প্রশ্ন সেই রাজ্যের অধিকার
এমসিআই বিলে বিপক্ষে ভোট তৃণমূলের
লোকসভায় তৃণমূলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু সেই মন্ত্রকেরই আনা মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই) সংশোধন বিলের বিরুদ্ধে ভোট দিল তৃণমূল। সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টির সমর্থনে বিলটি অবশ্য পাশ করানো গিয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মুখে এনসিটিসি থেকে শুরু করে রাজ্যের আর্থিক দাবিদাওয়া ও অধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধের মধ্যেই কংগ্রেস আরও এক বার অস্বস্তিতে পড়ল তৃণমূলের ভূমিকায়। এবং প্রত্যাশিত ভাবেই ইউপিএ-র শরিক দলের এই ভূমিকাকে সমালোচনার অস্ত্র করছে বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, শরিকদেরই যে মনমোহন সরকারের উপরে আস্থা নেই, প্রতি পদে সেটা প্রমাণিত হচ্ছে।
সংসদে এ ভাবে অস্বস্তিতে পড়ে আজ তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী পবন বনশল। পরে বনশল দাবি করেন, “মমতা জানিয়েছেন, বিলটি নিয়ে তাঁর আপত্তি রয়েছে ঠিকই। কিন্তু সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার কোনও নির্দেশ তিনি দেননি। কেন এই ভুল বোঝাবুঝি হল তিনি খতিয়ে দেখবেন।” পবনের আরও দাবি, রাজ্যসভায় লোকসভার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে মমতা তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন। ঘটনাচক্রে, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী নিজে অবশ্য তাঁর মন্ত্রকের আনা বিলের বিরুদ্ধে ভোট দেননি। ভোটাভুটির সময় লোকসভায় উপস্থিত ছিলেন না সুদীপবাবু। লোকসভায় দলের মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এটা চিকিৎসকদের ব্যাপারে। কাকলি ঘোষদস্তিদারকে জিজ্ঞাসা করুন।” কাকলিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “বিলটির বিরোধিতা করতেই বলা হয়েছিল আমাদের। বস্তুত, বিলটির নীতিগত বিরোধিতা করে সুদীপ বন্দোপাধ্যায় আগেই চিঠি দিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে।”
কেন আপত্তি
দুর্নীতির অভিযোগে এমসিআই-এর সভাপতি কেতন দেশাই দু’বছর আগে গ্রেফতার হন। তার পরেই এমসিআই বোর্ড ভেঙে দিয়ে আইন সংশোধন করে সরকার। এমসিআই পরিচালনার দায়িত্ব দু’বছরের জন্য বোর্ড অফ গভর্নরের হাতে দেওয়া হয়। পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে মানব সম্পদ জোগানোর জন্য জাতীয় কমিশন গঠনের উদ্দেশ্যে সংসদে একটি বিল পেশ করে সরকার। যাতে ওই কমিশনের অধীনেই মেডিক্যাল কাউন্সিল, ডেন্টাল কাউন্সিল, নার্সিং কাউন্সিলের মতো সব প্রতিষ্ঠানকে আনা যায়। কিন্তু জাতীয় কমিশন সংক্রান্ত বিলটি এখনও পাশ হয়নি সংসদে। আবার বোর্ড অফ গভর্নরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৪ মে। এই পরিস্থিতিতে বোর্ডের মেয়াদ আরও এক বছরের জন্য বাড়াতেই সরকার এমসিআই সংশোধন বিল পেশ করে সংসদে।
আগে এমসিআই বোর্ডে প্রতিটি রাজ্য থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা থাকতেন। কিন্তু সেই বোর্ড ভেঙে দিয়ে বোর্ড অব গভর্নরসের হাতে পরিচালন ক্ষমতা তুলে দেওয়া নিয়ে তৃণমূল নেত্রী আগেই অসন্তোষ জানিয়েছেন। এমনকী, সাম্প্রতিক দিল্লি সফরেও প্রধানমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে তাঁর ক্ষোভ জানান মমতা। তাঁর মতে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এমসিআই ভেঙে দিয়ে নিজের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করছে এবং এ ক্ষেত্রেও রাজ্যের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে।
একই সুরে তৃণমূল সাংসদ রত্না দে নাগ আজ বলেন, “রাজ্যগুলি থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত এমসিআই-এর উদ্দেশ্যই ছিল, চিকিৎসা পরিষেবার মান যথাযথ রয়েছে কি না, সে দিকে নজর রাখা, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত রাখা। কিন্তু এমসিআই ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্যে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ স্বেচ্ছাচার ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।” তাঁর কথায়, “এমসিআই সংশোধন বিলের মাধ্যমে সরকার অগণতান্ত্রিক ভাবে এই প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। তৃণমূল তাই এই বিলের বিরোধিতা করছে।”
তবে তৃণমূলের চেয়ে অনেক গুণ চাঁচাছোলা ভাষায় বিজেপি ও বামেরা সরকারের সমালোচনায় অবতীর্ণ হয় এই ব্যাপারে। তারা বিলটিকে এমসিআই-এর স্বায়ত্তশাসনের অধিকার হননের চেষ্টা হিসেবে তুলে ধরেন। বোর্ড অফ গভর্নরসের দুর্নীতি নিয়ে সরাসরি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন বিজেপি সাংসদ মেনকা গাঁধী। অভিযোগের আঙুল তোলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদের বিরুদ্ধেও। ফলে মেনকা-গুলাম তীব্র বাদানুবাদও হয়। পরে বিজেপি মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, “কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এমসিআই সংশোধন বিল নিয়ে জবাবি বক্তৃতায় ১৫ বার মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে অধিকার ভঙ্গের নোটিস দেবে বিজেপি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.