শরীরের একাংশে ব্যথা নিয়ে গাঁধীনগর থেকে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন যোগীন্দ্র সাহা। ‘মেডিসিন’ বিভাগে গিয়ে দেখেন দরজায় তালা বন্ধ। আধঘণ্টা অপেক্ষা র পরেও দরজা খুলছে না দেখে তিনি স্বাস্থ্যকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। পরে তাঁকে পাঠানো হয় জেনারেল ফিজিশিয়ানের বিভাগে। প্রধাননগর থেকে আসা জ্বরে অসুস্থ অভিজিৎ রায় জেনারেল ফিজিশিয়ানের বিভাগে লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন। মেডিসিন বিভাগ বন্ধ থাকায় ওই বিভাগেই চিকিৎসক দেখবেন বলে স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁকে জানিয়েছেন। কোমরে ব্যথা নিয়ে দাঁড়িয়ে কাঁতরাচ্ছিলেন হায়দরপাড়ার বাসিন্দা হরিনাথ পাল। মেডিসিন বিভাগ বন্ধ থাকায় তাঁকেও দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় চিকিৎসার জন্য। সোমবার শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের পরিষেবার এমন ছবি দেখেছেন অনেকেই। অভিযোগ, মেডিসিন ভাগ বন্ধ থাকায় এভাবেই দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। এ দিন সকাল ৯ টা নাগাদ মেডিসিন বিভাগ খোলা হলে রোগীরা সেখানে লাইনে দাঁড়ান। অভিযোগ, কিছুক্ষণ পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। রোগীদের ‘জেনারেল ফিজিশিয়ানে’র বিভাগে দেখাতে বলা হয়। অথচ সেখানে কোনও নোটিস না দেওয়ায় পরে আসা রোগী এবং তাঁর আত্মীয়দের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কোথায় দেখাবেন তা নিয়ে অনেকেই নাজেহাল হন। |
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার প্রদীপ সরকার বলেন, “মেডিসিনের বহির্বিভাগ বন্ধ থাকলেও জেনারেল ফিজিশিয়ানের বিভাগে রোগীদের দেখা হয়েছে। সোমবার মেডিসিনের বহির্বিভাগে যে চিকিৎসকের থাকার কথা তিনি ছুটিতে রয়েছেন। সে কারণে রোগীদের চিকিৎসা করেছেন জেনারেল ফিজিশিয়ানই। রোগীর পরিস্থিতি জটিল মনে হলে তিনি ভর্তি করাবেন বলেই নির্দেশ রয়েছে।” শিলিগুড়ির মেয়র তথা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “মেডিসিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ সপ্তাহে ৬ দিনই খোলা রাখা উচিত। রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে এ ব্যাপারে জানাব।” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মেডিসিন বিভাগে বর্তমানে ২ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। এক জন জেনারেল ফিজিশিয়ান এবং ১ জন হাউস স্টাফ তাঁদের সাহায্য করেন। ওই জেনারেল ফিজিশিয়ান, ২ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা এক জন করে সোম, বুধ এবং শুক্রবার বহির্বিভাগে চিকিৎসা পরিষেবা দেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ৬ দিন খোলা রাখার পরিবর্তে সপ্তাহে মাত্র ৩ দিন খোলা রাখা হয় মেডিসিনের বহির্বিভাগ। হাসপাতাল কর্মীদের কয়েকজন জানান, মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞরা কে, কতদিন ধরে ছুটিতে রয়েছেন তা খতিয়ে দেখার জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হবে। এ দিন হাসপাতালে জেনারেল ফিজিশিয়ান মহিলা এবং পুরুষ বিভাগে চিকিৎসা করান প্রায় ৩০০ রোগী। তাঁদের একটা বড় অংশের চিকিৎসা মেডিসিন বিভাগে করার প্রয়োজন থাকলেও তা বন্ধ থাকায় জেনারেল ফিজিশিয়ান বিভাগে দেখাতে হয় সকলকে। রোগীর চাপ বাড়তেই একজন মাত্র চিকিৎসকের পক্ষে সকলকে ভাল মতো চিকিৎসা করানোর ক্ষেত্রেও সমস্যা হয় বলে দাবি। বুকে ব্যথার জন্য চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন পূর্ণ বর্মনদের মতো রোগীরা। মেডিসিন বিভাগ বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েন তাঁরা। ভিড়ের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় তাঁদের অনেককেই। রোগীদের এই দুর্ভোগের খবর পেয়েছেন গণতান্ত্রিক অধিকারিক রক্ষা সমিতির সম্পাদক অভিরঞ্জন ভাদুড়িও। তিনি বলেন, “মেডিসিনের বহির্বিভাগ নিয়মিত খোলা রাখা জরুরি। হাসপাতালে পরিষেবা বন্ধ থাকলে সাধারণ বাসিন্দারা দুর্ভোগে পড়েন।” |