। বিমান সংস্থা সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে মোট ২৭টি ‘ড্রিমলাইনার’ কেনা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক-একটি বিমানের দাম প্রায় হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। বিমানপিছু ১৬ জন করে পাইলট প্রশিক্ষণ পাবেন। এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৪টি ‘ড্রিমলাইনার’-এর জন্য ২২৪ জন সাবেক এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলটকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বাকি ১৩টি বিমানের জন্য প্রশিক্ষণ পাবেন সাবেক ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ২০৮ জন পাইলট।
এখন সাবেক ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স পাইলটদের প্রশিক্ষণ দেওয়া নিয়েই আপত্তি সাবেক এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলটদের। তাঁদের দাবি, ‘ড্রিমলাইনার’ বিমান কেবল তাঁরাই চালাবেন। সাবেক ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের পাইলটদের দিয়ে তা চালানো যাবে না। কেন? বিরোধ বেধেছে লম্বা রুট আর ছোট রুটের অভিজ্ঞতা নিয়ে। সাবেক ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের এক পাইলটের কথায়, “সাবেক এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলটদের দাবি, চিরকাল আগরতলা-শিলচর-রাঁচির মতো ছোট রুটে উড়ান চালিয়ে এসেছি, তাই-ই চালাব। আর ওঁরা শিকাগো-নিউ ইয়র্ক-লন্ডন চালান এবং তাই-ই চালাবেন। ড্রিমলাইনার চালানোর সম্মান ওঁদেরই প্রাপ্য।” অভিযোগ, এর আগে এক বার দিল্লি-লন্ডন রুটেও দূরপাল্লার এয়ারবাস ৩৩০ বিমান ব্যবহারের প্রস্তাব এসেছিল। সাবেক এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলটদের আপত্তিতেই সেই প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়।
এখন এয়ার ইন্ডিয়া দূরপাল্লার রুটে বোয়িং ৭৭৭ বিমান চালাচ্ছে। সেখানে যাত্রী ধরে ৩০০-র কিছু বেশি। কিন্তু বাস্তবে এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রী পায় তার কম। বিশ্বের আধুনিকতম বিমান ড্রিমলাইনার-এ ২১০ থেকে ২৯০ জন যাত্রী ধরে। তুলনায় প্রায় ২০% কম জ্বালানি খরচ হয়। ফলে অনেকটাই সাশ্রয় হবে বিমান সংস্থার। গত অক্টোবরে জাপানের অল নিপ্পন এয়ারলাইন্স প্রথম ‘ড্রিমলাইনার’ ব্যবহার শুরু করে। সারা বিশ্বের বিভিন্ন বিমানসংস্থা ৮৫৪টি ‘ড্রিমলাইনার’ তৈরির বরাত দিয়েছে বোয়িংকে। বোয়িং সংস্থার
দাবি, অন্য বিমানের তুলনায় ‘ড্রিমলাইনার’ আকাশে দূষণও ছড়ায় কম। তুলনায় বিমানটি অনেক হালকাও। তাই গতিবেগও বেশি। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯০০ কিলোমিটার গতিবেগে উড়তে সক্ষম ‘ড্রিমলাইনার’। |