কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হলে আগে যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে ধর্মঘটী বিমানচালকদের। এয়ার ইন্ডিয়ার অচলাবস্থা নিয়ে শনিবার এই সুরেই কেন্দ্রের অবস্থান স্পষ্ট করলেন বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ। ধর্মঘটীদের উদ্দেশে বিমানমন্ত্রী এ দিন বলেন, “যাত্রীদের কথা আগে ভাবুন। ওঁরা না থাকলে বিমান সংস্থাও থাকবে না, চালকও থাকবেন না। যাত্রীদের কাছে আগে ক্ষমা চান। তার পরে আমরা যে কোনও সময়ে কথা বলতে পারি।”
এর আগে মুম্বইয়ে ধর্মঘটী বিমানচালকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান পাইলট্স গিল্ডও (আইপিজি) আজ জানায়, সরকারের সঙ্গে আলোচনায় তারা রাজি। তবে সেটা এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে নয়। একই সঙ্গে এয়ার ইন্ডিয়ায় নির্দিষ্ট কর্মী-নীতি তৈরির দাবিও ওঠে। ধর্মঘটীদের দাবিকে বাস্তব ও ন্যায্য বলে হস্তক্ষেপ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও এয়ার ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান রোহিত নন্দনকে চিঠি লিখেছেন বেশ কয়েক জন প্রবীণ বিমানচালকও।
এয়ার ইন্ডিয়া যদিও কড়া হাতেই পরিস্থিতি মোকাবিলার পথে হাঁটছে। শুক্রবার রাত পর্যন্ত ৭১ জন চালককে বরখাস্ত করা হয়েছিল। শনিবার সেই সংখ্যাটা না বাড়লেও বিমান সংস্থা বরখাস্ত চালকদের মধ্যে ১১ জনের লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানায় ডিজিসিএ-র কাছে। তার পরেই ওই ১১ জনকে এক সপ্তাহের মধ্যে গরহাজির থাকার কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে ডিজিসিএ। সূত্রের খবর, ওই বিমানচালকেরা সবাই আইপিজি-র নেতৃস্থানীয়। বণিকসভা অ্যাসোচ্যাম-ও জানিয়েছে, ধর্মঘটী চালকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা চায় তারাও।
|
অন্য দিকে সমস্যা মেটাতে তিন পূর্বসুরির কাছে পরামর্শ চেয়েছেন বিমানমন্ত্রী। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হলেও এ দিন বিকেলে প্রাক্তন বিমানমন্ত্রী শরদ যাদব, রাজীবপ্রতাপ রুডি এবং শাহনওয়াজ হুসেনকে ঘরোয়া বৈঠকে আমন্ত্রণ জানান অজিত সিংহ। কোন পথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যাবে, সেই নিয়ে আলোচনাও হয়। বৈঠক শেষে রুডি বলেন, “ধর্মঘটী বিমানচালকেরা এই পরিস্থিতি তৈরির পিছনে যা যুক্তি দিচ্ছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। কোনও সরকারই তাঁদের সমর্থন করবে না।” তার পরেও অবশ্য দ্রুত সঙ্কট কাটার কোনও লক্ষ্মণ দেখা যায়নি। বরং শনিবারও চালকের অভাবে ১৬টি রুটের উড়ান বাতিল করেছে এয়ার ইন্ডিয়া। ফের দিল্লি ও মুম্বই বিমানবন্দরে হয়রান হতে হয়েছে কয়েকশো যাত্রীকে।
তবে অচলাবস্থার মধ্যেই যাত্রীদের কিছুটা আশা দেখাচ্ছেন এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ। শুক্রবারই তাঁরা জানান, যাত্রী পরিষেবা অটুট রাখতে বিকল্প ভাবনা রয়েছে। প্রয়োজনে পাইলট-সহ বিমান ভাড়া করা হবে, এমনও জানানো হয়। শনিবার বিমান সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১৬টি রুটে সম্ভব না হলেও সোমবার থেকে তারা এগ্জিকিউটিভ পাইলটদের নামিয়ে রোজ ৭টি রুটে বিমান চালাবে। আইপিজি-র দুশোরও বেশি চালক গরহাজির থাকায় বিমান চালানোর পাশাপাশি ককপিটে কো-পাইলটের দায়িত্বেও থাকতে হবে ‘উচ্চপদস্থ’ এগ্জিকিউটিভ চালকদের। সংস্থা জানিয়েছে, সাবেক ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের চালকেরা এখন যে এয়ারবাস ৩১৯ এবং ৩২১ চালান, সময়সূচি বদলে সেই বিমানগুলিকেই মূলত উপসাগরীয় ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি রুটে চালানো হবে। যদিও কোন কোন রুটে উড়ান চলবে, তার নির্দিষ্ট তালিকা এখনও জানানো হয়নি।
হয়রানি আর ক্ষোভ যদিও বাড়ছে। মুম্বই বিমানবন্দরে এক যাত্রীর কথায়, “এখানে পৌঁছনোর আগে দিল্লিতে বলা হয়, মুম্বই থেকে ঠিক সময়েই উড়ান ছাড়বে। কিন্তু এখানে পৌঁছনোর পরে এয়ার ইন্ডিয়া কোনও যোগাযোগ করেনি। আমাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার মুখে। অন্য উড়ানেও আসন খালি নেই।” একই ছবি দেখা গিয়েছে দিল্লিতেও।
এই পরিস্থিতির দায় যদিও বিমান সংস্থার উপরেই চাপাতে চাইছেন ধর্মঘটীরা। শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে আইপিজির সাধারণ সম্পাদক ই কপাডিয়া এবং সভাপতি জিতেন্দ্র অবধ বলেন, “এয়ার ইন্ডিয়া- ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের সংযুক্তিকরণের পর থেকেই আমরা বিমান সংস্থার শীর্ষকর্তা ও কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। এত বছরে সমস্যা মেটেনি, বরং অভিজ্ঞতা ক্রমশ তিক্ত হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানেই উদ্যোগী হননি।” তাঁদের দাবি, এখন ধর্মঘটীরা কথা বলতে চাইলেও কর্তৃপক্ষ সাড়া দিচ্ছেন না। |