মিটেও মিটছে না রাজ্যের প্রধান দুই বনকর্তার মতান্তর।
বুধবার, বন দফতরের বিভিন্ন ডিভিশনের ১০৬ জন রেঞ্জ ও বিট অফিসারের ‘নিয়ম মাফিক’ বদলির নির্দেশ জারি করেছিলেন প্রধান মুখ্য বনপাল (সাধারণ) অতনু রাহা। জানতে পেরে সে দিনই তাঁর সহকর্মীর জারি করা ওই নির্দেশ ‘খারিজ’ করে দিয়েছেন বন দফতরের অন্য প্রধান মুখ্য বনপাল (হেড অফ ফরেস্ট) মির্জা আসগর সুলতান।
বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন অবশ্য এ ব্যাপারে অতনুবাবুর ‘পাশে’ দাঁড়িয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে বন সচিব সুবেশ দাসকে ডেকে তিনি অতনুবাবুর জারি করা ওই বদলির নির্দেশ বহাল রাখতে বলেছেন বলে বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। দফতরের দুই শীর্ষ কর্তার ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলা এই বিবাদে তাঁর বিরক্তিও আড়াল করেননি তিনি।
মন্ত্রী বলেন, “দুই বনকর্তার কার কী দায়িত্ব, অনেক দিন আগেই তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিজের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে ক্ষমতা দেখানো উচিত নয়। ওই বদলির ব্যাপারে কোনও প্রশ্ন থাকলে বনসচিবের কাছেই তা জানতে চাইতে পারতেন ওই প্রধান মুখ্য বনপাল।”
কিন্তু ‘হেড অফ ফরেস্ট’, বা খাতায়-কলমে বন দফতরের শীর্ষ পদে থেকে ওই নির্দেশ নিয়ে কি প্রশ্ন করা যায় না?
বন দফতরের এক পদস্থ কর্তা অবশ্য দাবি করেছেন, অতনুবাবুর জারি করা ওই বদলির নির্দেশের ব্যাপারে প্রশ্ন তোলার যুক্তি রয়েছে। কী সেই যুক্তি? ওই বনকর্তা বলেন, “হেড অফ ফরেস্টের দায়িত্ব নিয়েই কার্শিয়াং ডিভিশনের এক বনকর্মীকে বাঁকুড়ায় বদলি করেছিলেন এম এ সুলতান। যা বেজায় চটিয়েছিল মন্ত্রীকে। তিনি নির্দেশ জারি করেছিলেন, নির্দিষ্ট বদলি-নীতি তৈরি না করে কোনও বনকর্মীকে যেন বদলি করা না হয়। মন্ত্রীর সেই ফরমানের ভিত্তিতেই অতনুবাবুর বদলির নির্দেশ খারিজ করেন এম এ সুলতান।”
এ ব্যাপারে বনমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, বন দফতরের প্রশাসনিক কাজকর্ম, বদলির নির্দেশ কিংবা অর্থ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে প্রধান মুখ্য বনপাল (জেনারেল) অতনুবাবুকেই। ‘হেড অফ ফরেস্ট’ হিসেবে সে ব্যাপারে শুধু ‘মনিটরিং’ বা নজরদারির দায়িত্ব এম এ সুলতানের। মন্ত্রীর কথায়, “বদলির নির্দেশের ব্যাপারে তাই বন-সচিবের কাছে বড়জোর প্রশ্ন তুলতে পারতেন তিনি। তা খারিজ করে দেওয়ার ক্ষমতা নেই হেড অফ ফরেস্টের।” সেই সঙ্গে বন দফতর ইতিমধ্যেই একটি নির্দিষ্ট বদলি-নীতি তৈরি করেছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। ‘বিরোধ’ নিয়ে অবশ্য দুই বন কর্তার কেউই কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
বন দফতরের এই দুই শীর্ষ কর্তার বিরোধ অবশ্য নতুন নয়। মাস কয়েক আগে হাইকোর্টের নির্দেশে তৎকালীন হেড অফ ফরেস্ট অতনু রাহাকে সরিয়ে রাজ্য সরকার এম এ সুলতানকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে। কিন্তু বন দফতরের শীর্ষ পদের দায়িত্ব নিয়েই রাজ্য জুড়ে করাত-কল বন্ধ করার ফরমান জারি করে বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনের ‘কোপে’ পড়েন তিনি। সেই সময়ে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দাগার অভিযোগে এম এ সুলতানকে ‘শো-কজের’ নোটিসও ধরানো হয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ‘কমপালসারি ওয়েটিং’-এ থাকা অতনুবাবুকে এরপরেই ফিরিয়ে আনা হয়। তবে হেড অফ ফরেস্ট হিসাবে নয়। এম এ সুলতানের ক্ষমতা ঈষৎ ছেঁটে প্রধান মুখ্য বনপালের দায়িত্ব ভাগ করে, অর্থ সংক্রান্ত বিষয় ও প্রশাসনিক দায়িত্ব দেওয়া হয় অতনুবাবুকে।
তবে তা যে দুই কর্তার ‘তিক্ততা’ মেটায়নি, এ দিনের ঘটনায় তা ফের সামনে এসে পড়ল। |