উপরে বিপজ্জনক ডাল, ঝুঁকির যাত্রা
পেল্লাই একখানা ডাল ভেঙে ঝুলছিল যশোহর রোডের ধারের শিরীষ গাছটার গা থেকে। গাইঘাটার মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দা মিতা বৈদ্য বললেন, “যে কোনও সময়ে ভেঙে পড়বে। আবার বেঘোরে কার প্রাণ যাবে কে জানে!”
রবিবার এই মণ্ডলপাড়াতেই চলন্ত অটোয় ডাল ভেঙে মারা যান ৪ মহিলা যাত্রী। ওই গাছের ডাল কাটছিল কাঠচোরেরা। মিতাদেবীর কথায়, “কাঠচোরেদের বোধহয় এখনও নজর পড়েনি গাছটার দিকে। দেখতে পেলেই কেটে নেবে!”
পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে মধ্যমগ্রাম পর্যন্ত যশোহর রোডের দু’ধারে অসংখ্য বড় বড় গাছ। অনেকগুলিরই ডালপালা শুকিয়ে গিয়েছে। বিপজ্জনক ভাবে তা ঝুলে থাকে দিনের পর দিন। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, দুর্ঘটনার আশঙ্কা সত্ত্বেও সেগুলি কাটার বন্দোবস্ত করে না প্রশাসন। কাঠচোরেরা অবশ্য সুযোগ পেলেই কেটে নেয়। আর সেটা করতে গিয়েই রবিবারের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ক’দিন আগেও গাছের ডাল ভেঙে গাইঘাটায় এক ট্রাক চালকের মৃত্যু হয়। কয়েক বছর আগে গাইঘাটাই দোগাছিয়ায় ডাল কাটতে গিয়ে পড়ে মারা যায় এক কাঠচোর।
যশোহর রোডের দু’ধারে এমনই গাছের সারি পেট্রাপোল
থেকে বারাসত পর্যন্ত। সোমবার পার্থসারথি নন্দীর তোলা ছবি।
যশোহর রোডের দু’ধারে দেখা গেল, বেশির ভাগ গাছের গায়ে পেরেক পুঁতে লাগানো হয়েছে বিজ্ঞাপন, হোর্ডিং। গাছের গুঁড়িতে গোবর লেপে দেওয়া হচ্ছে ঘুঁটে। চায়ের দোকানের গরম জল, চা-পাতা ফেলা হচ্ছে গাছের গোড়ায়। ‘বোটানিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’র প্রাক্তন বিজ্ঞানী দুলাল পাল বলেন, “এ সমস্ত ব্যাপার গাছের খুবই ক্ষতি করে। গাছ দ্রুত মরে যায়।” আর সেই সুযোগেরই অপেক্ষায় থাকে কাঠচোরেরা।
সবাই সব জানে। কিন্তু, কাঠচুরি ঠেকানোর দায় নিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে চাপান-উতোর আছে। শুকনো গাছের ডাল সময় মতো কাটার দায়িত্ব কার, তা নিয়ে দায় এড়ানোর পালা চলছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গাছ শুকিয়ে মারা যাওয়া ঠেকানো হবে কী করে প্রশ্ন আছে তা নিয়েও। উত্তর ২৪ পরগনার বনাধিকারিক কৌশিক সরকার বলছেন, “ওই গাছগুলির নজরদারির ভার আমাদের নয়।” দায়িত্ব প্রশাসনের নয় বলে জানিয়েছেন বনগাঁর মহকুমাশাসক অভিজিৎ ভট্টাচার্য। দায় এড়িয়েছে পূর্ত দফতরও। বন দফতর সূত্রের দাবি, গাছের দেখভালের দায়িত্ব রাস্তার দু’ধারের পুরসভা, পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির। একই বক্তব্য জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের। গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেফালি বিশ্বাস বলেন, “মরা গাছ বিক্রির টাকা আমরা পাই না। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমাদের নয়।” স্থানীয় কিছু পঞ্চায়েত প্রধানও বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন।
চাঁদপাড়ার তৃণমূল নেতা গোবিন্দ দাস, বনগাঁ শহর কংগ্রেস সভাপতি কৃষ্ণপদ চন্দের ক্ষোভ, গাছ চুরির চক্র সক্রিয়। বিভিন্ন স্তরে জানিয়েও সুরাহা হয়নি। হাবরার বিধায়ক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “গাছ চোরদের অবিলম্বে ধরতে পুলিশকে বলা হয়েছে।” এ দিন মণ্ডলপাড়ায় তদন্তে যান ডিআইজি (পিআর) অনিলকুমার।
পুলিশ জানিয়েছে, গাছ কাটা বা কাঠ চুরির অভিযোগ পেলে তদন্ত হয়। রবিবারের ঘটনায় এমনই এক কাঠচোরকে পুলিশের হাতে দিয়েছিল জনতা। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে গাছ কাটা বা কাঠচুরির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে ক’জন? মনে করতে পারছেন না জেলার পুলিশ কর্তারাও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.