‘অভিযুক্তের’ সঙ্গে হাত মিলিয়ে ‘অভিযোগকারী’কেই হেনস্থা করেছে পুলিশ, এই অভিযোগ তুললেন শহরের এক ব্যবসায়ী। অরিজিৎ বসু নামে ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগ, তিনি সত্যরঞ্জন মোহান্তি নামে ভুবনেশ্বরের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা পেতেন। পাওনা টাকা নিয়ে কথা বলার জন্য সত্যরঞ্জনকে গত শনিবার নিজের বাড়িতে নিয়ে যান তিনি। কিন্তু অভিযোগ, পুলিশ অরিজিতের বিরুদ্ধেই ওড়িশার ব্যবসায়ীকে অপহরণ ও মারধরের অভিযোগ ‘সাজায়’। গ্রেফতারও করা হয় তাঁকে। রবিবার তিনি আলিপুর আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। পুলিশ যদিও অরিজিতের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অন্য দিকে, সত্যরঞ্জনের অভিযোগ, অরিজিৎরা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তাঁকে মারধর করেছেন।
অরিজিৎবাবু জানান, তাঁদের সাউন্ড বক্স-সহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশের ব্যবসা রয়েছে। তাঁর দাবি, ২০১১-র নভেম্বরে সত্যরঞ্জনকে তাঁরা প্রায় ১ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকার মালপত্র সরবরাহ করেছিলেন। তাঁর বিনিময়ে সত্যরঞ্জন তাঁদের দু’টি চেক দেন। কিন্তু সত্যরঞ্জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা কম থাকায় সেই চেক ভাঙানো যায়নি। অরিজিতের স্ত্রী মীরা বসু বলেন, “ব্যাঙ্ক আমাদের জানায়, সত্যরঞ্জনের অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা নেই। সেই কারণেই আমরা চেক জমা দিইনি।” |
মীরা বসু ও অরিজিৎ বসু। —নিজস্ব চিত্র |
অরিজিৎবাবু জানান, শনিবার রাতে পার্ক স্ট্রিটের একটি নাইটক্লাবে তিনি সত্যরঞ্জনকে দেখতে পেয়ে তাঁর শরৎ বসু রোডের বাড়িতে নিয়ে যান। অরিজিতের সঙ্গে তাঁর অফিসের কয়েক জন কর্মীও ছিলেন। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে টাকা দেওয়ার ব্যাপারে অরিজিৎ জোরাজুরি করতে থাকেন। তাঁর স্ত্রী মীরাদেবী জানিয়েছেন, এর পরে পাড়ার লোকজন মারফত তাঁরা থানায় খবর দিলে এক জন সাব-ইনস্পেক্টর ঘটনাস্থলে গিয়ে দু’পক্ষকে থানায় যেতে বলেন। মীরাদেবীর অভিযোগ, দু’পক্ষের কথা শোনার পরে টালিগঞ্জ থানার অফিসারেরা ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে’ সত্যরঞ্জনকে দিয়ে অরিজিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করান। তার পরিপ্রেক্ষিতে অরিজিৎকে গ্রেফতারও করা হয়।
অবশ্য পুলিশের দাবি, শনিবার রাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে গোলমালের খবর পেয়ে এক জন অফিসার শরৎ বসু রোডে গিয়েছিলেন। সমস্ত ঘটনা জানার পরে তিনিই দু’পক্ষকে থানায় নিয়ে আসেন। পুলিশ সূত্রে খবর, সত্যরঞ্জন তাঁর অভিযোগে জানিয়েছেন, তিনি আপাতত রিজেন্ট পার্কে রয়েছেন। শনিবার রাতে স্ত্রীকে নিয়ে তিনি ওই নাইটক্লাবে যান। সেখান থেকে অরিজিৎরা তাঁকে জোর করে তুলে নিয়ে যান এবং তাঁর মৃগীরোগ আছে জেনেও তাঁকে মারধর করেন। এক পুলিশকর্তা বলেন, “অভিযোগের গুরুত্ব বুঝে এম আর বাঙুরে সত্যরঞ্জনবাবুর ডাক্তারি পরীক্ষা হয়। তাতে তাঁর গায়ে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে।”
সত্যরঞ্জনবাবুর স্ত্রী স্নেহা ভট্টাচার্যও থানায় লিখিত অভিযোগে একই কথা জানিয়ে বলেছেন, শনিবার রাতে তিনি একাই ট্যাক্সি ধরে বাড়ি ফেরেন। তাঁর স্বামীর ফোনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে রবিবার ভোর পাঁচটা নাগাদ পুলিশ তাঁর স্বামীকে বাড়ি পৌঁছে দিলে তিনি পুরো ঘটনা জানতে পারেন। লালবাজারের এক অফিসার বলেন, “সত্যরঞ্জনবাবুর গায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তাই আইন অনুযায়ী অভিযোগ দায়ের করতেই হত।”
আবার পুলিশের বক্তব্য, টাকা নিয়ে গণ্ডগোল থাকলে অরিজিৎবাবু ‘অভিযুক্তকে’ থানায় না এনে বাড়িতে নিয়ে গেলেন কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। পাশাপাশি, টাকা না পেয়েও ওই দম্পতি কেন পুলিশে অভিযোগ জানালেন না, তারও সদুত্তর মেলেনি। এ দিকে সত্যরঞ্জনবাবুর অভিযোগ, তিনি সব মালপত্র ঠিকমতো পাননি। তাঁকে বিলও দেওয়া হয়নি।
যদিও মীরাদেবীর দাবি, থানার অফিসারদের সঙ্গে ‘যোগসাজসের’ ফলেই তাঁদের হেনস্থা করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের কাছেও যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। |