|
|
|
|
এস্পার-ওস্পার যুদ্ধে আজ দুই বন্ধুর ‘ডুয়েল’ |
সব্যসাচী সরকার • পুণে |
এক সঙ্গে শুরু, হয়তো এক সঙ্গে শেষও!
পরের বারের আইপিএল সিক্স-এ রাহুল দ্রাবিড়কে ব্যাট হাতে দেখতে পাওয়া আর কলকাতায় বিলুপ্ত লাল রঙের দোতলা বাস ফিরে আসার মধ্যে বিশেষ তফাত নেই। সৌরভেরটাও তাই। মেন্টর বা কোচ হিসেবে দু’জনেই আগামী বছর আবির্ভূত হতে পারেন। কিন্তু কন্নড় কিংবদন্তির ব্যাট থেকে মন ভাল করে দেওয়া স্কোয়ার কাট বা বঙ্গজ আইকনের ব্যাট থেকে গ্যালারির ঠিকানা লেখা ছক্কা স্রেফ স্মৃতির সরণিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা। এটুকু মনে রাখলে কাল সুব্রত রায় স্টেডিয়ামে আইপিএলের সৌজন্যে এক অনন্য দ্বৈরথ। রাহুল বনাম সৌরভ। এক সঙ্গে বেড়ে ওঠা, একে অপরের অধিনায়কত্বে খেলা। উপযুক্ত শ্রদ্ধা, সম্ভ্রম এবং সহজাত বৈপরীত্যকে সঙ্গী করেই।
ষোল বছর আগে লর্ডসে জুনের এক সকালে যে দুই তরুণের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হাতেখড়ি হয়েছিল, নানা উত্থান-পতন, চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দু’জনেই এখন বিশ্ব ক্রিকেটে সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব, কিন্তু দিনের শেষে অবসরপ্রাপ্ত। আইসিসি বা ভারতীয় বোর্ডের খাতায় পেনশনভোগী সিনিয়র সিটিজেন। বিনোদনের রকমারি সাজিয়ে বসা ‘তেড়ে মেরে ডান্ডা, করে দিই ঠান্ডা’ মার্কা আইপিএল বা টি-টোয়েন্টি তো আর যা-ই হোক, একশোর উপর টেস্ট খেলা দুই কিংবদন্তির ক্রিকেটীয় শ্রেষ্ঠত্বের বিচারের মাপকাঠি হতে পারে না। তবু পেশাদারের কাছে প্রতিযোগিতামূলক মানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, এত বছর ধরে অর্জিত সুনাম রক্ষার যুদ্ধ। সে জন্যই দুপুরের চড়া রোদে তরুণতম স্টিভ স্মিথের সঙ্গে সমানতালে ফুটবল খেলতে পারেন সৌরভ। সঙ্গী ওপেনার অজিঙ্ক রাহানের সঙ্গে টানা নেটে পড়ে থাকেন রাজস্থান রয়্যালস অধিনায়ক রাহুল। যা নিয়ে গাওস্কর বলে ফেলেছেন, “এই আইপিএলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ওপেনিং জুটি। যারা বারবার দেখাচ্ছে, টি-টোয়েন্টি মানে অক্রিকেটীয় শট নয়। টি-টোয়েন্টি মানেও ব্যাকরণ।” |
|
ইতিমধ্যেই রয়্যালস শিবিরে ওপেনিং জুটির আদরের নামকরণ ‘আর স্কোয়ার’। আর স্কোয়ার ক্লিক করা মানে টিমের দাঁড়িয়ে যাওয়া। ১১ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট পেয়ে টিম ছয় নম্বরে, কিন্তু আগের ম্যাচে কিংস ইলেভেনকে হারিয়ে পুণেতে পা রাখা রাহুলের টিমের। সৌরভের ডেরা থেকে দু’পয়েন্ট মানে শেষ চারের দরজা ‘চিচিং ফাঁক’ না হলেও আশার হ্যালোজেন ফের জ্বলজ্বল করবে। পাশাপাশি সৌরভের পুণে আট নম্বরে। কালকের ম্যাচ অবশ্যই এসপার-ওসপার ম্যাচ। এখনও বাকি চারটে ম্যাচ জিততে পারলে ক্ষীণ একটা আলোর রেখা তো থেকেই যাবে।
ঘরের মাঠে পুণে সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটাতে হলেও সৌরভের আসল প্রতিপক্ষ নেই ‘আর স্কোয়ার’। শুরুতে রাহুল-রাহানে জুটি ভাঙা না ভাঙার মধ্যেই কিন্তু লুকিয়ে থাকবে ওয়ারিয়র্সের ম্যাচ জেতার চাবিকাঠি। কেকেআর ম্যাচের পরে চরম বিরক্ত ও অভিমান গ্রাস করেছিল সৌরভকে। টিমের কিছু জুনিয়রদের মনোভাব ও দায়বদ্ধতা নিয়ে একেবারেই খুশি হতে পারছিলেন না তিনি। তাঁর লড়াকু ক্রিকেটবোধের সঙ্গে একেবারেই মিলছিল না কারও কারও মানসিকতা। শীর্ষকর্তা অভিজিৎ সরকারের সঙ্গে কথা হওয়ার পরে অবশ্য মান-অভিমান নিয়ে সেই সমস্যা আর নেই। মিটে গিয়েছে।
ইডেনে সাতে নামলেও কালকের ম্যাচে মাইকেল ক্লার্কের সঙ্গে ফের ওপেন করার সম্ভাবনা সৌরভের। কিংবা তিনে। সেক্ষেত্রে ক্লার্কের সঙ্গে যাবেন জেসি রাইডার। মনীশ পাণ্ডে সম্ভবত বসছেন, তাঁর জায়গায় টিমে আসতে পারেন এত দিন রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকা অনুষ্টুপ মজুমদার। মুম্বই ম্যাচে সচিন তেন্ডুলকরের উইকেট তুললেও ইডেনে ডাগআউটেই ছিলেন নেহরা। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথেউজের জায়গায় কাল তিনিও ফিরতে পারেন।
পুনে-মুম্বই এক্সপ্রেসওয়ে ধরে সুব্রত রায় স্টেডিয়াম থেকে ফেরার পথে পাহাড়ি রাস্তায় বারবার চোখে পড়ে ওয়ারিয়র্সের ছবি দেওয়া বিশাল বিশাল হোর্ডিং। কোথাও সৌরভ, কোথাও রাইডার, কোথাও দিন্দা বা নেহরা। স্লোগান, ‘জুনুন কা দুসরা নাম।’ সত্যিই তা-ই তো? তারই পরীক্ষা কাল সৌরভ ও তাঁর যোদ্ধাদের। |
|
|
|
|
|