নানা বিষয় নিয়ে টিচার-ইন-চার্জের সঙ্গে অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ‘বিবাদ’ চলছে দীর্ঘদিন। সোমবার সকালে উলুবেড়িয়ার বোয়ালিয়ার সোমরুখ হাইস্কুলের সামনেই ১৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে লোক লাগিয়ে মারধর করার অভিযোগ উঠল টিচার-ইন-চার্জ খাতিয়ার রহমান মোল্লার বিরুদ্ধে। রাতে প্রহৃত শিক্ষক-শিক্ষিকারা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। মৌখিক ভাবে বিষয়টি শিক্ষা দফতরের স্থানীয় কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে বলে তাঁদের দাবি। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে ওই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে থানায় মারধরের পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছেন খাতিয়ার রহমান মোল্লা। ‘প্রহৃত’ ৬ শিক্ষককে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। |
জেলা পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, “তদন্ত শুরু হয়েছে। হামলাকারীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।” অতিরিক্ত জেলা স্কুল পরিদর্শক তন্দ্রা সরকার বলেন, “এ বিষয়ে মন্তব্য করব না।” পুলিশ সূত্রের খবর, বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ শিক্ষক-শিক্ষিকারা অনেকেই অটোরিকশায় স্কুলে যাচ্ছিলেন। কেউ আসছিলেন হেঁটে। এক দল যুবক অটো থামিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মারধর শুরু করে। প্রাণ বাঁচাতে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখান থেকেও তাঁদের বার করে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ৪ শিক্ষিকাকেও ‘রেয়াত’ করেনি হামলাকারীরা। তাদের হাতে রড, চেলাকাঠ ও ইট ছিল বলে প্রহৃতেরা জানিয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই হামলাকারীরা পালায়। গোলমালের জেরে স্কুল বন্ধ ছিল। খাতিয়ার রহমান স্কুলে আসেননি। এ দিনের হামলায় জখম স্কুলের আরবি ভাষার শিক্ষক সামসুল আলম খানের দাবি, “খাতিয়ার রহমান দিনের পর দিন স্কুলে আসেন না। আমরা ঠিকমতো বেতন পাই না। স্কুলে পরিচালন সমিতি নেই। এ সব নিয়ে প্রতিবাদ করায় উনি আমাদের উপরে ক্ষিপ্ত। একটি দলের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় উনি ধরাকে সরা জ্ঞান করেন।”
চিকিৎসাধীন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক সুষেনকৃষ্ণ হাওলাদারের প্রায় সারা গায়েই চোট লেগেছে। তাঁর দাবি, “শনিবার একটা ক্লাস করে খাতিয়ার রহমান স্কুলের বাইরে কয়েকজনের সঙ্গে গল্প করছিলেন। কেন ক্লাস নিচ্ছেন না ওঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম। তার পরেই উনি লোকজন নিয়ে স্টাফরুমে এসে মারধরের হুমকি দেন। থানায় অভিযোগ জানাই। তাই এ ভাবে হামলা চালানো হল টিচার-ইন-চার্জের মদতে।” খাতিয়ার রহমান ওই স্কুলে ইংরেজি পড়ান। তিনি বলেন, “স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই। পরিচালন সমিতি নেই। প্রশাসনিক কাজ আমাকে সামলাতে হয়। তাই আমি রোজ স্কুলে আসতে পারি না।” তাঁর অভিযোগ, “প্রশাসনিক কাজে অন্য শিক্ষকদের সহযোগিতা পাই না।” ঘটনার সময়ে জেলার অতিরিক্ত স্কুল পরিদর্শকের অফিসে ছিলেন জানিয়ে খাতিয়ার দাবি করেন, “কারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপর হামলা চালাল, তা জানি না। আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা অনিয়মিত বেতন পান বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়।” |