নিজেরা ভুক্তভোগী। তাই আর চান না অন্য কেউ তাঁদের সন্তানকে নিয়ে এই সঙ্কটে পড়ুক। সেই লক্ষ্যেই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত বছর বারোর ছেলে পৃথ্বীরাজকে সঙ্গে নিয়ে নিয়মিত সচেতনতা প্রচার করে চলেছেন পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর থানা এলাকার দ্বারিকাপুর গ্রামের বিশ্বজিৎ ও অপর্ণা মাইতি। বিয়ের আগে ও পরে রক্ত পরীক্ষা করানোর আবশ্যিকতা সাধারণ মানুষদের বোঝানোর পাশাপাশি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের রক্ত দান করার কথা জনে-জনে ডেকে বলেন মাইতি দম্পতি। থ্যালাসেমিয়া বাহক নির্ণায়ক শিবির, রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার পাশাপাশি নিজেদের খরচেই লিফলেট বিলি করে বেড়ান তাঁরা। ৮ মে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবসে দিনভরই নানা সচেতনতামূলক প্রচার কর্মসূচিতে ব্যস্ত মাইতি দম্পতি।
বিশ্বজিৎবাবু ও অপর্ণাদেবী জানান, বিয়ের আগে বা ছেলের জন্মের পরও বেশ কয়েকমাস পর্যন্ত তাঁরা জানতেন না যে দু’জনেই থ্যালাসেমিয়া বাহক। সাত মাস বয়স থেকেই পৃথ্বীরাজ জ্বর-সর্দিতে ভুগত। ২০০০ সালে চিকিৎসকেরা জানান, তাঁদের ছেলে থ্যালাসেমিয়া (বিটা মেজর) আক্রান্ত। দুর্বিসহ জীবনে আর্থিক ধাক্কার পাশাপাশি সহ্য করতে হচ্ছিল পরিজনদের গঞ্জনা ও নানা সামাজিক বাধা। ৬-৭ বছর বয়স পর্যন্ত মাসে একবার ও তারপর থেকে পনেরো দিনে এক বার করে রক্ত দিতে হয় পৃথ্বীরাজকে। ২০০৪ সালে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ-এর কাজ পান বিশ্বজিৎবাবু। সংসারে আসে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য। |
এই সময় থেকেই পরিচিতি বাড়ে চিকিৎসক ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে। বিশ্বজিৎবাবু জানান, “এর আগে পরিচিতদের কথায়, আচরণে মনোবল ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু চিকিৎসক ও সংস্থাগুলির সহযোগিতা ও মানসিক সাহচর্য আমাদের বেঁচে থাকার নতুন শক্তির জোগান দিল।” সেই সময়ই দম্পতি সিদ্ধান্ত নেন, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু ও তার পরিবারদের সাহায্য করার পাশাপশি আর কোনও দম্পতি বা যুবক-যুবতী এই দুর্ভোগে যাতে না পড়েন তার জন্য সচেতনতা প্রচার করবেন তাঁরা। অপর্ণাদেবী গৃহবধূ। তিনি বলেন, “বিশ্বজিৎ আগেও পাড়ার ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে যোগ দিত। বছর সাতেক আগে ওই সময়ে আমরা দু’জনে হাতে-হাত মিলিয়ে এই নিয়ে প্রচার চালানোর কাজে নেমে পড়ি। সেই শুরু।”
জেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, মেলা, ক্লাবের অনুষ্ঠানে কখনও বা একক উদ্যোগে সচেতনতা শিবির, থ্যালাসেমিয়া বাহক নির্ণায়ক শিবির, রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে চলেছেন মাইতি দম্পতি। নিজেদের টাকায় লিফলেট বিলি, প্রি-ম্যারেজ কাউন্সেলিং-ও করেন তাঁরা। এই ধরণের অনুষ্ঠানে ছেলেকেও নিয়ে যান মাঝেমধ্যেযাতে লোকজন এর গুরুত্বের গভীরতা বুঝতে পারেন। মাইতি দম্পতির এই উদ্যোগের প্রশংসা করে পেশায় চিকিৎসক তথা প্রাক্তন বিধায়ক তুষারকান্তি লায়া, চিকিৎসক সুদর্শন দাস বলেন, “সরকারি ভাবে থ্যালাসেমিয়া এখনও অবহেলিত। সরকারি ও বেসরকারি তরফে আরও উদ্যোগ দরকার। থ্যালাসেমিয়া নিয়ে সচেতনতা প্রচারে মাইতি দম্পতির ব্যক্তিগত উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।” |